অনুগামীদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মাঝে আদালতের পথে শাহজাহান। — নিজস্ব চিত্র।
বসিরহাট মহকুমা আদালতে জেলবন্দি শেখ শাহজাহানকে দেখে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুললেন তাঁর অনুগামীরা। শুক্রবার শাহজাহানকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তার আগে থেকেই আদালত চত্বর ভরে গিয়েছিল শাহজাহানের অনুগামীদের ভিড়ে। শাহজাহানকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি আদালত চত্বরে প্রবেশ করতেই শুরু হয় তৃণমূলের নামে জয়ধ্বনি দেওয়া, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। তার মধ্যেই শাহজাহানকে কোর্ট লক আপে নিয়ে যায় পুলিশ। আদালত তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
কয়েক দিনের ব্যবধানে সম্পূর্ণ বদলে গেল বসিরহাট মহকুমা আদালত চত্বরের ছবিটা। একটা সময় ছিল, যখন শাহজাহানকে আদালতে আনা হলেই উঠত তৃণমূল বিরোধী স্লোগান। শাপশাপান্ত করা হত শাহজাহানের নাম নিয়েও। তার পর পেরিয়েছে একটি লোকসভা ভোট। আর তাতেই আমূল বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। শুক্রবার শাহজাহানকে দেখে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উঠল বসিরহাট আদালত চত্বরে। ১৪ দিনের জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শুক্রবার শাহজাহানকে তোলা হয় বসিরহাট মহকুমা আদালতে। অনেক আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। সকাল ১১টা নাগাদ শাহজাহানকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি মহকুমা আদালত চত্বরে প্রবেশ করতেই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে সমর্থকদের। তাঁরা পুলিশের গাড়ি কার্যত ঘিরে ধরে শাহজাহানের উদ্দেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন। গাড়ির মাঝের আসনে সাদা হাফ শার্ট গায়ে বসেছিলেন শাহজাহান। হাতে ছিল ছোট জলের বোতল। সেখানে উপস্থিত অনেকেরই দাবি, আশপাশে অনুগামীরা যখন তারস্বরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিচ্ছেন, তখন শাহজাহানের মুখেও স্মিত হাসি খেলে যায়। তবে, ভিড় সরিয়ে পুলিশ যখন তাঁকে গাড়ি থেকে বার করে, তখন অবশ্য গম্ভীর মুখে সোজা হেঁটে কোর্টের ভিতরে চলে যেতে দেখা যায় শাহজাহানকে।
রেশন দুর্নীতিতে তদন্তের জন্য গত ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের বাড়িতে যায় ইডি। কিন্তু তল্লাশি তো দূর, শাহজাহান অনুগামীদের তাণ্ডবে প্রাণ বাঁচিয়ে পালাতে বাধ্য হয় ইডি। সেই ঘটনায় রাজ্যে তোলপাড় পড়ে যায়। জানুয়ারিতে শান্ত থাকার পর সন্দেশখালি আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে। রেশন দুর্নীতি, জমি দখল-সহ একাধিক অভিযোগে শাহজাহান-সহ এলাকার একাধিক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পথে নামেন স্থানীয় মহিলাদের একাংশ। সেই আন্দোলন দানা বাঁধতেই যদিও জমি দখল, গুন্ডামির অভিযোগকে ছাপিয়ে স্থানীয়দের একাংশ সরব হয় নারী নিগ্রহ নিয়ে। এই সময় থেকে আন্দোলনের রাশ ক্রমশ চলে যেতে থাকে বিজেপির হাতে। নির্যাতিতাদের প্রথমে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যাওয়া, পরে ভোটের প্রচারেও ব্যবহার করে বিজেপি। রেখা পাত্রকে আন্দোলনের মুখ হিসাবে তুলে ধরে তারা। রেখাকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে জনসভাতেও মোদীর পাশেই বসানো হয় রেখাকে। সেই রেখাকেই এ বারের লোকসভা ভোটে প্রার্থী করে বিজেপি। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন শাহজাহান এবং তাঁর একাধিক অনুগামী তথা এলাকার তৃণমূল নেতা। কিন্তু ‘খেলা’ ঘোরা শুরু তার পরেই। আচমকা প্রকাশ্যে আসে দু’টি স্টিং ভিডিয়ো। ভিডিয়ো দু’টির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। সেখানে বিজেপির স্থানীয় নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা যায়, কিছু টাকার বিনিময়ে পুরো ঘটনাটিই ‘সাজানো’ হয়েছে। কিন্তু এই ‘স্বীকারোক্তি’ই প্রশ্ন তুলে দেয় সন্দেশখালির আন্দোলনের সত্যাসত্য নিয়ে। তার ভরপুর প্রভাব পড়ে ভোটের ফলেও। বসিরহাট জয় তো দূর অস্ত, সন্দেশখালি বিধানসভায় কোনও রকমে আট হাজারের লিড পায় বিজেপি। ভোটের ফল বেরনোর পর এই প্রথম বসিরহাট আদালতে আনা হল শাহজাহানকে। কিন্তু দেখা গেল, বিক্ষোভ নয়, জয় বাংলা স্লোগান মুখে তাঁর অপেক্ষায় অনুগামীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy