বনগাঁর নরহরিপুরের এই মডেলেই তৈরি করা যেতে পারে রাস্তা বলে মনে করেন পরিবেশ কর্মীরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
যশোর রোডের প্রাচীন গাছগুলিকে বাঁচিয়ে কী ভাবে রাস্তা সম্প্রসারণ ও পাঁচটি উড়ালপুল করা যায়, সে বিষয়ে বিকল্প পথ খুঁজতে সুপ্রিম কোর্ট পরিবেশবিদদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছে।
গাছগুলি এতদিন ধরে যে পরিমাণ অক্সিজেন দিয়েছে, তার মূল্য কত হবে—গাছ কাটার সময় এমনটাই ভাবা হবে বলে বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপে খুশি বৃক্ষপ্রেমীরা। তাঁরা জানান, এতদিন ধরে তাঁরা এই দবিই করে আসছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের সেই দাবিকেই মান্যতা দিলেন। তাঁরা কেউ সড়ক সম্পসারণ বা রেলসেতুর বিরুদ্ধে নন। গাছগুলি বাঁচিয়ে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ হোক।
গাছ বাঁচানোর আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সংগঠনের বনগাঁ শাখার সম্পাদক অজয় মজুমদার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর জানান, তাঁরা প্রথম থেকে এটাই চেয়েছিলেন। গাছ বাঁচিয়ে রাস্তা হলে তাঁরা খুশি হবেন। গাছকে রেখে দু’পাশে রাস্তা করার পর্যাপ্ত জায়গা আছে। পেট্রাপোল সীমান্তে গাছ বাঁচিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এটা হলে পরিবেশ বাঁচবে, রাস্তা সম্প্রসারণও হবে।
গাছ বাঁচানো কর্মসূচিতে সামিল হওয়া মানুষ জানান, যশোর রোডের কয়েক’শো বছরের পুরনো গাছগুলি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। গাছ কাটা হলে এলাকার বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের উপর প্রভাব পড়বে। গ্রামের অনেক মানুষের টিন-টালির বাড়িতে এসি বসানোর আর্থিক ক্ষমতা নেই। গাছ কাটা হলে এলাকায় গরম বাড়বে। গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়বেন। প্রাচীন ওই গাছগুলিতে দেশি-বিদেশি অনেক প্রজাতির পাখি এসে ভিড় করে। কৃষি খেতের পোকা মাকড় খেয়ে ওই সব পাখি ফসল রক্ষা করে। গাছ কাটা হলে চাষের ক্ষতি হবে। পাশাপাশি ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং বৃষ্টি আনে গাছগুলি। বিশেষ করে শিরীষ গাছ রেনট্রি হিসাবে পরিচিত।
গাছ বাঁচানোর দাবিতে পথে নেমেছিলেন কবি বিভাস রায়চৌধুরীও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও শিক্ষিত কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বৃক্ষখুন, পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে। এই রায়ে প্রমাণিত হল ভারতবর্ষও পরিবেশবন্ধু উন্নয়নের পক্ষে। যাঁরা ব্যথিত মনে বৃক্ষহত্যার বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন, যাঁরা আইনি লড়াই লড়েছেন। তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যশোর রোডের গাছ আন্দোলন এবং এই রায় গোটা দেশের পরিবেশ কর্মীদের সাহস দিল। সমস্ত নিন্দা, হুমকি, অশিক্ষিত মন্তব্য গায়ে না মেখে বলা যাবে, ‘আমার দেশ বেদ-উপনিষদের সময় থেকেই জানে, পৃথিবী কেবল মানুষের নয়, পৃথিবী সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর।’’
বনগাঁ নরহরিপুর থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত ২ কিলোমিটার পথে গাছগুলি মাঝখানে রেখে অতীতে যশোর রোড সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। পরিবেশ কর্মী বা বৃক্ষপ্রেমীরা রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ওই মডেল মেনে রাস্তা সম্প্রসারণের দাবি তুলেছেন। গাছ বাঁচানোর আর্জি জানিয়ে বনগাঁ থেকে বারাসত পর্যন্ত হেঁটেছিলেন রাহুলদেব বিশ্বাস নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমদিন থেকেই আমরা বলে আসছি পেট্রাপোল সীমান্তে যে ভাবে গাছ বাঁচিয়ে রাস্তা করা হয়েছে। সেটাই করা হোক। বনগাঁ শাখায় যাত্রী ট্রেন ও মালগাড়ির সংখ্যা বাড়ানো হলে যশোর রোডে চাপ কমবে।’’
বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ গাছগুলি বাঁচানোর আবেদন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। গোপাল বলেন, ‘‘গাছগুলি পৃথিবীর ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদ ধ্বংস করে রাস্তা সম্প্রসারণ করা যাবে না। পেট্রাপোলের মতো গাছ বাঁচিয়ে রাস্তা করতে হবে।’’ ২০১৮ সালে জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও যশোর রোডের গাছ বাঁচিয়ে সম্প্রসারণে পক্ষে সওয়াল করেছেন। বলেছিলেন, ‘‘গাছগুলি তুলে অন্যত্র লাগানো হোক। যদিও ওই ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি।’’
জাতীয় সড়ক সূত্রে জানা গিয়েছে, যশোর রোডে বারাসত, অশোকনগর হাবড়া ও বনগাঁ শহরে মোট পাঁচটি রেলসেতু বা উড়ালপুল তৈরি হওয়ার কথা। ওই কাজের জন্য ৩৫৬টি গাছ কাটার কথা ছিল। ২০১৭ সালে বনগাঁয় গাছ কাটার কাজ শুরু হয়। এরপরই বৃক্ষপ্রেমীরা পথে নামেন। গান, কবিতা, নাটক, মোমবাতি মিছিলের মাধ্যমে গাছ না কাটার পক্ষে জনমত তৈরি করা হয়। বিষয়টি গড়ায় হাইকোর্টে। হাইকোর্ট গাছ কাটার উপর স্থগিত দিয়েছিল। বন্ধ হয় গাছ কাটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy