Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
প্রধানের বিজ্ঞপ্তিতে ‘বিভ্রান্তি’ মৌসুনিতে
Cyclone Yaas

অনুমতি ছাড়া ত্রাণ পারাপার নিষিদ্ধ

আইনৃ-শৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছে। যত্রতত্র প্লাস্টিকের বোতল ছড়িয়ে পড়ায় দুষণ ছড়াচ্ছে।

দুর্যোগ: ইয়াসের দাপটে এবাবেই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে মৌসুনি।

দুর্যোগ: ইয়াসের দাপটে এবাবেই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে মৌসুনি। ফাইল চিত্র।

দিলীপ নস্কর
ফ্রেজারগজ্ঞ শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ০৬:৩৩
Share: Save:

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ত্রাণ পারাপার করানোর আগে পঞ্চায়েত প্রধানের অনুমতি নিতে হবে ঘাট মালিকদের। ফ্রেজারগঞ্জের মৌসুনি পঞ্চায়েতের প্রধানের জারি করা এই নির্দেশে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে দ্বীপে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের আশঙ্কা, এর ফলে ত্রাণ বিলিতে আসা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা বাধা পাবেন। উৎসাহ হারিয়ে তাঁরা ত্রাণ বিলি করতে আসবেন না। যদিও, পঞ্চায়েত প্রধান হাসিনাবানু বিবি জানান, ত্রাণের সমবণ্টনের কথা ভেবেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। একই বক্তব্য ব্লক প্রশাসনের।

ইয়াসের ধাক্কায় বিপর্যস্ত নদী এবং সমুদ্র ঘেরা মৌসুনি দ্বীপ। দ্বীপের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় নদী ও সমুদ্র বাঁধ ধসে গিয়েছে। গৃহহীন প্রায় ২১ হাজার মানুষ। সরকারের পাশাপাশি সেখানে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ত্রাণ দিতে আসছে। দ্বীপের বালিয়াড়া হাইস্কুলের কমিউনিটি কিচেনে প্রায় এক হাজার মানুষ দুপুরের খাবার পান। কিন্ত সেই সুবিধা সর্বত্র না থাকায় দ্বীপের অন্য প্রান্তের বাসিন্দারা বাইরে থেকে আসা ত্রাণের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল।

মৌসুনী দ্বীপে যেতে গেলে পেরতে হয় চিনাই নদী। পাতিবুনিয়া ঘাট, মণ্ডলের ঘাট, সাতমাইল-রাজনগর ঘাট, হুজ্জুতের ঘাট, শাসমল ঘাট, পাঁচুর ঘাট, দক্ষিণ দুর্গাপুর ঘাট, বাগডাঙা ঘাট, দুর্গাপুর ঘাট, খিরিশতলা ঘাট, নামখানার ট্রেকারবাজার ঘাট ও প্রথম প্লট ঘাট থেকে নৌকায় নদী পেরতে হয়।

গত বৃহস্পতিবার ওই সব ঘাটের মালিকদের উদ্দেশে পঞ্চায়েত প্রধান একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। তাতে লেখা হয়, ‘প্রধানের প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়া কোনও এনজিও-র (স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার) কোনও রকম ত্রাণ পারাপার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়। দ্বীপের বাসিন্দা দেবাশিস মাইতির আশঙ্কা, ‘‘এর ফলে সমস্যায় পড়বেন ত্রাণ দিতে আসা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। প্রধানের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করে থাকলে ত্রাণ ঠিক সময়ে পৌঁছবে না। অপেক্ষা করে ফিরে যেতে হবে তাঁদের। সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির দেওয়া ত্রাণও এই মুহূর্তে বিশেষ প্রয়োজন।’’ দ্বীপের আর এক বাসিন্দা অমিত জানার কথায়, ‘‘বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ত্রাণ দিতে আসছে। সকলকে যদি প্রধানের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়, তবে ত্রাণ বিলি হবে কখন?’’ বিজ্ঞপ্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা লেখা থাকায় ঘাটমালিকদের অনেকেই ত্রাণ বিলিতে আসা কর্মীদের কথা শুনতে রাজি হবেন না বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাঁদের দাবি, ‘‘কী উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তা ঘাটমালিকদের বোঝানো উচিত পঞ্চায়েতের।’’

পক্ষান্তরে, পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য, ‘‘ত্রাণ দিতে নিষেধ করা হয়নি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। ত্রাণ দিতে আসা সংস্থাগুলির থেকে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন মাঝিরা। দ্বীপে ত্রাণের সমবণ্টন হচ্ছে না। তাই আমাদের জানিয়ে এলে ওই সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না। এই সব ভেবেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।’’

মৌসুনি দ্বীপে বিপর্যয়ের খবর পেয়ে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বহু সংস্থা চাল, ডাল, আলু, তেল, মশলা, সয়াবিন, পানীয় জল এবং ওষুধ নিয়ে দ্বীপে যাচ্ছে। সংস্থাগুলির সদস্যেরা কোনও না কোনও ঘাট পার হয়ে দ্বীপে যাচ্ছেন। এখানেই তৈরি হচ্ছে সমস্যা।

এই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরেই বিতর্ক।

এই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

নামখানা ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ত্রাণ বিলিতে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা মৌসুনি দ্বীপ এলাকা চেনেন না। নৌকার মাঝিরা নিজেদের ইচ্ছা মতো তাঁদের নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে, দ্বীপের অন্য এলাকার বাসিন্দারা বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক সময় ত্রাণবিলিতে আসা কর্মীদের সঙ্গে বিবাদও হচ্ছে। আইনৃ-শৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছে। যত্রতত্র প্লাস্টিকের বোতল ছড়িয়ে পড়ায় দুষণ ছড়াচ্ছে। তা ছাড়া, এক সঙ্গে বহু লোক ত্রাণ বিলিতে আসায় কোভিড-বিধি মানা যাচ্ছে না। এই সব কারণেই পঞ্চায়েত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

বিডিও (নামখানা) শান্তনু সিংহঠাকুর বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, যাঁরা ত্রাণ দিতে আসছেন, তাঁদেরকে মাঝিরা দ্বীপের একটি দিকেই বেশি করে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে, অন্যেরা ত্রাণ পাচ্ছেন না। সকলে যাতে সমান ত্রাণ পান, তার জন্য ঘাট মালিকদের বলা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অনেকেই ত্রাণ দেওয়ার নামে বেড়াতে আসছেন। এটাও বিজ্ঞপ্তি জারির একটা কারণ। বিজ্ঞপ্তির অপব্যাখ্যা হচ্ছে। কোনও সংস্থাকেই ত্রাণ দিতে নিষেধ করা হয়নি। ওই পঞ্চায়েতে এখনও পর্যন্ত প্রায় চারশো সংস্থা ত্রাণ বিলি করেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy