Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

এলাকা পরিষ্কার রাখতে পর্যটকদের সচেতন করা দরকার, মনে করেন টাকির গৃহবধূরা

ইছামতীর কোল ঘেঁষে টাকি শহর। নদীর অন্য পাড়ে বাংলাদেশের সাথক্ষিরা। টাকির পারে সারি সারি গেস্ট হাউস, লজ, পার্ক, হাট-বাজার। সুন্দরবনের আদলে কেওড়া, বাইন, সুন্দরী গাছের জঙ্গল। বহিরাগত পর্যটকদের ভিড়ে টাকি পুরসভা এলাকার উন্নয়ন চোখে পড়ে। তবুও এখনও বাড়ি বাড়ি আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল পৌঁছয়নি। নিকাশি নিয়েও ক্ষোভ আছে।

নির্মল বসু
টাকি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

ইছামতীর কোল ঘেঁষে টাকি শহর। নদীর অন্য পাড়ে বাংলাদেশের সাথক্ষিরা। টাকির পারে সারি সারি গেস্ট হাউস, লজ, পার্ক, হাট-বাজার। সুন্দরবনের আদলে কেওড়া, বাইন, সুন্দরী গাছের জঙ্গল। বহিরাগত পর্যটকদের ভিড়ে টাকি পুরসভা এলাকার উন্নয়ন চোখে পড়ে। তবুও এখনও বাড়ি বাড়ি আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল পৌঁছয়নি। নিকাশি নিয়েও ক্ষোভ আছে। পর্টকদের জন্য আরও নিরাপত্তা দরকার বলে মনে করেন অনেকেই। সেই সঙ্গে পর্যটকেরা যাতে এলাকায় পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেন, সে দিকে সচেতনতা বাড়ানোও দরকার বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মত। এলাকাবাসীর বড় অংশের বক্তব্য, পর্যটনের দিকে তাকিয়ে টাকিকে যে ভাবে সাজানো হয়েছে, তা এক কথায় অনবদ্য। কিন্তু নাগরিক পরিষেবা সেই তুলনায় পাওয়া যায় না।

টাকির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেশনপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা হল ঝুমা পালের সঙ্গে। বললেন, ‘‘টাকিতে উন্নয়ন হয়েছে অনেক। তবে এখনও বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছয়নি। অপরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থার ফলে নর্দমায় নোংরা জল জমে। মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ে। ফাটা পাইপের মধ্যে দিয়ে নোংরা জল ঢোকায় রাস্তার পাশে থাকা স্ট্যান্ড পোস্টের জল পানের অযোগ্য। ইছামতী নদী-সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের অগ্রদানী পাড়ার বাসিন্দা নিবেদিতা নাথ সকালে রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বললেন, ‘‘টাকি নদীর ধারে সুন্দর করে সাজানো হলেও চড়ুইভাতি করতে আসা বহিরাগতরা যে ভাবে নোংরা করে রেখে যায়, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পুর কর্তৃপক্ষের উচিত, ইছামতীর ধার পরিচ্ছন্ন রাখা। নালা সংস্কার, বিদ্যুৎ পরিষেবা, সাফের পাশাপাশি দুর্গাপুজোর বিজয়ার দিনে যাতে দুই বাংলার মিলন মেলা মানুষ ভাল ভাবে উপভোগ করতে পারেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।’’ নিবেদিতাদেবী জানালেন, এক সময়ে টাকি-বসিরহাটের মধ্যে বাস চলত। ইদানীং তা প্রায় বন্ধ। নাগরিক সুবিধার কথা ভেবে ফের তা চালু করতে হবে। সীমান্ত এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ায় বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তার দিকটি দেখা জরুরি।

সীমান্ত এলাকা দিয়ে গরু পাচার হয়। যা নিয়ে প্রায়ই এলাকার মানুষের সঙ্গে হয় পাচারকারী, নয় তো সীমান্ত রক্ষীদের গণ্ডগোল বাধে। টাকির বড় অংশের মানুষের দাবি, পাচার বন্ধের পাশাপাশি বাংলাদেশ গরু নিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। তেমনি ও পার থেকে অবৈধ ভাবে আসা মানুষদের আটকাতে হবে। নয় তো বড় কোনও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ দিন রাস্তার কল থেকে জল নিচ্ছিলেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের থুবা পাড়ার বাসিন্দা আলপনা বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়াতে হলে অবৈধ কারবার বন্ধ করতে হবে। আলো, রাস্তা ভাল থাকলেও পুরকর দেওয়া সত্ত্বেও এখনও জল কিনে খাওয়াটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেড়শো বছরের পুরনো একটা পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের কাছে এটা খুব গৌরবের তথ্য নয়। বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’’ আলপনা মনে করেন, বিশেষ করে শীতের দিনগুলিতে চড়ুইভাতি করতে আসা বহিরাগতরা যে ভাবে তারস্বরে বক্স কিম্বা মাইক বাজান, সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আনা দরকার। হাসপাতালের উন্নয়ন এবং মেয়েদের স্কুলেরও চাহিদা আছে। সীমান্ত এলাকার হোটেল, লজগুলির উপর পুলিশ ও পুর প্রশাসন কড়া নজরদারি চালাক, এমনটাও চান তিনি।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের রোজিপুর মধ্যপাড়ার বাসিন্দা আরতি দাশ বলেন, ‘‘মহিলাদের সুরক্ষা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন সকলের আগে জরুরি। উন্নয়নের নামে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের সময়ে যে কৌশলেই হোক জয়ী হয়ে বাকি সময় যাতে কাজ বন্ধ না হয়, তা দেখতে হবে। বাড়ি বাড়ি আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের পরিষেবা দিতে হবে। ভাল রাস্তা এবং বিদ্যুৎ পরিষেবার দিকে লক্ষ রাখতে কমিটি গড়তে হবে।’’

৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ রা়ঢ়িপাড়া এলাকার বাসিন্দা বর্ণালী ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আগে দরকার পরিস্রুত পানীয় জল। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নও জরুরি। অপরিকল্পিত ভাবে নিকাশি নালা করায় ঠিক মতো জল সরে না। নোংরা জমা জলে মশা-মাছির বংশবৃদ্ধি ঘটে। এ সব বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাও দরকার।’’ তাঁর মতে, সুষ্ঠু সুন্দর নগরজীবন দড়ে তুলতে হলে অবাঞ্ছিত বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধ করতে হবে। পার্কগুলিতে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE