Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
library

Canning Library: ‘পিয়ালি বইঘরে’ পড়তে আসে স্কুলছুটেরাও

এই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহী করে তুলতে স্থানীয় বাসিন্দা তাপসী মণ্ডল নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘পিয়ালি বইঘর’ নামে একটি পাঠাগার।

মনোযোগ: পাঠাগারে এসেছে পড়ুয়ারা।

মনোযোগ: পাঠাগারে এসেছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৪৬
Share: Save:

করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ। প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে বেড়েছে স্কুলছুটের সংখ্যা। বহু পড়ুয়া পড়া ছেড়ে রোজগারে নেমে পড়েছে। ব্যতিক্রম নয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনের পিয়ালিও। এখানকার বেশিরভাগ পড়ুয়াই নিম্নবিত্ত পরিবারের। অনলাইনে ক্লাস করার সামর্থ্য নেই বেশিরভাগের।

এই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহী করে তুলতে স্থানীয় বাসিন্দা তাপসী মণ্ডল নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘পিয়ালি বইঘর’ নামে একটি পাঠাগার। ইতিমধ্যে এলাকার বেশ কিছু পড়ুয়া তার সদস্য হয়েছে। গল্পের বইয়ের পাশাপাশি পাঠ্যবইয়েরও সম্ভার থাকায় উপকৃত হচ্ছে অনেকে। পড়াশোনার ক্লাস, সচেতনার পাঠ, হাতের কাজ শেখারও ব্যবস্থা রয়েছে।

নবম শ্রেণির ছাত্র দীক্ষিত মণ্ডলের বাবা নেই। মা কাজল গৃহসহায়িকার কাজ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ।

এ দিকে, সামর্থ্য না থাকায় ছেলের পড়াশোনার বই, অনলাইনে ক্লাস করার জন্য স্মার্টফোন কিনে দিতে পারেননি মা। এক রকম বাধ্য হয়েই পড়া ছেড়ে দিয়েছে দীক্ষিত। প্রায় একই রকম অবস্থা সায়নী সরকার, বৃষ্টি রায়, দীপা নাইয়া, মধুমিতা নস্করদের। পরিবারের আর্থিক সমস্যার কারণে নবম-দশম শ্রেণির অনেক ছাত্রীর পরিবার বিয়ের ব্যবস্থা করেছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে। অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। ‘‘এদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ’’— বললেন তাপসী।

পিয়ালি স্টেশন থেকে ১৫-২০ মিনিট হাঁটাপথে পিয়ালি নতুনপল্লি। ওই পাড়াতেই গড়ে উঠেছে পিয়ালি বইঘর। তাপসী আদতে গোসাবার বালিদ্বীপের বাসিন্দা। বহুদিন ধরে টালিগঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। দু’বছর আগে তিনি পিয়ালির ওই এলাকায় বাড়ি তৈরি করেন। আমপানের পরে বহু মানুষের পাশে দাঁড়াতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্তর সঙ্গে যোগাযোগ করে ত্রাণের ব্যবস্থা করেন তাপসী। তখনই এলাকার পড়ুয়াদের সমস্যার দিকটিও সামনে আসে।

তাপসী ও শর্মিষ্ঠা পড়ুয়াদের নিয়ে একটি কর্মশালা করেন। সেখানে জানতে চাওয়া হয়, স্কুলছুট পড়ুয়াদের কী কী প্রয়োজন। সেই মতো শুরু হয় পাঠাগার তৈরির কাজ। আপাতত ওই গ্রন্থাগারে স্কুলের বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। এ ছাড়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, বঙ্কিম রচনাবলী, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা, ঠাকুরমার ঝুলি-সহ সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র, বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী সংক্রান্ত বইপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে পাঠাগারটি। আপাতত এর সদস্য সংখ্যা ২৫।

তাপসী জানান, পাঠাগারকে ঘিরে সদস্য পডু়য়াদের উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। তারা নিয়মিত পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই নিয়ে পড়ছে। তা ছাড়া, সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের জন্য ক্লাসেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিয়মিত কর্মশালার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমিক, বাড়িতে অত্যাচার, শিশু নির্যাতন, নারী পাচার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করা হয়।

তাপসীর ছোট মেয়ে স্মৃতিকণা এই পড়ুয়াদের নাচ-গান শেখান। পাশাপাশি উল বোনা, সেলাই, মাটির মূর্তি, পুতুল তৈরি-সহ বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা চাই কোনও পড়ুয়া যেন বই-খাতার অভাবে স্কুলছুট না হয়। ওদের স্বাবলম্বী করে তুলতে আমরা পিয়ালি বইঘরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। অসহায় পরিবারের ছেলেমেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াক, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’’

অন্য বিষয়গুলি:

library school dropouts Canning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy