Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

‘ঠিক করেছি, পালিয়ে বাঁচব না’

অর্থলগ্নি সংস্থার চক্করে পড়ে বহু টাকা খুইয়েছেন অনেকে। কেউ আবার নিজেরা এজেন্ট হয়ে বাজার থেকে টাকা তুলেছেন দেদার। নিজেরাও টাকা ঢেলেছেন সংস্থায়। আরও তাড়াতাড়ি আরও বেশি মুনাফার আশায় তাঁদের সকলেরই ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন। কেউ এখনও অথৈ জলে। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।চিটফান্ডের কর্তারা জালিয়াতির দায়ে ধরা পড়েন। কমলেশের বাড়িতে শুরু হয় পাওনাদারদের আনাগোনা।

দোকান সামলাচ্ছেন কমলেশ

দোকান সামলাচ্ছেন কমলেশ

নির্মল বসু
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩১
Share: Save:

আগে ঘুরতেন গাড়ি চড়ে। অর্থলগ্নি সংস্থার চক্করে পড়ে সব হারিয়ে এখন রুটি-ঘুগনি বিক্রি করে সংসার চালান।

হিঙ্গলগঞ্জের গড়পাড়ায় থাকেন কমলেশ ঘোষ। বিএ পাস করার পরে ব্যারাকপুর একটি কোম্পানিতে এজেন্ট ম্যানেজারের কাজ করতেন। কোম্পানির গাড়িতে ঘোরাফেরা করতেন। স্বপ্ন দেখতেন, এক দিন সরকারি চাকরিও পাবেন। একের পর এক চাকরি পরীক্ষায় বসে অবশ্য লাভ হয়নি। তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ২০১১ সালে কমলেশ যোগ দেন ‘প্রয়াগ গ্রুপ’ নামে একটি চিটফান্ডে। স্ত্রী পিয়ালি এজেন্ট হিসাবে যোগ দেন ‘পৈলান’ নামক আর একটি চিটফান্ডে। দু’জনে মিলে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম ঘুরে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে চিটফান্ডে জমা করেন প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। তখন কমলেশদের ঠাটবাটই আলাদা।

কিন্তু ভাগ্যের চাকা উল্টো দিকে ঘুরতে বেশি সময় লাগেনি।

চিটফান্ডের কর্তারা জালিয়াতির দায়ে ধরা পড়েন। কমলেশের বাড়িতে শুরু হয় পাওনাদারদের আনাগোনা। জমা টাকা ফেরত না পেয়ে কমলেশদের গালিগালাজ করতে থাকেন পাওনাদারেরা। মারধরও বাদ যায়নি। দিনের স্বস্তি, রাতের ঘুম উবে যায় ঘোষ দম্পতির।

এ সবের মধ্যেই মেয়ের জন্ম হয়। কমলেশের বাবা-কাকারা মারা যান। সব মিলিয়ে তখন বিধ্বস্ত অবস্থা যুবকের।

কোম্পানি বন্ধ হওয়ার পরে যখন বাবা মারা গেলেন, কমলেশের তখন পকেটে মাত্র ৫টা টাকা সম্বল। প্রতিবেশীরা পাশে দাঁড়ান। সকলের সাহায্যে বাবার পারলৌকিক কাজ শেষ হয়। স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে টাকা জোগাড় করেও গ্রাহকদের পাওনা টাকা মেটাতে পারেননি কমলেশ। শেষে মা মিনতিকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বাজারে রুটি-ঘুগনির দোকান দেন। মেয়ের পড়াশোনা বা বিদ্যুতের বিল মেটানোর মতো টাকাও তখন হাতে নেই। ভোর ৫টায় এসে রুটি-ঘুগনি তৈরির পরে রাত পর্যন্ত ডিম-পাঁউরুটি, রুটি-তরকা বিক্রি করেন এখন। গ্রাহকদের টাকাও অনেকটা মিটিয়েছেন বলে জানালেন।

কমলেশের কথায়, ‘‘একটা সময়ে পাওনাদারের ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারতাম না। রাতের পর রাত খোলা আকাশের নীচে শুয়ে কেটেছে। ভেবেছি, এমন ভাবে বেঁচে থাকার কী মানে। নিজের জীবনটাই শেষ করে দিই। কিন্তু স্ত্রী, সন্তান, মায়ের কথা ভেবে মন শক্ত করেছি।’’ কমলেশ বলে চলেন, ‘‘শেষে ঠিক করি, পালিয়ে বাঁচব না। সকলের সামনে থেকে ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করব। গ্রাহকদের পাওনা টাকা যতটা পারি ফেরত দেব। এখন সেই লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chit Fund Prayag Pailan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy