পাখিরালয়ে তখনও আটকে প্রচুর বোট। আন্দোলন করছেন বোট মালিকরা।
বছরের প্রথম দিন বাঘ দেখার আশায় সুন্দরবনে এসেছিলেন বহু পর্যটক। বাঘ দেখা তো দূর, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ জঙ্গল লাগোয় খাঁড়ি বা সজনেখালি, সুধন্যখালি, নেতিধোপানির মতো পরিচিত পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে যেতেই পারলেন না শতাধিক জলযানের (বোট) লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায়। অথচ, তাঁরা ‘বুক’ করেছিলেন বোটগুলি।
বেড়াতে গিয়ে এই ‘হেনস্থা’য় পযর্টকদের একাংশ ক্ষুব্ধ। বোট-মালিক বা ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে তাঁরা ঝামেলায় জড়ান। সব বোটকেই অনুমতি দেওয়ার দাবিতে পাখিরালয়ে প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান মালিকেরা। শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র সুন্দরবন এলাকার বড় নদীতে বোট চালানোর অনুমতি দেয় বন দফতর। সেই সুযোগ পেলেও সুন্দরবনের নির্ধারিত পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে আর যেত পারেননি বহু পর্যটক।
প্রশাসন সূত্রে খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের তরফ থেকে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে সুন্দরবনের বোটগুলিকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়। সেই সার্টিফিকেট বা ‘সার্ভে লাইসেন্স’ পেলে তবেই বোটগুলিকে সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে বন দফতরের আওতাধীন এলাকায় পর্যটক নিয়ে প্রবেশের অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার একশোরও বেশি বোটের ওই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর রাতেই। তাই সোমবার সকালে তাদের জঙ্গলে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি বন দফতর। তা নিয়েই বিবাদ বাধে। জেলা পরিষদের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেন বোট-মালিকেরা।
জেলা সভাধিপতি নীলিমা মিস্ত্রি বিশাল বলেন, ‘‘কিছু বোট-মালিক ঠিক সময়ে কাগজপত্রই জমা দেননি। সেই কারণেই বোটের কাগজপত্র আটকে রয়েছে। সেগুলি দেখে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।”
আন্দোলনকারীদের দাবি, শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসে সপ্তাহে মাত্র দু’দিন করে এই অনুমতিপত্র দেওয়া হয় জেলা পরিষদ থেকে। কিন্তু এ বার মাসে মাত্র তিন থেকে চারদিন এই অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। তাই অনেক বোট সেই লাইসেন্স হাতে পায়নি। সুন্দরবন ট্যুরিস্ট বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল সর্দার বলেন, “জেলা পরিষদ যদি সপ্তাহে দু’দিনের পরিবর্তে সময়টা বাড়াত তা হলে এই সমস্যা হত না। ১২ ডিসেম্বর আবেদনপত্র জমা দিয়েও অনুমতি মেলেনি। পর্যটকদের কাছে আমাদের মানসম্মান গেল। তাঁরাও বিপাকে পড়লেন।’’
সংগঠনের সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মোল্লা জানান, সুন্দরবনে সাড়ে আটশোর বেশি বোট রয়েছে। কিন্তু এ বার জেলা পরিষদের অফিস থেকে একশোর বেশি বোট সময়ে অনুমতি পায়নি। তাঁর দাবি, ‘‘বন দফতর দু-একদিনের ছাড়পত্র দিলেই সমস্যা মিটে যেত।”
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, “জেলা পরিষদ ফিট সার্টিফিকেট না দিলে আমরা সেই বোটকে কিছুতেই জঙ্গলে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারি না। কারণ, জঙ্গলে ওই বোট কোনও ভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে বা পর্যটকদের ক্ষতি হলে দায় কে নেবে?’’
এ দিন ভোগান্তির শিকার হওয়া পর্যটকদের মধ্যে নদিয়ার অমল ভট্টাচার্য বলেন, “অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম বছরের প্রথম দিনে। কিন্তু সকাল থেকে সমস্ত বোট বন্ধ করে এই আন্দোলনের কোনও মানে নেই। বিষয়টা প্রশাসনের দেখা উচিত।’’ কলকাতা থেকে আসাসপ্তপর্ণী সরকার বলেন, “চার ঘণ্টা পর বোট ছাড়লেও জঙ্গলে ঢুকতে পারিনি।”
ট্যুর অপারেটর মিলন দাস বলেন, “যখন এই পর্যটনের উপর গোটা সুন্দরবনের অর্থনীতি অনেকটা নির্ভরশীল, তখন এর ক্ষতি করা বন দফতরের বা প্রশাসনের একেবারেই উচিত নয়। বছরের বিশেষ দিনগুলিতে ছাড় দেওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy