রাজেশ্বর মাইতি (রাজ্য-ভোলা)
এর বাড়ির দরজায় উঁকি, তার বাড়ির শৌচালয়ের ফাঁকে নজর— ‘রাজ্য-ভোলার’ এমন উৎপাতে অতিষ্ঠ ছিলেন সন্দেশখালির গ্রামের মহিলারা। উত্যক্ত করতে গিয়ে একাধিক বার গ্রামের লোকের হাতে ধরাও পড়েছে সে। চড়-থাপ্পড়-জুতোপেটা খেয়েছে বিস্তর। কিন্তু শোধরায়নি। গ্রামের বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় সেই রাজ্য-ভোলার নাম জড়ানোয় তাই বিস্মিত নন পাড়া-পড়শিরা। বছর বাহান্নর ওই ব্যক্তির কঠোর শাস্তি চাইছেন সকলে।
৪ জুলাই বছর বাষট্টির ওই বৃদ্ধার উপরে মদ্যপ অবস্থায় হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে রাজেশ্বর মাইতি ওরফে রাজ্য-ভোলার বিরুদ্ধে। বাড়ি ঢুকে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে সে বৃদ্ধাকে বাইরে ঝোপের ধারে টেনে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। যৌনাঙ্গে মদের বোতল, লোহার রড, বাবলা কাঁটা ঢুকিয়ে দেয়। সোমবার কলকাতার হাসপাতালে মারা যান ওই বৃদ্ধা। ৮ জুলাই ধরা পড়ে রাজ্য-ভোলা। ৬ দিন পুলিশি হেফাজতে কাটানোর পরে সে আপাতত জেলহাজতে।
বুধবার সন্দেশখালির গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মহিলারা রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন। অনেকেরই স্বামী কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে থাকেন। মেছোভেড়িতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা অনেকে রাতে ফেরেন না। এক তরুণী সদ্য বিয়ে হয়ে গ্রামে এসেছেন। বললেন, ‘‘প্রথমে বোন বোন করে কথা বলত ভোলা। আমিও দাদা বলে কথা বলতাম। তারপর ধীরে ধীরে নানা নোংরা কথা বলতে শুরু করল। এক দিন তো বাড়ি বয়ে এসে দরজায় উঁকি দিচ্ছিল। আমি চিৎকার করি। লোকজন এসে বেঁধে পেটায় ওকে।’’
এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও অনেকের। গাঁয়ের লোকজন জানালেন, দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে সংসার ভোলার। মেয়ের বিয়েও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারপরেও স্বভাব বদলায়নি ভোলার। এমনিতে তেমন কোনও কাজ করত না সে। নেশাভাঙ করে অশান্তি বাধাত রগচটা স্বভাবের ভোলা। গ্রামে নতুন কোনও মহিলা এসেছে খবর পেলেই তার ছোঁকছোঁকানি শুরু হত। নববধূদের দিকে নজর ছিল বেশি। ৮-১০ বার মারধরও খেয়েছে। ভোলার বাড়ি এ দিন ছিল তালাবন্ধ। অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া মেলেনি।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ভোলাকে ইতিমধ্যেই নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হয়েছে। এলাকায় নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণও করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ভোলা একাই বৃদ্ধার উপরে হামলা চালিয়েছিল। হাসপাতালে মহিলার জবানবন্দি ভিডিওগ্রাফি করেও পুলিশের তাই অনুমান।
যদিও ধর্ষণের ঘটনায় ভোলা ছাড়া আরও কেউ কেউ জড়িত ছিল বলে মহিলার প্রতিবেশী-আত্মীয়েরা দাবি করছেন। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মহিলার বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসেছে। মহিলা সন্দেশখালিতে যে হোটেলটি চালাতেন, সেটি বন্ধ।
তদন্তের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে বুধবার সকালে সন্দেশখালি থানায় আসে রাজ্য পুলিশের একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল। সেখানে ছিলেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সঞ্জয় সিংহ, ডিআইজি (পিআর) তন্ময় রায়চৌধুরী, উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সি সুধাকর। সঞ্জয়বাবু জানান, রাজ্য পুলিশ ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তারাই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দোষীদের শাস্তির দাবিতে বুধবার সকালে বসিরহাটের মহকুমাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেয় এসইউসি। বিকেলে বিজেপির জেলা সভাপতি বিকাশ সিংহের নেতৃত্বে একটি দল সন্দেশখালির ওই গ্রামে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy