প্রতীকী ছবি।
ভাড়ায় মেলে বাবা-মা!
বসিরহাট সীমান্তের গ্রামে এ কথা অজানা নয় মানুষের। বাংলাদেশ থেকে এ দেশে ঢুকে অনেকেই স্থানীয় ঠিকানার খোঁজে ভা়ড়ায় জোগাড় করছেন বাবা-মা। তাঁদের বৈধ কাগজপত্র কাজে লাগিয়ে ‘ছেলেমেয়ে’রা পেয়ে যাচ্ছেন ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট।
তদন্তে নেমে গত কয়েক বছরে এমন বেশ কিছু ঘটনা সামনে এসেছে বসিরহাট মহকুমার নানা প্রান্তে। বাংলাদেশে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে এ দেশের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেই সূত্রেই ফের সামনে এসেছে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত অভিযোগ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের লোকজন এ পারে এসে কী ভাবে এ দেশের পরিচয়পত্র পাচ্ছে, ভোটার তালিকায় নাম উঠছে, সে অভিযোগও নতুন করে সামনে আসছে। এ দেশে জমিবাড়ি কিনে রীতিমতো জাঁকিয়ে বসছে বাংলাদেশিরা। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কাণ্ডে বাংলাদেশে ধৃত সুকুমার মৃধাও যেমন এ দেশে দিব্যি জমিবাড়ি করে ফেলেছিল। এঁদের অনেকে আবার পাড়ায় দান-ধ্যানের মাধ্যমে স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন। তার আড়ালে অনেকেই অনৈতিক কাজকর্ম চালান বলে পুলিশ ও গোয়েন্দারা নানা সময়ে জানতে পেরেছেন। স্থানীয় মানুষ অনেকেই জানেন সে কথা। কিন্তু ভয়ে অনেকে মুখ খোলেন না।
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের হাত ধরেই সে দেশের দুষ্কতীদেরও দৌরাত্ম্য নানা সময়ে দেখা গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত-লাগোয়া এলাকাগুলিতে। বসিরহাট মহকুমায় সাম্প্রতিক অতীতে বহু বাংলাদেশি দুষ্কৃতী ধরা পড়েছে। অভিযোগ, প্রতিদিনই সীমানা পেরিয়ে অবৈধ ভাবে ওপার থেকে এপারে আসছেন প্রচুর মানুষ। এপারের কিছু অসাধু কারবারির সহযোগিতায় টাকা দিলেই মিলে যাচ্ছে নানা ধরনের পরিচয়পত্র।
সম্প্রতি এসটিএফের একটি দল বাদুড়িয়ার আটলিয়া এবং ব্রুজ গ্রাম থেকে কাজি সাহিদুর রহমান মজিদ এবং আমিদুল্লা বিশ্বাস বাচ্চু নামে দু’জন বাংলাদেশিকে ধরে। জানা যায়, তারা ১০-১২ বছর ধরে এ পারে বহাল তবিয়তে কাটাচ্ছিল। দিন কয়েক আগে বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তে বিএসএফের এক মহিলা কনস্টেবলের কাছ থেকে ইনসাস বন্দুক ও গুলি নিয়ে পালায়
দুষ্কৃতীরা। তদন্তে নেমে জওয়ানেরা কুড়িজন বাংলাদেশিকে ধরে। দেখা যায়, তারা প্রত্যেকেই এ পারে এসে সীমান্ত-লাগোয়া বাসিন্দাদের টাকার বিনিময়ে বাবা-মা সাজিয়ে নকল আধার কার্ড তৈরি করে
বসবাস করছিল।
কিন্তু বাংলাদেশ থেকে এসেই এ পারের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে কী ভাবে? স্থানীয় মানুষজন জানালেন, ভাড়ায় বাবা-মা জোগাড় করে দেওয়া এবং নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার নানা চক্র সীমান্ত এলাকায় সক্রিয়। সেখানে রোজ লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন চলছে বলে অভিযোগ। হাওয়ালার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে কোটি কোটি টাকা লেনদেন চলে বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরূপনগরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশিদের যোগাযোগ করিয়ে দেয় স্থানীয় দালালেরা। ওই পরিবারের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দেওয়া হয়। এ ভাবেই তাঁরা বাবা-মা সেজে বসেন। আর তাঁদের এ দেশের বৈধ কাগজপত্র দেখিয়ে বাংলাদেশিরা নিজেদের নামে নানা ধরনের পরিচয়পত্র বের করে নেয়। সে কাজের জন্যও নানা চক্র আছে। টাকা দিলে এখানে সব হয়।’’
সীমান্ত এলাকার এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “বিভিন্ন সময়ে মাইক প্রচারের মাধ্যমে শহর এবং গ্রামের মানুষকে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে স্থানীয় পুলিশকে জানানোর কথা বলা হয়। তবে তা অনেকেই মানেন না।” জাল নথিপত্র তৈরির চক্রের খোঁজ পেলে পুলিশ নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চালায় বলে জানাচ্ছেন ওই আধিকারিক।
এই সব চক্রের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও ওঠে নানা সময়ে। বাদুড়িয়ার বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা আব্দুর রহিম দিলু বলেন, ‘‘আমাদের দল কোনও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকে না। তবে সীমান্তের গ্রামে যে কিছু বাংলাদেশি এ দেশের পুরুষ-মহিলাদের বাবা-মা সাজিয়ে বসবাস করছে, তেমন কথা মাঝে মধ্যে শোনা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy