রেজাউল করিমকে বেনজির ভাবে আক্রমণ আরাবুল ইসলামের। —ফাইল চিত্র।
প্রার্থিপদ নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছিল ভোটের আগেই। ভাঙড়ে এ বার তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করল। পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, প্রকাশ্যে পরাজিত রেজাউল করিমকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করে বসলেন সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। এমনিতে আরাবুলের আচরণে ক্ষুব্ধ জোড়াফুল শিবিরের একাংশ। তবে আরাবুল এবং রাজাউল দ্বন্দ্বে এ বার কার্যত দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে দল। দলীয় নেতৃত্বের একটা বড় অংশ যদিও আরাবুলকেই ভর্ৎসনা করছেন।
ঝামেলার সূত্রপাত নীলবাড়ির লড়াইয়ে ভাঙড়ের প্রার্থী নির্বাচন থেকে। ২০১৬-য় সিপিএম প্রার্থী হিসেবে ভোটে নাম লেখালেও, ২০২০-র সেপ্টেম্বরে তৃণমূলে যোগ দেন রেজাউল। আর কয়েক মাস আগে দলে আসা রেজাউলকেই ভাঙড়ের প্রার্থী ঘোষণা করে তৃণমূল। তাতে চটে যান আরাবুল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথ অবরোধ করে, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভও দেখান আরাবুল এবং তাঁর সহযোগীরা।
পরে স্থানীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সাময়িক থিতিয়ে গেলেও, ভোট মিটতেই ফের রেজাউলের বিরুদ্ধে আক্রমণে শান দিতে শুরু করেছেন আরাবুল। নীলবাড়ির লড়াইয়ে ভাঙড়ে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত ইন্ডিয়ান সেক্যুলার পার্টি (আইএসএফ)-র নওশাদ সিদ্দিকির কাছে পরাজিত হয়েছেন রেজাউল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র এই আসনেই হেরেছে তৃণমূল। তাতেই রেজাউলকে ‘হেরো’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন আরাবুল। শনিবার ব্যাওতা ২ নম্বর এলাকায় দলের প্রকাশ্য সভায় অশালীন ভাষায় রেজাউলকে আক্রমণ করেন তিনি।
কোনওরকম রাখঢাকে না গিয়ে সরাসরি রেজাউলের নাম করেই আক্রমণ শুরু করেন আরাবুল। তিনি বলেন, ‘‘অপদার্থ, নির্লজ্জ, বেহায়া একটা লোককে ভাঙড় থেকে তাড়িয়ে রাজ্য দফতরে নিয়ে যাব। ঝাঁটা মেরে বিদায় করব। ওঁকে দেখেই মানুষ আমাদের ভোট দেননি। আমি রাজ্য দফতরে গিয়ে সুব্রত বক্সিকে বলে এসেছি, ওঁকে তাড়িয়ে রাজ্য দফতরে নিয়ে যাব। হেরে যাওয়ার পর এক দিনও যোগাযোগ করেনি। অথচ বলে বেড়াচ্ছে আমি নাকি রেজাউল করিমকে ভাঙড়ে ঢুকতে দিচ্ছি না। সব মিথ্যে।’’
প্রার্থী নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই আরাবুলকে নির্বাচনে ‘সক্রিয়’ ভূমিকায় দেখা যায়নি বলে দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠদের। নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরও সে ভাবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু রেজাউলের বিরুদ্ধে স্বার্থসিদ্ধির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর যুক্তি, ‘‘একটা হেরে যাওয়া লোক কীসের আশায় ভাঙড়ে পড়ে রয়েছে? তোলাবাজির করার জন্য বসে রয়েছে। বসে রয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল তৈরি করে ব্যবসা করার জন্য।’’
ভোটে জিতে একমাস হল ফের ক্ষমতায় ফিরেছে তৃণমূল। বর্তমানে জেলায় সংগঠন ঢেলে সাজাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। এমন পরিস্থিতিতে দুই নেতার মধ্যের সঙ্ঘাত দলের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই আরাবুলের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ‘‘সব কিছুর একটা সীমা রয়েছে। আরাবুল সেটা অতিক্রম করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক করা প্রার্থীকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করছেন। এত অভিযোগ রয়েছে যে দলীয় কর্মীদের কাছেই নিজের গুরুত্ব হারিয়েছেন উনি। ওঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে একেবারেই একমত নয় দল। দলের উচ্চস্তরের নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি। আশাকরি তাঁরা শীঘ্রই ব্যবস্থা নেবেন।’’
যাঁর প্রতি আরাবুলের ক্ষোভ, সেউ রেজাউল বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে পাঁচ বছরের জন্য ভাঙড়ে পাঠিয়েছেন। তাঁর কথা মতো কাজ করছি। আরাবুল কী বললেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার কাছে ওঁর কথার কোনও গুরুত্ব নেই। তৃণমূল সুপ্রিমো যেমন নির্দেশ দেবেন, সেইমতো কাজ করব।’’ আরাবুল-রেজাউল সঙ্ঘাত নিয়ে দলের রাজ্য নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি যদিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy