নতুন-রূপে: ফের ঝাঁ চকচকে হয়ে ওঠার অপেক্ষায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি
দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরে অবশেষে চালু হতে চলেছে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ক্রীড়া বিদ্যালয়। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্রদের ভর্তি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্কুল শিক্ষা দফতরের কমিশনার সৌমিত্র মোহন এ বিষয়ে ২ জানুয়ারি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
হাবড়ার বাণীপুরে পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত ক্রীড়া বিদ্যালয়টির নাম ডক্টর বিআর অম্বেডকর ক্রীড়া বিদ্যালয়। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওই আবাসিক ক্রীড়া বিদ্যালয়ে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে শুধুমাত্র অ্যাথলেটিক্স বিভাগে ৩০ জন ছাত্রকে ক্রীড়া দক্ষতা অনুসারে এবং সরকারি ব্যয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হবে। এখানে ভর্তি হওয়ার মাপকাঠি অবশ্য রয়েছে। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভর্তি হতে গেলে পড়ুয়াদের ২০১৯ সালে ৩৭ তম রাজ্য প্রাথমিক ও নিম্নবুনিয়াদি বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে হবে।
২০০৮ সাল থেকে ওই স্কুলে পড়ুয়া ভর্তি বন্ধ ছিল। ২০১৩ সাল থেকে স্কুলটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন ধরে হাবড়ার মানুষ এই স্কুল খোলার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শিক্ষা দফতর নতুন করে তা চালু করছে জানতে পেরে তাঁরা খুশি।
লেখাপড়ার পাশাপাশি উন্নতমানের খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য ২০০১ সালে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ক্রীড়া বিদ্যালয় হিসাবে হাবড়ার বাণীপুরে তৈরি হয় এই স্কুল। প্রথমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনুমোদন ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে ১৫ জন ছাত্রী ও ১৫ জন ছাত্র ভর্তির সুযোগ পেত। রাজ্যের প্রতি জেলার প্রাথমিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্টে যারা প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান লাভ করত, সেই সব ছেলেমেয়েদের ইন্টারভিউয়ে ডাকা হত। স্কুলের মাঠে ক্রীড়া দক্ষতা ও শারীরিক কসরতের পরীক্ষা নেওয়া হত। উত্তীর্ণদের ভর্তির ব্যবস্থা করা হত। পড়ুয়াদের খাওয়া-দাওয়া, থাকা, লেখাপড়া ও খেলাধুলার সরঞ্জাম সব কিছুই সরকার দিত। পরে স্কুলটি মাধ্যমিকে উন্নীত হয়েছিল। এই স্কুলের খেলাধুলার মান খুবই উন্নত। জাতীয় স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এখানকার পড়ুয়ারা সাফল্য পেয়েছে। মূলত অ্যাথলেটিক, জিমনাস্টিক, তিরন্দাজি, ফুটবল ও কবাডি শেখানো হয়।
স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানকার পড়ুয়াদের মধ্যে আন্তনা খাতুন ন্যাশনাল স্কুল গেমসে হাইজাম্পে প্রথম ও ১০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় স্থান পেয়েছিল। তাঞ্জিলা খাতুন হাই জাম্প ও লং জাম্পে প্রথম স্থান পেয়েছিল। পিঙ্কি দে শটপুটে প্রথম হয়। এ ছাড়াও, প্রসেনজিৎ ঘরামি হাইজাম্পে, ইউসুফ খানসামা, গৌতম ভূমিজ ও লক্ষ্মীরানি দাস লং জাম্পে জাতীয় স্কুল গেমসে সাফল্য পেয়েছিল। গত বছর মধ্যমগ্রাম জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে অশোকনগরের বিধায়ক ধীমান রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্রীড়া বিদ্যালয়টি চালুর আর্জি জানান। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিদ্যালয়টি চালু করতে পদক্ষেপ করে শিক্ষা দফতর। প্রায় ২৫ একর জমি নিয়ে স্কুল। হাবড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘ক্রীড়া বিদ্যালয়টি চালু করার সব প্রক্রিয়া শেষ। এখন আগাছা পরিষ্কার, ভবন সংস্কারের কাজ চলছে। এই শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুল চালু হয়ে যাবে।’’
বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ছাত্রছাত্রীদের আবাসনগুলি দীর্ঘ দিন ধরেই তালা বন্ধ হয়ে পড়েছিল। দেওয়াল জুড়ে শ্যাওলা জমেছে। শৌচাগারগুলির অবস্থা খারাপ। তার মধ্যে আগাছা গজিয়েছে। সাপের আনাগোনা। ক্যান্টিনের অবস্থাও খারাপ। উপরের টিনের ছাউনি ভেঙে গিয়েছিল। খেলার মাঠও বেহাল। এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে স্কুলটির পরিকাঠামো নতুন করে তৈরি করা হোক। কারণ, নতুন করে কোনও স্টেডিয়াম, স্পোর্টস স্কুল তৈরি হচ্ছে না। এ দিকে এই স্কুলটির অবস্থাও খারাপ। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিক্ষক, প্রশিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ। সকলেই আশা করছেন, আগের মতো ফের প্রতিভা উঠে আসবে এই স্কুল থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy