Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
School

শিক্ষাঙ্গন খুলতে হবে, পথে নামলেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-অভিভাবক-পড়ুয়ারা

সরকারি নির্দেশে অনলাইনে পঠনপাঠন চালু থাকলেও শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গাতেই প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর কারণে তা সম্ভব হয়নি।

স্কুল খোলার দাবিতে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

স্কুল খোলার দাবিতে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

অমিতা দত্ত
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:৪৯
Share: Save:

শিক্ষাঙ্গন খুলে দিতে হবে। এই দাবিতে এ বার পথে নামলেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, অভিভাবক এবং পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা এবং গোবরডাঙা এলাকার একাধিক স্কুলের শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারা সাইকেল মিছিল করলেন। ঘুরলেন প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা। সামাজিক, শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির প্রয়োজনীতার কথা মেনে নিয়ে মনোবিদেরাও বলছেন, স্বাস্থ্য বিপন্ন না করে এটা সুনিশ্চিত করার ভাবনা শুরু করা উচিত।

দীর্ঘ কয়েক মাস ধরেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। সরকারি নির্দেশে অনলাইনে পঠনপাঠন চালু থাকলেও শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গাতেই প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে পড়াশোনার প্রক্রিয়া। বৃহস্পতিবারের মিছিল থেকে দাবি ওঠে— যেখানে শপিং মল খোলা, রাজনৈতিক মিছিল হচ্ছে, ভিন্‌রাজ্যে ভোট হয়েছে, কলকারখানা খোলা, ট্রেন চলছে, পরিবহণ ব্যবস্থা চালু, সেখানে বন্ধ শুধু শিক্ষাঙ্গন। করোনা বিধি মেনে অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গন খুলে দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার সকালে গোবরডাঙ্গা ইছাপুর হাইস্কুলের মাঠ থেকে শুরু হয় সাইকেল মিছিল। মিছিলে অংশ নেন শতাধিক স্কুল পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, অভিভাবক। গাইঘাটা-সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ওই স্কুল মাঠেই এসে শেষ হয় মিছিল। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক পাল এ দিনের মিছিলে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ এক বছর হতে চলল স্কুল বন্ধ রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা, বিশেষ করে প্রান্তিক জায়গায় থাকা পড়ুয়ারা খুব সমস্যায় পড়েছে। বিষয়টি এ বার বিবেচনা করা উচিত।’’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে খোলার আবেদন জানান শিক্ষক সুকান্ত পালও। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে রাজনৈতিক সমাবেশ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান-সহ সমস্ত ধরনের কাজকর্ম চলছে, শপিং মল, সিনেমা হল, এমনকি বিনোদন পার্কও খোলা রয়েছে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ থাকবে? করোনা বিধি মেনেই তো স্কুল খোলা যায়।’’

এ ভাবে স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে চলছে বলে মনে করেন স্থানীয় স্কুল শিক্ষক শ্যামল গুহ। তিনি বলেন, ‘‘দিনের পর দিন স্কুল বন্ধ। ছাত্রছাত্রীরা কার্যত ঘরবন্দি। এতে তো পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে চলে যাচ্ছে।’’

অভিভাবকদেরও একই মত। প্রবীর চক্রবর্তী নামে এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘দ্রুত স্কুল না খুলে যদি পঠনপাঠন শুরু হয় তা হলে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ওদের বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’’ প্রদীপের মেয়ে রিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। করোনা বিধি মেনেই ছাত্রছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দাবিতে স্কুল খোলার দাবি জানান তিনি।

পড়ুয়ারা কী বলছে? স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া নবনীতা মণ্ডলের কথায়, ‘‘বাড়িতে থেকে থেকে পড়াশোনার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে। স্কুল খোলা থাকলে পড়ার একটা আলাদা আগ্রহ তৈরি হয় দেখেছি। গত কয়েক মাস ধরে সেটাই চলে গিয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গেও অনেক দিন দেখা হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গেও নয়। তাড়াতাড়ি খুললে ভাল হয়।’’

এ ব্যাপারে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত, ‘‘স্কুল-কলেজের মতো জায়গায় সুরক্ষাবিধি কতটা মেনে চলা সম্ভব, তা নিয়ে একটা উদ্বেগ আছেই। করোনা আতঙ্কটা তো আমাদের এখনও ছেড়ে যায়নি। শিক্ষাঙ্গনগুলিতে সেই অর্থে শারীরিক দূরত্ব এবং পরিচ্ছন্নতা কতটা বজায় রাখা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সুস্থতা বিপন্ন করে তো এগনো ঠিক নয়।’’

তবে শিক্ষা ভার্চুয়াল ভাবে সর্ব স্তরে পৌঁছনো সম্ভব নয় বলেও মনে করেন অনুত্তমা। তাঁর কথায়, ‘‘তেমন পরিকাঠামোই তো নেই। এ রকম চলতে থাকলে শিক্ষা প্রায় স্থগিতের পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে।’’ বিষয়টি নিয়ে এ বার ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। অনুত্তমা বলেন, ‘‘সামাজিক, শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি প্রয়োজনীয়। কী ভাবে স্বাস্থ্য বিপন্ন না করে তা সুনিশ্চিত করা যায়, আশা করি ২০২১-এ সেই উত্তর মিলবে।’’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিদর্শক সুজিত মাইতির সঙ্গে। তিনি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্য বিষয়গুলি:

School Education Teachers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy