—প্রতীকী চিত্র।
গুমা ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিজন দাসের খুনের ঘটনার পরে এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, বিজনের সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান জেসমিন সাহাজিদের বিরোধের কথা। ২০১৩ সালে বিজনের হাত ধরেই জেসমিন রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। বিজনই তাঁকে ভোটে প্রার্থী করেন। ভোটে জিতে প্রধান হয়েছিলেন জেসমিন। সে বার প্রধানের পদ মহিলা সংরক্ষিত ছিল। বিজন হয়েছিলেন উপ পুরপ্রধান। দু’জনে মিলেমিশে পঞ্চায়েতের কাজ করছিলেন।
প্রথম দিকে সব ঠিকঠাক থাকলেও, ২০১৮ সালে জেসমিন দ্বিতীয় বার পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর থেকে নানা কারণে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেসমিন ও তাঁর স্বামী সাদিকের সঙ্গে বিজনের বিরোধ বড় আকার নিয়েছিল গত বার বোর্ড গঠনের সময় থেকে। বিজন এ বার প্রধান পদের দাবিদার ছিলেন। আগেও ওই পঞ্চায়েতের দু’বারের প্রধান ছিলেন তিনি।
গুমা ১ পঞ্চায়েতে আসন ১৬টি। গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ১৫টি আসন। আইএসএফ পেয়েছিল একটি। বিজনের অনুগামীদের দাবি, পঞ্চায়েতে জয়ী বেশিরভাগ সদস্য প্রধান পদের জন্য বিজনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তারপরেও বিজন প্রধান হতে পারেননি। অভিযোগ উঠেছিল, দলেরই ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কারও কারও সমর্থনে জেসমিন প্রধান হন। তারপর থেকে দু’জনের দূরত্ব আরও বাড়ে।
তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের প্রধানের পদটি ওবিসি সংরক্ষিত ছিল। জেসমিন ওবিসি, তাই তাঁকেই প্রধান করা হয়েছিল। কিন্তু বিজনের পরিবারের দাবি, বিজনেরও ওবিসি শংসাপত্র আছে। বিজনের মেয়ে কোয়েনা বলেন, ‘‘প্রধান নির্বাচনের সময়ে বাবার ওবিসি শংসাপত্রের হার্ড কপি তাঁর কাছে ছিল না। প্রশাসনের কাছে ওবিসি শংসাপত্রের হার্ড কপির আবেদন করা হলেও কোনও অজ্ঞাত কারণে বাবাকে তখন হার্ড কপি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দলের একাংশের চাপ ছিল প্রশাসনের উপরে। প্রধান নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরপরেই অবশ্য বাবাকে ওবিসি শংসাপত্রের হার্ড কপি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’
কোয়েনার দাবি, বিজনের প্রভাবে এলাকায় পঞ্চায়েতের বেআইনি অনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গরিব মানুষের টাকা লুট করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। ফলে কারও কারও স্বার্থে ঘা লেগেছিল বলে দাবি কোয়েনার। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বিজন পরাজিত হয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল, দলেরই একাংশ তাঁকে তখন সমর্থন করেননি।
তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছে, ইদানীং কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, বিজন নাকি পঞ্চায়েতের কিছু সদস্যকে নিয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। যা নিয়েও ভিতরে ভিতরে দু’জনের মধ্যে বিরোধের মাত্রা বাড়ছিল। এলাকার অনেকে জানাচ্ছেন, বিজন খুনে মূল অভিযুক্ত গৌতম দাসের সঙ্গে প্রধান ও তাঁর স্বামীর সুসম্পর্ক ছিল। গৌতমের দৌরাত্ম্যের কারণ ছিল, তৃণমূলের একটি অংশের প্রশয়। তাকে মাঝে মধ্যে দলের মিটিং-মিছিলে দেখা যেত বলে জানাচ্ছেন অনেকে।
বিজন জমি মাফিয়াদের কাজকর্ম সহ এলাকায় বেআইনি কাজকর্মের মাঝে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও দলের একাংশ। সে কারণেও তাঁর বিরুদ্ধে আক্রোশ তৈরি হচ্ছিল। পঞ্চায়েতের কাজে প্রধানের স্বামীর নাক গলানোরও বিরোধিতা করেছিলেন বিজন।
যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধান জেসমিন সাহাজি। তাঁর কথায়, ‘‘কাজ করতে গিয়ে কারও সঙ্গে মতের অমিল হতেই পারে। কিন্তু পঞ্চায়েতের কাজের টেন্ডার ডাকা নিয়ে বা উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে বিজনদার সঙ্গে আমার কখনও কোনও ঝামেলা অশান্তি হয়নি। আমার সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক ছিল। আমি সংসার করতাম। বিজনদাই বাড়ি থেকে ডেকে এনে আমাকে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করেছিলেন।’’ গৌতমের বিষয়ে জেসমিন বলেন, ‘‘কোনও মিটিং-মিছিল, সভায় গৌতমকে ডাকিনি। প্রধান হওয়ার সূত্রে অন্য সকলের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক, গৌতমের সঙ্গেও একই সম্পর্ক।’’
এ বার পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচন নিয়ে জেসমিন বলেন, ‘‘প্রধানের পদটি ওবিসি সংরক্ষিত ছিল। আমি ওবিসি, তাই দল আমাকে প্রধান করেছিল।’’
জেসমিনের সঙ্গে বিজনের বিরোধ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের পরে প্রথম দিকে দু’জনের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। আমি নিজে দু’বার পঞ্চায়েতে বসে সকলকে নিয়ে বৈঠক করেছিলাম। এখন আর কোনও বিরোধ ছিল না। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল ছিল বলেই জানতাম।’’ বিজনকে প্রধান না করা নিয়ে নারায়ণ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের সময়ে বিজনের ওবিসি শংসাপত্র ছিল না। পরে পেয়েছিলেন কি না আমার জানা নেই।’’
বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছেও জেসমিন-বিজনের বিরোধের কথা অজানা নয়। অশোকনগরের বাসিন্দা তথা আইএসএফ-এর রাজ্য সহ সভাপতি তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বারের পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে প্রধানের সঙ্গে উপপ্রধানের বিরোধের কথা আমরা শুনেছিলাম। প্রধান নির্বাচনের দিন বিজনকে প্রধান করা না হলে তিনি ওয়াক আউট করেছিলেন। আমাদের একমাত্র জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যকে প্রধানেরা পঞ্চায়েতে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। বিজন এর প্রতিবাদ করে তাঁকে পঞ্চায়েতে ঢোকানোর ব্যবস্থা করেন।’’ তাপসের কথায়, ‘‘বিজন মানুষের জন্য কাজ করতেন। আমাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর খুন হওয়াটা তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের প্রকাশ।’’
অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী করের কথায়, ‘‘বোর্ড গঠন নিয়ে বিরোধের কথা আমরাও শুনেছিলাম। বিজন খুন হওয়ায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই সামনে এল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy