নদীর ঘাটে ভেলায় ভাসানো হচ্ছে দেহ। নিজস্ব চিত্র।
মশারি টাঙানো কলার ভেলার বিছানায় যত্ন করে শোয়ানো ১০ বছরের বালিকার দেহ। পাশে কাগজে লেখা নাম আর ঠিকানা। সদ্য তার মৃত্যু হয়েছে সাপের বিষে। এ ভাবেই তাকে নদীতে ভাসিয়ে দিলেন পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায়। মৃত বালিকা পূজা মৃধার বাড়ি ছোট মোল্লাখালির কালিদাসপুর গ্রামে। জানা গিয়েছে, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। শুক্রবার রাতে সাপে কামড়ানোর পর পরিবারের সদস্যেরা হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝার বাড়িতে নিয়ে যাওয়াতেই পুজার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। শনিবার সকালেই সারসা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় তার দেহ।
ঘটনার পিছনে সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত এলাকায় অশিক্ষা ও কুসংস্কারের পাশাপাশি রাস্তাঘাট এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনুন্নয়নেরও অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে বাবা দীপ মৃধার সঙ্গে বাড়িতেই শুয়ে ছিল পূজা। হঠাৎ একটি বিষধর সাপ এসে তার পায়ে কামড়ায়। ঘুমের ঘোরে পূজা প্রথমে বুঝতে পারেনি। ঘুমে আচ্ছন্ন অবস্থায় শরীরে যন্ত্রণা অনুভব হয় তার। বাবাকে ডেকে বিষয়টি জানায় সে। দেরি না করে বাবা ও প্রতিবেশীরা মিলে তাকে হাসপাতলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। রাস্তা খারাপের জন্য হাসপাতালে না গিয়ে স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় পূজাকে।
সেখানে ঝাঁড়ফুক করে ওঝার কেরামতি চলে প্রায় তিন ঘন্টা। ততক্ষণে বিনা চিকিৎসায় প্রায় মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছে সে। পরে ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। পৌঁছানোর পরই চিকিৎসকরা পূজাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। ভোরে সূর্যের আলো ফোটার পর কলার ভেলায় মৃত বালিকাকে সারসা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কলার মান্দাসের দেহটি তোলার আগে ধুপ, প্রদীপ জ্বালিয়ে ও মশারি খাটিয়ে, কপালে চন্দন দিয়ে, কালিদাসপুরের গ্রামবাসীরা চোখের জলে শেষ বিদায় দেন ছোট্টো পূজাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইয়াসের প্রভাবে নদীতে জলস্ফীতির জেরে জঙ্গলের বহু এলাকা ডুবে গিয়েছিল। তার ফলে কালাচ, কেউটে-সহ নানা বিষধর সাপ চলে এসেছে লোকালয়ে। ইতিমধ্যেই গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, পাথরপ্রতিমা-সহ সুন্দরবনের কয়েকটি এলাকায় সাপে কাটার ঘটনা ঘটেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy