—ফাইল চিত্র
জঙ্গলের মধ্যে আলো পড়ে আসছিল দ্রুত। কাঁকড়া ধরে বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছিলেন তিনজন।
এমন সময় হুঙ্কার দিয়ে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল বাঘ। ঝাঁপ দিল দলের এক মহিলার ঘাড়ে। সঙ্গী দু’জন বৈঠা-লাঠি হাতে লড়ে গিয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত। এক সময়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে ‘শিকার’ ছেড়ে গজরাতে গজরাতে জঙ্গলে ফিরে যায় দক্ষিণরায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দ্রুত হাতে দাঁড় টেনে নৌকোয় ফিরিয়ে আনার পথেই মারা যান কৌশল্যা আওয়ালিয়া (৬০)। এ নিয়ে চলতি বছরে মোট ১৯ জন মৎস্যজীবী বাঘের হামলায় প্রাণ হারালেন। রবিবার বিকেলে সুন্দরবনের পিরখালি ১ জঙ্গলের ঘটনা। বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ফকির মণ্ডল ও সূর্যকান্ত মণ্ডলের সঙ্গে রবিবার সকালে পিরখালির জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন কৌশল্যা। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে ঘাড়ে কামড় বসায় কৌশল্যার। জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
দুই সঙ্গী সাহস করে কাঁকড়া ধরার শিক, নৌকোর বৈঠা নিয়ে বাঘের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ লড়াই করে রক্তাক্ত অবস্থায় কৌশল্যাকে বাঘের মুখ থেকে ছিনিয়ে আনেন। দ্রুত নৌকো বেয়ে গ্রামে ফেরার পথেই অবশ্য মারা যান মহিলা।
ফকির বলেন, ‘‘সূর্যের আলো কমে এসেছিল। আমরা বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড হুঙ্কার দিয়ে কৌশল্যার উপরে লাফিয়ে পড়ল বিশাল বাঘটা। গর্জন শুনে আমরা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সাহস করে সূর্যকান্তকে সঙ্গে নিয়ে বাঘের সঙ্গে যুঝে যাই। ছাড়িয়েও আনলাম। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।”
গোসাবার রজতজুবিলি দত্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৌশল্যা। তাঁর মৃত্যুর খবরে গ্রামের মানুষ বিমর্ষ। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার খবর শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এঁদের কোনও বৈধ অনুমতি ছিল না। বনকর্মীদের চোখে ফাঁকি দিয়েই জঙ্গলে প্রবেশ করেছিলেন।”
বার বার সুন্দরবনের জঙ্গলে, নদী, খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হামলার মুখে পড়ছেন মৎস্যজীবীরা। জঙ্গলে বাঘ-মানুষের সঙ্ঘাত আটকাতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে বন দফতর। বাঘের উপরে নজরদারি চালানো হচ্ছে। তাদের গতিবিধি জানতে রবিবার বিকেলে একটি বাঘকে রেডিও কলার পরিয়ে বসিরহাট রেঞ্জের হরিখালির জঙ্গলে ছাড়া হয়েছে। আরও একটি বাঘকে হরিখালি থেকে ধরে তাঁকে ঝড়খালি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।
ফিল্ড ডিরেক্টর বলেন, ‘‘মানুষ নৌকোয় করে মাছ, কাঁকড়া ধরলে বিপদ কম থাকে। কিন্তু নৌকো থেকে বেআইনি ভাবে নেমে জঙ্গলের ভিতরে কাঁকড়া ধরতে ঢুকে পড়ায় বিপদ বাড়ছে। আরও সচেতন হতে হবে মৎস্যজীবীদের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy