Advertisement
E-Paper

দলের নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তৃণমূল কর্মীর

২০১৩ সালে নামখানা ব্লকের হরিপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হন বহ্নিবন্যা। ২০১৮ সালে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

নেত্রীর এই বাড়ি ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

নেত্রীর এই বাড়ি ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৬
Share
Save

তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন দলের এক কর্মী। নামখানা ব্লকের ঘটনা।

মাসখানেক আগে ‘এক ডাকে অভিষেক’-এ ফোন করে নামখানা ব্লকের জেলা পরিষদের সদস্য বহ্নিবন্যা করের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন তৃণমূল কর্মী হিল্লোল দেবতা। এ ছাড়াও, ব্লক ও জেলা নেতৃত্বকেও জানিয়েছেন। বহ্নিবন্যা অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে নামখানা ব্লক তৃণমূল সূত্রের খবর, বহ্নিবন্য ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দল বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার অভিযোগও আছে ওই নেত্রীর স্বামীর বিরুদ্ধে।

২০১৩ সালে নামখানা ব্লকের হরিপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হন বহ্নিবন্যা। ২০১৮ সালে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় নিজের বাড়ির রাস্তা ঢালাই করেছেন ওই নেত্রী। মৎস্য দফতরের দেওয়া নলকূপ নিজের বাড়িতে বসিয়েছেন। তাঁর স্বামী শতদ্রুশোভন নামখানার হেনরি আইল্যান্ডে চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষাধিক টাকা তুলেছেন।

স্থানীয় তৃণমূল কর্মী হিল্লোল বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের টাকায় বাড়ি পর্যন্ত ঢালাই রাস্তা করেছেন উনি। সরকারি নলকূপ নিজের বাড়িতে বসিয়ে তালা-চাবি লাগিয়ে রাখতেন। দরিদ্র পরিবার ছিল এক সময়ে। এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন। বিভিন্ন দফতরে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে লক্ষাধিক টাকা তুলেছেন ওঁর স্বামী।’’

হিল্লোলের দাবি, বহ্নিবন্যা ও তাঁর স্বামীর কাজকর্মের জন্য এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা না হলে জনমানসে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দলের বহু কর্মীও ওই নেত্রীর কার্যকলাপে বিরক্ত বলে দাবি হিল্লোলের।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে বহ্নিবন্যা কাগজের ঠোঙা তৈরি করতেন। স্বামী মাছের আড়তে কাজ করতেন। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য বই কিনে দিতে পারতেন না, কার্যত এমন অবস্থা ছিল পরিবারের। বিয়ের পর থেকে বহ্নিবন্যা বাবা-মায়ের ছোট ভাঙা বাড়িতে থাকতেন স্বামীর সঙ্গে। বর্তমানে তাঁদের বাড়ি-গাড়ি সবই হয়েছে। দামী গয়নাগাটি পরেও থাকতে দেখা যায় তাঁকে। স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার হাত তাঁর মাথায় আছে বলে দাবি দলের কর্মীদের একাংশের।

বহ্নিবন্যা অবশ্য বলেন, ‘‘যাঁরা এই অভিযোগ করছেন, তাঁরা হয় তো বড় কোনও কাণ্ড ঢাকার চেষ্টা করছেন বলে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘২০১৩ সালে মৎস্য দফতরের নলকূপ কোথাও বসার জায়গা না পেয়ে আমার বাবার বাড়ির সামনে বসিয়েছিল। আমার মেয়ের চাকরির টাকায় গাড়ি কেনা হয়েছে। আমরা ব্যবহার করি। মেয়ে ২০১৭ সালে সুন্দরবন দফতরে চাকরি পেয়েছে।’’

বিশাল বাড়িটি তাঁর নয় বলে দাবি করে বহ্নিবন্যা বলেন, ‘‘বাড়ি আমার বাবার।’’ কিন্তু আপনার বাবার তেমন রোজগার ছিল কি? এ নিয়ে আর উত্তর দেননি বহ্নিবন্যা। চাকরি দেওয়ার নাম করে তাঁর স্বামী টাকা তুলেছেন— এই অভিযোগ প্রসঙ্গে নেত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমি কিছু জানি না।’’

তৃণমূলের স্থানীয় হরিপুর অঞ্চল সভাপতি বুদ্ধদেব দাস বলেন, ‘‘হঠাৎ করে গত কয়েক বছরে ওই পরিবারের (বহ্নিবন্যা) আমূল পরিবর্তন হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই করেন না স্বামী-স্ত্রী। তা-ও এত টাকার সম্পত্তি! বিষয়টি দল দেখবে।’’

শতদ্রু আগে নামখানা ব্লকের তৃণমূল যুব কমিটির কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি হরিপুর অঞ্চলের প্রচার কমিটির সদস্য। শতদ্রুকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি শোনেন। পরে বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’

নামখানা ব্লক তৃণমূল সভাপতি ধীরেন দাসের মতে, দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে থাকলে দলের অধিকার আছে তদন্ত করার।

স্থানীয় বিজেপি নেতা অনুপ সামন্ত বলেন, ‘‘এটা আমাদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। যাঁদের সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি করেছেন ওঁরা, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া দরকার।’’

namkhana TMC Abhishek Banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}