নজরদারি: হাবড়ায় পুলিশ। ছবি: সুজিত দুয়ারি
তালিকা প্রস্তাবিত। খাতায় কলমে সেটাই গণ্ডিবদ্ধ এলাকা ধরে লকডাউন শুরু হল উত্তর ২৪ পরগনায়। যে তালিকা ধরে লকডাউনের ঘোষণা, তা নিয়ে রাত পর্যন্ত যেমন ধোঁযাশা রইল, তেমনই সংলগ্ন এলাকায় সব খোলা রেখে কী ভাবে লকাডাউন হবে, নজরাদারিই বা হবে কী ভাবে— স্পষ্ট জবাব মেলেনি কোনও প্রশ্নেরই।
নবঘোষিত লকডাউন নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে পুলিশ এবং প্রশাসনের অন্দরেও। রাত পর্যন্ত গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় লকডাউনের যে ছবি ধরা পড়ল জেলা জুড়ে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অনেক সংক্রমিত এলাকাকে গণ্ডিবদ্ধ এলাকার বাইরে রাখার অভিযোগ উঠেছে। আমজনতার একাংশের দাবি, লকডাউনে কড়া হোক পুলিশ। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, “প্রস্তাবিত যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, আপাতত ওটাই থাকছে। তার ভিত্তিতেই লকডাউন শুরু হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবিত কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকায় বনগাঁ মহকুমার কোনও এলাকার নাম নেই। স্বাভাবিক ভাবেই মহকুমায় কোথাও লকডাউন হচ্ছে না। যদিও মহকুমায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯৭ জন। বর্তমানে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২০-র বেশি। সব থেকে আক্রান্ত গাইঘাটা ব্লকে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ জন। সেখানে কেন কোথাও লকডাউন হচ্ছে না, তা নিয়ে বিভ্রান্ত সাধারণ মানুষ। লকডাউন না হলেও বৃহস্পতিবার বনগাঁ পুরসভা ও পুলিশের পক্ষ থেকে শহরে মাইক প্রচার বের করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়, মাস্ক না পরে পথে বেরোলে আইনগত পদক্ষেপ করা হবে। তার পরেও অবশ্য মাস্ক-চিত্রের উন্নতি হয়নি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, অথচ ব্যবসায়ী, বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বেশিরভাগই মাস্ক ছাড়া জিনিসপত্র বিক্রি করছেন বলে দেখা গেল হাবড়ায়। শহরে এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩২। ১৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা বাড়িতে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে ।
হাবরা ১, হাবড়া ২, অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা, গোবরডাঙা পুরসভা— সর্বত্রই অ্যাক্টিভ করোনা রোগী রয়েছেন। অথচ সব এলাকাকে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়নি। এ দিন পুলিশের তরফ থেকে যে বৈঠক হয়েছে, তাতে পরিষ্কার বলা হয়, লকডাউন যাতে সকলে মানে, সে জন্য পুলিশ কঠোর হবে। তবে বিকেল ৫টার পর থেকে যে লকডাউন প্রক্রিয়া শুরু হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গণ্ডিবদ্ধ এলাকার ঠিক বাইরেই যথেচ্ছ জটলা, মাস্ক ছাড়া বহু মানুষকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। বিকেল ৫টার পর থেকে বসিরহাট মহকুমায় কন্টেমেন্ট জ়োনে প্রচার শুরু করে পুলিশ। কিন্তু লকডাউনে কতটা কঠোর হবে পুলিশ, সন্দিগ্ধ মানুষ। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনভর আলোচনা চললেও মিনাখাঁর মালঞ্চ বাজার, সন্দেশখালির সরবেড়িয়া বাজার, ন্যাজাটের কালীনগর বাজার, বসিরহাটের পুরাতন, এবং ভ্যাবলা বাজার, স্বরূপনগরের হঠাৎগঞ্জ বাজার, বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাট বাজার, হাসনাবাদের ভেবিয়া চৌমাথা বাজারের মতো জনবহুল এলাকা বন্ধ রাখার কোনও নির্দেশিকা দেয়নি জেলা প্রশাসন। ফলে বাজারগুলি খোলাই থাকছে। এই বাজারগুলির কাছাকাছি এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী থাকলেও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তবে সন্ধের পরে বসিরহাট মহকুমায় নানা জায়গায় ব্যবসায়ীরা নিজেরাই দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছেন বলে চোখে পড়েছে।
বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “দূরত্ববিধি মানাটা অত্যন্ত জরুরি। বাইরে বেরোনোর সময়ে মাস্ক না থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কন্টেন্টমেন্ট এলাকাগুলিতে যাতে কঠোর ভাবে লকডাউন মানা হয়, সে জন্য পুলিশি ব্যবস্থা করা হয়েছে।” পুলিশ বললেও আদপে বাজারের ছবি কিন্তু অন্য কথাই বলছে। মাস্ক না থাকলেও দোকান-বাজারে দিব্যি মিলছে জিনিসপত্র।
কাঁচরাপাড়া থেকে পলতা পর্যন্ত শুধু ভাটপাড়ার একটি এলাকায় লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। নৈহাটি, হালিশহর, ইছাপুর শ্যামনগরের বেশ কিছু এলাকায় অ্যাক্টিভ করোনা রোগী রয়েছেন। সেই সব এলাকায় লকডাউন ঘোষণা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “কোনও এলাকায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে, সেই খবর স্বাস্থ্য দফতরের জানানোর কথা পুরসভা। সেই যোগাযোগের অভাব রয়েছে। সে জন্যই গণ্ডিবদ্ধ এলাকা নিয়ে এমন অভিযোগ উঠছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy