Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Death by Drowning

ডুবে মৃত্যু রুখতে প্রশিক্ষণ বিভিন্ন পেশার মানুষকে

ত শনিবার জয়নগরের বকুলতলা থানা এলাকার শাহাজাদাপুরের মণ্ডলপাড়ায় পুকুরে স্নান করতে নেমে জলে ডুবে মৃত্যু হয় ১৩ ও ১৪ বছরের দুই নাবালিকার।

শাহাজাদাপুরে এই পুকুরে ডুবেই মৃত্যু হয় দুই নাবালিকার।

শাহাজাদাপুরে এই পুকুরে ডুবেই মৃত্যু হয় দুই নাবালিকার। —নিজস্ব চিত্র।

সমীরণ দাস 
কুলতলি শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৪
Share: Save:

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকে জলে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা গোটা পৃথিবীর নিরিখে সর্বোচ্চ। পরিসংখ্যান বলছে, এই অঞ্চলে তিন বছরে প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে প্রায় তিনশো জনের। তাই জলে ডুবে মৃত্যু রুখতে সুন্দরবন এবং সংলগ্ন এলাকার গ্রামে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শুরু করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। স্বাস্থ্যকর্মী, গ্রামীণ চিকিৎসক, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা, সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ডুবন্ত শিশু বা কিশোর-কিশোরীকে কী ভাবে জল থেকে তুলতে হবে, জল থেকে তোলার পর কী ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে, সেই সবই শেখানো হবে তাঁদের।

ওই সংস্থা সূত্রের খবর, অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক পদ্ধতিতে জল থেকে উদ্ধার না করার ফলে বা উদ্ধারের পর নিয়ম মেনে প্রাথমিক চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যু ঘটে। গ্রামে গ্রামে মানুষকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করা হলে, মৃত্যু অনেকাংশ রোখা যাবে বলেই মত সংস্থার আধিকারিকদের। নভেম্বর মাস থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি, পাথরপ্রতিমা ও কাকদ্বীপ ব্লকে এই প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। পরে অন্য ব্লকেও প্রশিক্ষণ চলবে।

এর পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে তৈরি হচ্ছে চাইল্ড কেয়ার সেন্টার। কেন্দ্রীয় সংস্থা আইসিএমআরের (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ) সহযোগিতায় কুলতলির প্রত্যন্ত মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর ও গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েত এলাকায় দু’টি চাইল্ড কেয়ার সেন্টার চালু করছে ওই সংগঠন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যেরা কাজে ব্যস্ত থাকার সময়েই মূলত শিশুরা পুকুর বা জলাশয়ের কাছাকাছি চলে যায়। সেখান থেকেই বিপদ ঘটে।

ওই সংস্থা সূত্রের খবর, বাবা-মা’র অনুপস্থিতিতে এই সব বাচ্চাদের খেয়াল রাখবে চাইল্ড কেয়ার সেন্টারগুলি। এলাকার স্বানির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই এগুলি চালাবেন। শিশুদের প্রাথমিক পড়াশোনা ও পুষ্টির দিকেও খেয়াল রাখবে সেন্টারগুলি। সুন্দরবনের অন্য ব্লকগুলিতেও এ ধরনের সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

গত শনিবার জয়নগরের বকুলতলা থানা এলাকার শাহাজাদাপুরের মণ্ডলপাড়ায় পুকুরে স্নান করতে নেমে জলে ডুবে মৃত্যু হয় ১৩ ও ১৪ বছরের দুই নাবালিকার। গত কয়েক বছরে সুন্দরবন ও সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকাগুলিতে এ ভাবেই জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বহু শিশু-কিশোরের।

জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে গ্রামীণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ইতিমধ্যেই গ্রামে গ্রামে মানুষকে সচেতন করা, বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় পুকুর ঘিরে দেওয়া, ছোট থেকে সাঁতার শেখায় উৎসাহিত করার মতো নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে।

গ্রামীণ এলাকাগুলিতে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়েই এগোতে চাইছে সংস্থা। মঙ্গলবারই গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের সঙ্গে বৈঠক করেন সংস্থার কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে পঞ্চায়েতও। পঞ্চায়েতের প্রধান জয়দেব প্রধান বলেন, “গ্রামীণ এলাকায় এটা বড় সমস্যা। সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে ওদের পাশা থাকা হবে। পাশাপাশি আমরাও পঞ্চায়েতের তরফে এলাকায় বিভিন্ন বাড়ি, স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র সংলগ্ন পুকুরগুলি ঘিরে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। মানুষকেও সচেতন করা হবে।”

সংস্থার তরফে সুজয় রায় বলেন, “পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে সচেতন করতে। গ্রামে গ্রামে মানুষকে প্রশিক্ষিত করা গেলে মৃত্যু অনেকটা আটকানো সম্ভব। সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি চাইল্ড কেয়ার সেন্টারগুলিও কাজ শুরু করছে। এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত-সহ স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি আমরা।”

অন্য বিষয়গুলি:

Training Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy