শাজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র
অভিযোগ যা-ই থাক, ডান-বাম কোনও আমলেই পুলিশ ছুঁতে পারেনি শাজাহানকে। কিন্তু তাঁর সম্পর্কে এত যে সমালোচনা ঘোরে লোকের মুখে মুখে, তা নিয়ে কী বলছেন শাজাহান নিজে?
তাঁর কথায়, ‘‘আমি মাফিয়া নই, তোলাবাজও না। কেউ এ সব প্রমাণ করতে পারলে যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব।’’ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এমন ক্ষোভ কেন এলাকার বহু মানুষের? শাজাহানের যুক্তি, ‘‘আমি সাধারণ মানুষের পাশে থেকে, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করি। খুনের অভিযোগ থেকে শুরু করে সবই বিজেপির ষড়যন্ত্র।’’
সন্দেশখালির ভাঙিপাড়ায় বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে তিনজন খুন হওয়ার পরে নতুন করে চর্চায় এসেছে শাজাহানের নাম। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শাজাহান। বিজেপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, ‘‘দিনের পর দিন ধরে এলাকার মানুষের উপরে অত্যাচার করেছেন শাজাহান ও তাঁর বাহিনী। শেষমেশ আমাদের দলের দু’জন খুনও হয়ে গেলেন ওঁর বাহিনীর হাতে। সব জেনেশুনেও পুলিশ নীরব দর্শক।’’
পুলিশের এক জেলা কর্তার কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করছি। যথা সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বিজেপি নেতৃত্ব যা-ই বলুন, শাজাহানের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ তাঁর দলের নেতারা। জেলা নেতৃত্বের বক্তব্য, জা ‘‘কেউ মুখে অভিযোগ করলে তো হবে না, উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে। পুলিশ তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।’’
ভাঙিপাড়ায় খুনের ঘটনার পর থেকে শাজাহানকে অবশ্য এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। নিহত তৃণমূল কর্মী কায়ুম মোল্লার বাড়িতে অবশ্য ঘটনার পর দিন গিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে এলাকা ছাড়া। লোকসভা ভোটের পরে এলাকায় রাজনৈতিক সমীকরণও বদলাতে শুরু করেছে। ভাঙিপাড়ায় কিছু ভোটে এ বার এগিয়ে ছিল বিজেপি।
এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর সেটা ছিল বড় কারণ, মানছেন গ্রামের অনেকেই। খুনোখুনির দু’দিন আগের একটি ঘটনার কথা বলছেন তাঁরা।
সন্দেশখালির সরবেড়িয়ার কানমারি গ্রামের ঘটনা। সেখান থেকে দুটো গ্রাম পেরোলেই ভাঙিপাড়া। সে দিন সন্ধ্যা নেমেছিল। রাস্তাঘাট প্রায় সুনসান। আচমকাই নীরবতা ভেঙে খান চল্লিশ মোটরবাইক গাঁয়ে ঢুকে পড়ল। সওয়ারিদের অনেকের হাতেই অস্ত্র। রাস্তার লোকেরা ভয়ে ঘরে সেঁধিয়ে যান। কানমারির এক বাসিন্দা শেখ বলেন, ‘‘গাঁয়ে ঢুকেই ওরা একের পর বিজেপির পতাকা খুলতে শুরু করল। সেখানে তৃণমূলের পতাকা লাগাচ্ছিল।’’
তারপরেই শুরু হয় গোলমাল। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, পাল্টা বিজেপিও রুখে দাঁড়ায়। কার্যত ঘেরাও করে রাখা হয় ওই বাইক বাহিনীকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গ্রামে পৌঁছে বাইক বাহিনীকে উদ্ধার করে।
গ্রামের সকলেই জানেন, এই বাইক বাহিনী শাজাহান শেখের। তৃণমূলের লোকেরাই অনেকে বলছেন, ‘‘কানমারির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি ভাঙিপাড়ায় অভিযান না হত, তা হলে হয় তো খুনোখুনি এড়ানো যেত।’’
কিন্তু নিজের প্রভাব বজায় রাখতে বরাবরই মরিয়া শাজাহান। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তিনি যখন তৃণমূলে যোগ দেন, তখন দলের সন্দেশখালি ১ ব্লক সভাপতি রঞ্জিতকুমার দাস। এক বছরের ব্যবধানে দীর্ঘদিনের তৃণমূল নেতা, শিক্ষক রঞ্জিতকে সরিয়ে ব্লক সভাপতি হয়ে যান শাজাহান। তারপর নিজের এলাকায় পর পর দু’বার প্রহৃত হন রঞ্জিত। সে সময়ে শাজাহানের বিরুদ্ধে দলের নেতৃত্বের কাছে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ রঞ্জিত। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। শাজাহান থেকে যান বহাল তবিয়তেই। আরও অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত ভোটে সন্দেশখালি থেকে রঞ্জিতকে ভোটে দাঁড়াতেই দেয়নি শাজাহানের দলবল। তাঁকে হিঙ্গলগঞ্জ থেকে লড়তে পাঠানো হয়। ভোটে জিতেও কোনও পদ পাননি। দলের সর্বোচ্চ মহলে গিয়েছিলেন রঞ্জিত। এ সব নিয়ে আর কোনও কথা বলতে চান না দলের পুরনো নেতা রঞ্জিত। বলেন, ‘‘দলের ব্যাপারে দলের বাইরে বলাটা ঠিক হবে না।’’
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে বিপুল পোশাক সন্দেশখালি হয়ে কলকাতায় পাচার হয়। সেই কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে শাজাহানের বিরুদ্ধে।
সব অভিযোগ শুনেও নির্বিকার শাজাহান। অত্যাচার, সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘কোথায় আমার বাহিনী? এলাকার মানুষই আমার শক্তি। কোনও বাহিনী নেই আমার।’’ তাঁর বিপুল অর্থের উৎস কি তোলা আদায়? শাজাহানের জবাব, ‘‘কেউ আমার দিকে আঙুল তুলে বলতে পারবেন না, তাঁর কাছ থেকে এক কাপ চা চেয়ে খেয়েছি। আমার ব্যবসা আছে। মাছের বড় ভেড়ি, আড়ত-সহ অনেক ব্যবসা রয়েছে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy