সুখস্মৃতি: এক সঙ্গে পাঁচ বোন। চিহ্নিত তিন জন মারা গিয়েছেন
বিচ্ছেদের সুর পরিবারের পুনর্মিলন অনুষ্ঠানে।
পাঁচ বোনের ইচ্ছে ছিল, এক সঙ্গে বেড়াতে যাবেন। সম্প্রতি ওএনজিসি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন বড় বোন গীতা রায়। তিনিই বাকিদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেন, কেরল যাবেন। খরচের বেশির ভাগ দেন মুম্বইবাসী গীতাই। সকলে পৌঁছে যান কেরলে। এক বোন গিয়েছিলেন আন্দামান থেকে। সেই পাঁচ বোনের হইচই শুক্রবার সকালে হঠাৎই বদলে গেল বিলাপে। কেরলে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তিন বোন। গীতা রায়, শোভা বিশ্বাস এবং মিতা বর্মণ।
পাঁচ বোনের বাপের বাড়ি গোপালনগর থানার খাবরাপোতা এলাকায়। সেখানে থাকেন চতুর্থ বোন লক্ষ্মী। তিনি স্থানীয় একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে পড়ান। অনেক দিন ধরেই শারীরিক ভাবে অসুস্থ। কিন্তু বড়দি গীতার কথা ফেলতে পারেননি। বেড়াতে বেরিয়েছিলেন তিনিও।
বাবা-মা মারা গিয়েছেন বহু দিন আগে। বোনেরা সকলে দিদিকেই অভিভাবক বলে মানতেন। বোনেদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া-সহ নানা কাজে সাহায্য করতেন গীতা। শনিবার দুপুরে খাবরাপোতা গ্রামে গীতাদের পুরনো বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে আছেন লক্ষ্মীর স্বামী কাশীনাথ। লক্ষ্মী কেরলের হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত স্বামী। ঘনঘন পরিচিতদের কাছে ফোন করে খবরাখবর নিচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বোনেদের মধ্যে খুব মিলমিশ ছিল। গীতা আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করতে অনেক সাহায্য করেছেন। ছেলে সম্প্রতি রেলে চাকরি পেয়েছে, সেটাও ওঁর অবদান।’’ ছোট বোন কাকলি ভদ্র আন্দামানে থাকেন। তিনিও জখম অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
বনগাঁর প্রতাপগড় এলাকার যুবক প্রদীপ বাউয়ালির সম্পর্কে মাসিশাশুড়ি গীতা। প্রদীপ বলেন, ‘‘বোনেদের উনি মেয়ের মতো ভালবাসতেন। ঘোরার প্রায় সমস্ত খরচ উনিই দিয়েছিলেন। ট্রেনের টিকিটও কাটেন। সব বোনদের বলেছিলেন, অবসরের পরে পাওনা থেকে সব বোনকে এক লক্ষ করে টাকা দেবেন। আমার বিপদেও এক সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।’’
গ্রামট্যাংরা এলাকায় শোভা বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় করেছেন। ছেলে মলয় ও স্বামী নিত্যগোপাল কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। নিত্যগোপাল বলেন, ‘‘শুক্রবার সকালেও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারপরে অফিস গিয়েছিলাম। দুপুরে ছেলে ফোন করে বলল, মা আর নেই। বিশ্বাস করতে পারছি না।’’ প্রতাপগড়ের বাসিন্দা মিতা বর্মনের বাড়িতেও শোকের ছায়া। বৌমা পুজা বর্মন বলছিলেন, ‘‘বোনেদের মধ্যে খুব মিল ছিল। ভাবতেই পারছি শাশুড়ি আর নেই।’’ বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার জানান, কেরল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy