Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Panchayat Election 2018

‘আর কোনও বাবাকে যেন ছেলের কবর দিতে না হয়’

ভোটকে কেন্দ্র করে রক্তারক্তি এ বাংলায় পুরনো ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটও ব্যতিক্রম নয়। সে বার যে সব পরিবারে হানা দিয়েছিল সন্ত্রাস, এ বার ভোট নিয়ে কী বলছেন তাঁরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার

Mostafa Gayen

তৈবুরের বাবা মোস্তাফা গায়েন। ছবি: সুদীপ ঘোষ

ঋষি চক্রবর্তী
আমডাঙা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৫
Share: Save:

বোমার স্‌প্লিন্টার লেগে মারা গিয়েছিলেন সিপিএম কর্মী তৈবুর গায়েন। গত পঞ্চায়েত ভোটের দিন সন্ত্রাসের নানা ঘটনা ঘটেছিল আমডাঙার চণ্ডীগড় পঞ্চায়েতের পাঁচপোতা গ্রামে। তারই শিকার তৈবুর।

দশ ও বারো বছরের দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কার্যত অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তৈবুরের স্ত্রী নাজিমা বিবি। বৃদ্ধ বাবা মোস্তাফা গায়েন চাষের কাজ করে কোনও রকমে সংসার টানেন। নাজিমা কিছু সেলাইয়ের কাজ করেন।

সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। মোস্তাফা চান না, খুনোখুনির সে সব দিন ফিরে আসুক। বৃদ্ধের কথায়, “এ সব বন্ধ হোক এ বার। আমার মতো আর কোনও বাবাকে যেন ছেলের কবর দিতে না হয়।”

মোস্তাফা জানান, ছেলের মৃত্যুর পর বহু মানুষ এসেছিলেন। সন্তান দু’টির পড়াশোনা ও খাওয়ার খরচ যোগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। সন্তানহারা বাবার আক্ষেপ, ‘‘এখন দলেরও কেউ জানতেও আসেন না, আমরা কেমন আছি।’’

মোস্তাফা জানান, বয়সের কারণে বিশেষ খাটাখাটনি এখন পারেন না। বৌমা সেলাইয়ের কাজ করেন। সব মিলিয়ে কোনও মতে সংসার চলে। নাতি-নাতনিকে ভাল-মন্দ খাওয়াতে পারেন না বলে আক্ষেপ মোস্তাফার।

নাজিমার কথায়, “রাজনীতি ছিল আমার স্বামীর ধ্যান-জ্ঞান। পরিবারের লোকের থেকেও বেশি ভালবাসত পার্টিটাকে। আমি কখনও বাধা দিইনি। তা বলে খুন হয়ে যাবে ভাবিনি।’’

তাঁর কথায়, ‘‘দলগুলির ভাবা উচিত, এ ভাবে একেকটা পরিবার এ ভাবে শেষ হয়ে যায় হিংসার জেরে। এটা কি ঠিক?’’

গত পঞ্চায়েত ভোটে আমডাঙা ব্লকের দায়িত্বে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান। তিনি জানান, ভোটের ক’দিন আগে থেকেই খবর আসছিল, ভোটের দিন আমডাঙা ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েত দখল হবে। এলাকায় প্রচুর বোমা-বন্দুক মজুত করা হয়েছিল। ভাটপাড়া, ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূলের লোকজন পুলিশের মদতে আমডাঙায় ঢুকছিল। পাল্টা প্রতিরোধ গড়তে তৈরি হয় সিপিএম। ১৪ মে চণ্ডীগড় পঞ্চায়েতের বুথ আগলে রাখার দায়িত্ব ছিল তৈবুরের উপরে। সঙ্গে ছিলেন দলের আমডাঙা এরিয়া কমিটির সম্পাদক সাহারা মণ্ডল, সদস্য দিলীপ ঘোষ।

হঠাৎই বুথের সামনে শুরু হয় বোমাবাজি। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হন তৈবুর। কল্যাণী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। পুলিশ এখনও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি বলে ক্ষোভ জানালেন আহমেদ। তৃণমূলের করা মামলায় উল্টে তাঁদেরই দলের কয়েক জন গ্রেফতার হন বলে জানালেন।

ফের ভোট আসছে। কী হবে এ বার?

আতঙ্কের পরিবেশ ইতিমধ্যেই ঘনিয়ে এসেছে তৈবুরের গ্রামে। স্থানীয় এক পড়ুয়ার কথায়, “এখানে গোয়েন্দা পাঠিয়ে দিন। ঘরে ঘরে বোমার মশলা পাবেন। পুলিশ দিয়ে উদ্ধার করা যাবে না। পুলিশ তো ওদেরই লোক।” স্থানীয় এক গৃহবধূর কথায়, “এখানে মহিলারাও ভোটের মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতিই এখানকার মানুষের নেশা। ক্ষমতা দখলের জন্য জীবন বাজি রেখে বোমা, পিস্তল মজুত রাখে অনেকে।”

আমডাঙা ব্লক তৃণমূল সভাপতি জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, ‘‘ভোটের দিন আমরা কোথাও অশান্তি করিনি। ওদের মধ্যে গন্ডগোল ছিল। বুথ ও ভোটের দায়িত্ব সামলানো নিয়ে নিজেদের কোন্দল থেকে বোমাবাজি করে সিপিএম। ওই ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত ছিল না।’’

তৈবুরের পরিবার বিপিএল তালিকাভুক্ত হলে ৩৫ কেজি রেশনের চাল পাবে বলে জানান জ্যোতির্ময়। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সংগঠনের তরফে সাহায্য করতে পারি।’’

পুলিশের দাবি, গত পঞ্চায়েত ভোটে সেই ঘটনার পরে প্রচুর বোমা উদ্ধার হয়েছিল। নতুন করে যাতে অশান্তি না হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Election 2018 Death Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy