Advertisement
২৩ অক্টোবর ২০২৪
Gobardanga

রাস্তায় চলছে নৌকো, উৎসবের মরসুমে জলবন্দি

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টিতে জমা জলের সঙ্গে যমুনা নদীর জল উল্টে লোকালয়ে ঢুকে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। বহু মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকেই ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

এক মাস পেরিয়ে গেলেও গোবরডাঙার জলমগ্ন এলাকার রাস্তায় চলাচলের জন্য কিছু মানুষের ভরসা এখনও নৌকা।

এক মাস পেরিয়ে গেলেও গোবরডাঙার জলমগ্ন এলাকার রাস্তায় চলাচলের জন্য কিছু মানুষের ভরসা এখনও নৌকা। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০৯
Share: Save:

দুর্গাপুজোর আগের দু’দফায় নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল গোবরডাঙা পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো শেষ হয়ে কালীপুজো আসছে। অথ, জমা জল সরার কোনও লক্ষণ নেই। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, জলবন্দি হয়েই তাঁদের কাটাতে হচ্ছে উৎসবের মরসুম।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টিতে জমা জলের সঙ্গে যমুনা নদীর জল উল্টে লোকালয়ে ঢুকে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। বহু মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকেই ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। মঙ্গলবার পুরসভার ৩ ওয়ার্ড এলাকায় গিয়ে দেখা গেল পলাশ দে নামে এক যুবক নৌকোয় করে যাতায়াত করছেন ঢালাই রাস্তার উপর দিয়ে। তিনি জানালেন, ‘‘বাড়ি থেকে কাজে বেরোনোর জন্য প্রায় ন’হাজার টাকা খরচ করে নৌকো তৈরি করেছি। রাস্তা জলে ডুবে। রাস্তা এতটাই পিছল হয়ে গিয়েছে, হাঁটাও যাচ্ছে না। জল পচে গিয়েছে। যাঁদের দোতলা বাড়ি, তাঁরাই বাড়িতে আসেন। বাকিরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। যমুনা নদী সংস্কার করা না হলে আমাদের দুর্ভোগ চলতেই থাকবে।’’

বাসিন্দাদের অনেকেরই ঘরের মধ্যে জল ঢুকেছে। কোথাও উঠোনে জল। ঘরের মধ্যে ছোট মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুরু হয়েছে সাপ ও মশার উপদ্রব। জমা জল পচতে শুরু করেছে। সেই জলে যাতায়াত করে মানুষের শরীরে চুলকুনি শুরু হয়েছে। র‌্যাশ বের হচ্ছে। বৃদ্ধা লক্ষ্মী দেবনাথ জমা জলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। বললেন, ‘‘এ বার বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো করতে পারিনি। দুর্গাপুজোও দেখতে যেতে পারিনি জল জমার কারণে। শরীরে চুলকুনি বেরোচ্ছে। ঘরে সাপ-ব্যাঙ, পোকামাকড় ঢুকে পড়ছে। জল সরছে খুবই ধীর গতিতে।’’

জলবন্দি বাসিন্দারা জানালেন, প্রতি বছর বর্ষার সময়ে জলবন্দি হওয়াটা তাঁরা ভবিতব্য বলেই মেনে নিয়েছেন। গোবরডাঙার নিকাশির প্রধান মাধ্যম যমুনা নদী। সেটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের অভাবে নদীতে পলি জমে জমে নদী এখন মৃতপ্রায়। সে কারণেই প্রতি বছর নিয়ম করে একাংশের মানুষকে জল-যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। অনেকের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে বিচ্ছিন্ন ভাবে যমুনা সংস্কার করা হয়েছিল পলি তুলে। পলি নদীর পাড়ে রাখা হয়েছিল। বৃষ্টিতে সেই পলি ফের নদীতে মিশে গিয়েছিল বলে অভিযোগ।

কেন জমা জল বের হচ্ছে না?

পুরপ্রধান শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘জল জমার মূল কারণ যমুনা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া। যমুনার জল উল্টে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। যমুনা থেকে পলি তুলে সংস্কার করা না হলে জমা জলের সমস্যা স্থায়ী ভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়।’’ এ ছাড়াও পুর কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, আগে যে সব জায়গা দিয়ে জমা জল বের হত সেখানে বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। নিচু এলাকা উঁচু হয়েছে। আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে সমস্যা মিটবে না। আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রাজ্য সরকারের কাছে প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি পুরপ্রধানের। এখন তা অনুমোদনের অপেক্ষায়। যমুনার সংস্কারে বিষয়ে পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এ নিয়ে প্রাক্তন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। বর্তমান সেচমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করা হবে।’’ তবে জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘আমাদের অগ্রাধিকার ইছামতী সংস্কার। প্রথমে ইছামতী থেকে পলি তুলে সংস্কার করা হবে। তারপর যমুনার সংস্কার করা হবে। কারণ, যমুনা সংস্কার করলে সেই জল তো ইছামতীতে গিয়ে পড়বে। ইছামতীর নাব্যতা না বাড়লে যমুনার সেই জল নিতে পারবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Gobardanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE