উদ্যোগ: আমডাঙায় চলছে মহড়া। ছবি: মাসুম আখতার।
শুরু হয়ে গেল কোভিডের প্রতিষেধক দেওয়ার তোড়জোড়। শনিবার দেশের ৫১৭টি কেন্দ্রে একযোগে যে টিকাকরণের মহড়া চলল, সেই তালিকায় নাম রয়েছে মধ্যমগ্রাম আরবান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সল্টলেকের দত্তাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আমডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের। তিন জায়গাতেই ২৫ জন করে স্বাস্থ্যকর্মী ওই মহড়ায় যোগ দেন। টিকাকরণের জন্য তিনটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। মহড়া-পর্ব নির্বিঘ্নেই শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরাঞ্চল, মফস্সল এবং গ্রামীণ এলাকায় টিকাকরণ কেমন হতে পারে, তা খতিয়ে দেখতে তিনটি পৃথক এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে মহড়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর পাশাপাশি প্রচুর জায়গাও রয়েছে।
কী করা হল মহড়ায়?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ দিন কারও দেহে সূচ ফোটানো হয়নি। প্রকৃত টিকাকরণ যখন শুরু হবে, তখন কী ভাবে গোটা প্রক্রিয়া এগোবে, তা এ দিন হাতেকলমে করে দেখেছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকেরা।
টিকাকরণের জন্য উপভোক্তাদের মোবাইলে তিন দিন আগেই মেসেজ পাঠিয়ে জায়গা এবং সময় জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনটি কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীদের মোবাইলে পাঠানো সেই মেসেজে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে হাজির হতে বলা হয়েছিল। দূরত্ব-বিধি মেনে ছিল বসার ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, টিকাকরণের ব্যবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অবস্থায় উপভোক্তাকে ওয়েটিং রুমে এনে বসানো হচ্ছে। সেখানে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে। তাঁর কোনও কো-মর্বিডিটি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টিকার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কো-মর্বিডিটি এবং শারীরিক গঠন অনুযায়ী তা এক-এক জনের ক্ষেত্রে এক-এক রকম। এ ক্ষেত্রে টিকা গ্রহীতাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করার দায়িত্বও থাকছে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে। তাঁরাই সেই ব্যক্তিকে বোঝাবেন, যাতে টিকা নেওয়ার পরে তিনি মানসিক ভাবে চাঙ্গা থাকেন। কোনও উপসর্গ দেখা দিলেও যেন আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে পড়েন। যাঁরা টিকা নিতে এসেছিলেন, তাঁদের এ দিনও এই পর্ব পেরোতে হয়েছে।
দ্বিতীয় স্তরে থাকছে টিকাকরণ। সে জন্য পৃথক ঘরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাধারণ সিরিঞ্জেই টিকা দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন। হাসপাতালে যে সব কর্মী শিশুদের টিকা দেন, কোভিড টিকার জন্য তাঁদের ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ টিকাকরণ শুরু হলে তাঁরাই টিকা দেবেন। এ দিন দেখা গেল, এক-এক জনকে টিকা দিতে গড়ে দু’মিনিট সময় লাগছে। টিকা নেওয়ার পরে উপভোক্তাকে পাঠানো হচ্ছে অবজ়ারভেশন রুমে। সেখানে আধ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে তাঁদের। চেয়ারের পাশাপাশি সেখানে শয্যার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
মধ্যমগ্রাম আরবান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার প্রণবেশ ঘোষ বলেন, “টিকা নেওয়ার পরে কেউ অসুস্থ বোধ করলে উপসর্গ অনুযায়ী তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। সে জন্য অক্সিজেন-সহ অতি প্রয়োজনীয় কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম হাসপাতালে আনা হয়েছে। প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুল্যান্সও রাখা হচ্ছে।”
ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ দিন গোটা ব্যবস্থার তদারকি করতে দেখা যায় পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক রথীন ঘোষ এবং বিদায়ী কাউন্সিলর নিমাই ঘোষকে। পুরো প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখেন রাজ্য জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা সৌমিত্র মোহন, বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালের সুপার পার্থপ্রতিম গুহ, বিধাননগর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রাজেশ চিরিমার। বিধাননগরে টিকাকরণের মহড়ায় যোগ দেন স্বাস্থ্যকর্মী হাসি সরকার, কবিতা মণ্ডল, মিতা সাহা, মমতা মণ্ডলেরা। তাঁরা জানান, অতিমারি শুরুর সময় থেকেই তাঁরা সামনের সারিতে থেকে ওই রোগের মোকাবিলা করছেন। টিকাকরণের মহড়ায় শামিল হতে পেরে তাঁরা খুশি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ দিনের টিকাকরণের মহড়ায় কোনও ফাঁক বা খামতি মেলেনি। এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘মহড়া ভাল ভাবেই উতরে গিয়েছে। আমরা টিকাকরণের জন্য প্রস্তুত।’’ যে সমস্ত চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার করেন, টিকাকরণের জন্য কলকাতা পুরসভা এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের মাধ্যমে তাঁদের নাম নথিভুক্তিতে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy