দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জুটত না ওদের। ছেঁড়া জামাকাপড়ে কাটত দিন। কালু তাদের নিয়ে আসে নিজের আখড়ায়। শুরু হয় তালিম। অর্থাৎ, চুরিবিদ্যায় হাতেখ়ড়ি!
সম্প্রতি ক্যানিঙে একটি ব্যাঙ্কে চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, আবুল কালাম ওরফে কালুই চুরি শেখার স্কুলের হোতা। ছোট ছোট ছেলেদের জুটিয়ে নিয়ে তালিম দিত সে। পরে অবশ্য ধরাও পড়েছে।
ক্যানিং থানার এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘একটু ভালমন্দ খাওয়ার জন্য এই শিশুরা নিজের অজান্তে অপরাধ জগতে চলে যাচ্ছে। কালু ভাল করেই জানত, ওই সব শিশুরা চুরি করে ধরা পড়লে মানুষ মানবিকতার কারণে ছেড়ে দেবে। সে কারণেই ওদের দিয়ে চুরি করানো হতো।’’
কী ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো ছেলেদের?
চারটি ছেলে ইতিমধ্যেই পুলিশের কব্জায় এসেছে। ওই কিশোরেরা পুলিশকে জানিয়েছে, বাবা-মা ছেড়ে চলে গিয়েছে। রাস্তায় ঘুরে দিন কাটত। কলকাতার পার্ক সার্কাসের ঝুপড়িতে কোনও রকমে মাথা গোঁজার জায়গা মিলেছিল। সেখানেই কালুর সঙ্গে পরিচয় ওদের। কাজ দেওয়ার নাম করে সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় ছেলেদের।
এরপরে শুরু হয় প্রশিক্ষণ। সিলেবাসে ছিল, তালা ভাঙার কৌশল, হালকা আওয়াজ করে ড্রিল মেশিন দিয়ে অ্যাসবেস্টস কাটা, দেওয়ালের ছোট গর্তের মধ্যে দিয়ে ভিতরে গলে যাওয়ার মতো নানা কিছু। বিনিময়ে দু’বেলা পেট ভরে খেতে দিত কালু। টুকটাক হাতখরচও মিলত। সকালে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে কাগজ কুড়নোর নাম করে সব কিছু ঘুরে দেখতে হতো। যে বাড়িতে চুরি হবে, সেই বাড়ির সম্পর্কেও খোঁজ এই ছেলেদের খোঁজ-খবর নেওয়ার কাজে লাগাত কালু।
চুরি করে কালুকে জিনিস এনে দিত ছেলেগুলি। সেগুলিকেই কালু ভাঙাচোরা জিনিস বিক্রির দোকানে বিক্রি করত। কালুর নিজেরও একটি ভাঙা জিনিস বিক্রির দোকান ছিল। তার জন্য কোনও অসুবিধায় পড়তে হয়নি কালুকে।
কালু পুলিশকে জানায়, তার চুরির টিমে ১০-১২ বছরের ছেলেদেরই নেওয়া হতো। মূলত যাদের কেউ নেই, তাদেরকেই এখানে এনে চুরি শেখানো হতো।
একটি ছেলে পুলিশকে বলেছে, ‘‘দু’বেলা খেতে পেলে আর এ কাজ কখনও করব না চুরি করতে কার আর ভাল লাগে। কিন্তু আমাদের তো খেতে দিত। এই কাজ না করলে খাব কী!’’
পুলিশ আপাতত চার কিশোরকে হোমে পাঠিয়েছে। সেখানে অন্তত দু’বেলা খাবার মিলছে চারটি ছেলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy