Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রেললাইনে পড়ে রক্তাক্ত তরুণী, দাঁড়িয়ে জনতা  

রবিবার রাত ৮টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার সংহতি স্টেশনের কাছে।

দুর্ঘটনার-পর: তখনও রেললাইনের ধারে পড়ে রয়েছে জয়িতার (ইনসেটে) জুতো। সোমবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

দুর্ঘটনার-পর: তখনও রেললাইনের ধারে পড়ে রয়েছে জয়িতার (ইনসেটে) জুতো। সোমবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০১:২৬
Share: Save:

রক্তাক্ত অবস্থায় রেললাইনের পাশে পড়ে যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছিলেন তরুণী। বইয়ের ব্যাগ, ওড়না, জুতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। তাঁকে ঘিরে ছোটখাট একটা ভিড়। ভেসে আসছে নানা মন্তব্য, আফসোস। কিন্তু কেউই মেয়েটিকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিলেন না কেউ।

প্রায় এক ঘণ্টা কেটে গেল এমন ভাবে। পরে রেল পুলিশ তরুণীকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন।

রবিবার রাত ৮টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার সংহতি স্টেশনের কাছে। জিআরপি জানিয়েছে, মৃতের নাম জয়িতা কর (১৮)। বাড়ি অশোকনগর থানার গুমা নিত্যানন্দপল্লি এলাকায়। স্থানীয় নজরুল বালিকা বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন তিনি।

প্রাথমিক তদন্তের পরে রেল পুলিশ জানিয়েছে, শিয়ালদহ থেকে বনগাঁগামী ট্রেনের ধাক্কায় তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। জিআরপি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জিআরপি ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ জয়িতা গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে বেরোন। রাত ১০টা নাগাদ হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তরুণীর ব্যাগ থেকে পাওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন। তরুণীর গৃহশিক্ষক ফোন ধরেন। তাঁর মাধ্যমে পরিবারের লোকজন মেয়ের খবর পান। পড়তে না গিয়ে সে কী ভাবে হাবড়ার সংহতি এলাকায় চলে এসেছিল, তা বুঝতে পারছেন না পরিবারের লোকজন।

জয়িতার মা কাকলি অসুস্থ। বাবা দেবু বলেন, ‘‘চোখের সামনে মেয়েকে মরতে দেখেও কেউ বাঁচাতে এলেন না। হয় তো দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে মেয়েটাকে বাঁচানো যেত।’’ তরুণীর প্রতিবেশীদেরও একই ক্ষোভ। সুজিত দে নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে গুমা রাজীবপুর সড়কে পথ দুর্ঘটনায় চার যুবক জখম হয়েছিলেন। আমরা তাঁদের দ্রুত বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। ওঁরা এখন ভাল আছেন। জয়িতার জন্যও যদি মানুষ এগিয়ে আসতেন, তা হলে হয় তো মেয়েটা বেঁচে যেত।’’

জিআরপি সূত্রে জানানো হয়েছে, জখম বা অসুস্থ অবস্থায় কাউকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে কেউ পুলিশি ঝামেলায় পড়েছেন, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পুরোটাই মানুষের ভ্রান্ত ধারণা। এড়িয়ে যাওয়ার উপায়ও বটে।

হাবড়ার জিরাট রোডের বাসিন্দা শান্তি সাহা। ওই মহিলার বাড়ির কাছেই রেললাইন। মাঝে মধ্যে ট্রেনের ধাক্কায় জখম হওয়ার ঘটনা ঘটে। সে কথা কানে এলেই ছুটে গিয়ে জখম মানুষকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। পুলিশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন না। জীবনে বহু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি। জয়িতার কথা বলেন, ‘‘আমি খবর পেলে নিশ্চয় যেতাম। চোখের সামনে জখম অবস্থায় কাউকে পড়ে থাকতে দেখেও উদ্ধার না করাটা অমানবিকতা। বহু জখম ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কখনও অসুবিধায় পড়িনি। রেল পুলিশ সহযোগিতাই করে।’’

জিআরপি’র এক কর্তা বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ এগিয়ে এলে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। সকলের বোঝা উচিত, কাউকে উদ্ধার করলে কোনও সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় না। বরং জীবন

বাঁচানো যায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Train Accident accident Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy