Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জলে পড়ে তলিয়ে গেলেন পর্যটক 

রবিবার রাতে ২৩ জনের একটি দল সুন্দরবন বেড়াতে আসে। সকলেই কলকাতার কৈখালিতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত।

তল্লাশি: সৈকতকে (ইনসেটে) খুঁজতে নদীতে পুলিশ। ছবি: সুমন সাহা

তল্লাশি: সৈকতকে (ইনসেটে) খুঁজতে নদীতে পুলিশ। ছবি: সুমন সাহা

নিজস্ব প্রতিবেদন
জয়নগর ও চাকদহ শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২২
Share: Save:

নদীতে পড়ে তলিয়ে গেলেন এক পর্যটক। সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন কোস্টাল থানার সাতজেলিয়ার কাছে, ঝিলা নদীর কাছে। পুলিশ জানায়, নিখোঁজ সৈকত রায়ের বাড়ি নদিয়ার চাকদহের পালপাড়ায়।

রবিবার রাতে ২৩ জনের একটি দল সুন্দরবন বেড়াতে আসে। সকলেই কলকাতার কৈখালিতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ট্রেনে জয়নগর নেমে ট্রেকারে করে কুলতলির কৈখালি পৌঁছন তাঁরা। বোটে রাত কাটিয়ে সকালে বেরিয়ে পড়েন সুন্দরবনের কোর এলাকার দিকে। মাঝি, রাঁধুনি মিলিয়ে আরও চার জন ছিলেন বোটে।

দলের কয়েক জন সদস্য জানালেন, বাকনার জঙ্গলে গিয়ে রাতে থাকার পরিকল্পনা ছিল। সেখান থেকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে বুড়িরদাবড়ি যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। বাকনা পৌঁছনোর ঘণ্টা দেড়েক আগে বেলা ৩টে নাগাদ সাতজেলিয়ার কাছে হঠাৎই বোট থেকে পড়ে যান সৈকত। তাঁর সঙ্গীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, বোটের সামনের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৈকত। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়ে নিমেষে তলিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতিতে থাকায় বোট বেশ কিছুটা এগিয়ে যায়। সকলে হইহই করে ওঠার পরে বোটের মুখ ঘুরিয়ে ফিরে আসেন ঘটনাস্থলে। কিন্তু ততক্ষণে সৈকতের কোনও চিহ্ন নেই। নিজেরা বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে রাতে ফিরে আসেন কুলতলির কৈখালিতে। সেখান থেকে কুলতলি থানায় খবর দেন। কুলতলি থানার তরফে বিষয়টি জানানো হয় সুন্দরবন কোস্টাল থানাকে। এরপর খোঁজ শুরু করে কোস্টাল থানার দল।

মাঝি, পর্যটক দলের অন্য সদস্য এবং সৈকতের পরিবারের লোকজন মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে যায়। যে জায়গায় সৈকত জলে পড়েছেন, সেখানে নদীতে যথেষ্ট স্রোত। সেই টানে বহু দূর চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তা ছাড়া, ওই এলাকায় নদীতে প্রচুর কুমির আছে বলেও জানাচ্ছেন মাঝিমাল্লারা। কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?

বোটের মাঝি লুৎফর শেখ বলেন, ‘‘বারবার বারণ করা সত্ত্বেও উনি নৌকোর ধারে গিয়ে দাঁড়ান। হঠাৎই টাল সামলাতে না পেরে জলে পড়ে যান।’’

দুর্ঘটনার পিছনে পর্যটকদের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন স্থানীয় মানুষজন। দীর্ঘ দিন ধরে সুন্দরবনে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত নরেন হালদার। তিনি বলেন, ‘‘কিছু পর্যটক কিছুতেই কথা শোনেন না। বারণ করা সত্ত্বেও মদ্যপ অবস্থায় বোটের ধারে ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়ান। ফলে দুর্ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়। পর্যটকরা সচেতন না হলে এ ব্যাপারে কিছুই করা যাবে না।’’

কিন্তু সুন্দরবন ভ্রমণে এখন গাইড নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক। সেখানে এই দলটি গোটা একটা দিন গাইড ছাড়া কী ভাবে নদীতে ঘুরল, সেই প্রশ্ন উঠছে। পর্যটক দলের সদস্য রাজেশ আচার্য বলেন, ‘‘বাকনা থেকে পাস করিয়ে গাইড নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। গতবারও এ ভাবেই ঘুরেছিলাম। ভেবেছিলাম সমস্যা হবে না।’’

বোটের মাঝি লুৎফর ঘটনার পরে কাছের সুন্দরবন কোস্টাল থানায় না গিয়ে কুলতলিতে আসায় অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। লুৎফর বলেন, ‘‘কী করণীয়, সে সময়ে ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। বোট মালিক কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওঁরা থানায় যেতে বলেন। আমি কুলতলিতে চলে আসি।’’ পর্যটক দলের সদস্য দীপঙ্কর শীল বলেন, ‘‘আমরা তো এলাকার কিছুই চিনি না। মাঝির উপরেই ভরসা করেছিলাম। ওই মুহূর্তে কাছের থানায় গেলে হয় তো আরও আগে খোঁজ শুরু করা যেত।’’

সৈকতের ভাই সব্যসাচী-সহ কয়েক জন মঙ্গলবার কুলতলিতে এসেছিলেন। সব্যসাচী জানান, শনিবার বাড়ি থেকে বেরোন সৈকত। অফিস করে সুন্দরবনে পিকনিকে যাবেন বলে এসেছিলেন। বুধবার ফেরার কথা ছিল। বছর আটত্রিশের সৈকতের মেয়ে সুস্মিতা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী রুনা বলেন, “যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে। ওরা খুব আনন্দ করছিল। আমি ওঁদের স্টোর ম্যানেজারের সঙ্গেও কথা বলি।’’ স্বামী সাঁতার জানতেন না বলেই জানিয়েছেন রুনা। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘কেউ বলছেন, পা দোলাতে গিয়ে জলে পড়ে গিয়েছেন স্বামী। কেউ বলছেন, নৌকোর একদিকে বসেছিলেন। খাবারের জন্য তাঁকে ডাকা হয়। উঠতে গিয়ে জলে পড়ে যান। সত্যিটা কী, আমি জানতে চাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans Death Tourist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy