(বাঁ দিকে) শেষ লোকাল ঢোকার আগেই তালাবন্ধ ক্যানিং স্টেশনে আরপিএফের আউট পোস্ট। শেষ ট্রেন ঢুকল স্টেশনে (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
শিয়ালদহ থেকে রাত ১১টা ১৯ মিনিটে ছাড়ে শেষ ডাউন ক্যানিং লোকাল। রাত প্রায় সাড়ে ১২টায় পৌঁছয় ক্যানিংয়ে। বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি করেন, এমন অনেক মহিলাকেই এই ট্রেনে বাড়ি ফিরতে হয়। অনেকে আবার অন্যান্য কাজ সেরে, বা পড়ে ফেরেন শেষ লোকালে। ট্রেন যখন অন্তিম স্টেশনে পৌঁছয়, তখন চারপাশ কার্যত শুনশান। দিন কয়েক আগে এক জন মাত্র আরপিএফ কনস্টেবলের দেখা মিলল স্টেশন চত্বরে। স্টেশনে থাকা আরপিএফের আউট পোস্টও তালা বন্ধ। টিকিট কাউন্টারের সামনে কিছু গৃহহীন মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। স্টেশন চত্বরে কার্যত গা ছমছমে পরিবেশ!
স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটু এগিয়ে গেলে দেখা গেল, হাতেগোনা দু’একটি টোটো-অটো আছে। কিন্তু সেগুলি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যায়। কাউকে যদি একটু বেশি দূরে যেতে হয়, তা হলেই সমস্যা। স্টেশনে নেই বিশ্রামকক্ষ। আশপাশেও সে রকম কোনও রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও নেই। যে ভাবেই হোক, বাড়ি ফিরতেই হয়।
শেষ লোকালে ফেরা কয়েক জন মহিলা যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ ক্ষেত্রে তাঁরা পরিচিতদের সঙ্গে দল বেঁধে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। যাঁরা নিজেদের যাত্রাপথে পরিচিত কাউকে পান না, তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে আসেন।
হেড়োভাঙার বাসিন্দা নিতু দাস বলেন, ‘‘আমি নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সে কারণে নিউটাউনে কোচিং সেন্টারে সপ্তাহে চার দিন ক্লাস করতে যাই। ক্লাস শেষ করে ফিরতে ফিরতে শেষ ট্রেনটাই কোনওমতে ধরতে পারি। ক্যানিং আসতে আসতে ট্রেন প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। স্টেশনে নেমে কাউকেই সে ভাবে পাই না। প্রায় ১২ কিমি রাস্তা পেরিয়ে বাড়ি। এতটা রাস্তা একা ফিরতে ভয় করে। কোনও দিন বাবা, কোনও দিন দাদা স্টেশনে আমার জন্য অপেক্ষা করেন।”
সোনাখালির বাসিন্দা রেশমা রায়, প্রিয়াঙ্কা দাসেরা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। বিকেলের শিফটে ডিউটি পড়ে মাঝে মধ্যেই। ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মূলত, শেষ ক্যানিং লোকালই ভরসা। যে দিন অটো মেলে না, সে দিন যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হয়। কখনও কখনও প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে মাতলা সেতু টপকে শিমূলতলায় এসে অটো ধরতে হয়। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে আসতে খুবই ভয় করে। এই এলাকায় বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু পেটের তাগিদে প্রাণের ঝুঁকি নিতেই হয়। আমাদের মনে সাহস জোগানোর কোনও ব্যবস্থা চোখে পড়ে না পুলিশ-প্রশাসনের তরফে।”
ক্যানিং থানা প্রায় ২০৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। বিশাল এলাকায় রাতে মাত্র দু’টি টহলদারি পুলিশের গাড়ি থাকে। মাঝে মধ্যে বিশেষ চেকিংয়ের দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ে। তা ছাড়া, আইসি ক্যানিংয়ের গাড়ি ও পি সি পার্টির গাড়ি প্রতি দিনই প্রায় রাত দেড়টা-দু’টো পর্যন্ত বিভিন্ন রাস্তায় টহল দেয় বলে জানা গেল। বিভিন্ন বাজার এলাকাগুলিতে নাকা চেকিং চলে বলে দাবি পুলিশের। তবে বাজার এলাকায় নাকা তল্লাশি মূলত দোকান, বাজারগুলিতে চুরি-ডাকাতি আটকাতেই, দাবি পুলিশ মহলের।
হাতেগোনা কয়েক জন পুলিশ কর্মী আর এই ক’টি গাড়ি নিয়ে কী এত বড় এলাকায় নজরদারি সম্ভব, প্রশ্ন নানা মহলের?
শেষ ক্যানিংয়ে লোকালে ফেরা সুপ্রিয়া দাস বলেন, “ পুলিশও জানে, বিপদ কিছু ঘটলে তাদের সে ভাবে কিছুই করার থাকবে না। কিছু ঘটবে না— মনে হয় পুলিশ কর্তারা নিজেরাও নিজেদের এ ভাবে প্রবোধ দেন। আর আমার মতো মহিলাদের তো এত রাতে উপরওয়ালাই ভরসা!”
বাসন্তীতে অবশ্য সারা রাত চার-পাঁচটি টহলদারি পুলিশ গাড়ি রাস্তায় থাকে বলে জানা গেল। গত ডিসেম্বরে রাতের অন্ধকারে দুই মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করে দেহ ভরতগড় ও ঝড়খালি এলাকায় ফেলে দেওয়ার ঘটনার পর থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়। বাসন্তী থানার অন্তর্গত বাসন্তী রাজ্য সড়ক এলাকায় এক দিকে যেমন পুলিশের গাড়ি থাকে, তেমনই রাস্তার মোড়ে মোড়ে রাতপাহারা দেওয়ার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy