প্রতীকী ছবি।
পুজোর পর স্কুল খোলা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। অথচ, নিয়োগ থমকে থাকায় স্কুলগুলিতে ক্রমেই বাড়ছে শিক্ষকের সঙ্কট। অন্যদিকে বেড়েছে বদলির সংখ্যা। সেখানেও উঠে আসছে বেনিয়মের অভিযোগ। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পড়ুয়ারা।
একদিকে শিক্ষকদের বদলির আবেদনের হিড়িক পড়েছে। অন্যদিকে স্কুলগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ। শূন্যপদ ফাঁকা পড়ে থাকায় স্কুলগুলিতে ক্রমশ কমছে শিক্ষকের সংখ্যা। সব মিলিয়ে স্কুলে সুষ্ঠু ভাবে পঠনপাঠন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে স্কুলগুলি।
বনগাঁ মহকুমার গাঁড়াপোতা বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার মোট পদ ৩১টি। বর্তমানে শিক্ষিকা রয়েছেন ১৮ জন। স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালে স্কুলে শেষবার শিক্ষিকা নিয়োগ হয়েছিল। সেই সময় প্রধান শিক্ষিকা-সহ দু’জন নিয়োগ হন। অথচ এই সময়ের মধ্যে অবসর নিয়েছেন এবং বদলি হয়েছেন ৮ জন শিক্ষিকা। স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা ১,২৪৭। ফলে, প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষিকা কম থাকায় পঠনপাঠন চালাতে সমস্যায় পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষিকা ববি মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষে পার্টটাইম শিক্ষিকা বেশি সংখ্যায় নেওয়া সম্ভব নয়। গ্রামীণ এলাকা। স্কুল তহবিলে সেই পরিমাণ অর্থ নেই। শূন্যপদগুলি পূরণ হলে সুষ্ঠু ভাবে পড়াশোনা চালানো যেত।’’
শুধু এই বিদ্যালয়ই নয়, বনগাঁর অনেক স্কুলেই দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকের শূন্যপদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অন্যদিকে বেড়েছে বদলির সংখ্যা। ফলে, পড়াশোনার মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না স্কুলগুলিতে। অনেক স্কুলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগ।
গোপালনগরের নহাটা সারদা সুন্দরী বিদ্যামন্দির স্কুলে শিক্ষিকাদের মোট পদ ৪৯টি। শিক্ষিকা আছেন ৩২ জন। ২০১৯ সালের পর আর নিয়োগ হয়নি। মোট ছাত্রীর সংখ্যা ১,৬২৮। প্রধান শিক্ষিকা শম্পা পাল বলেন, ‘‘একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আমাদের বাংলার কোনও শিক্ষিকা নেই। ইচ্ছা থাকলেও শ্রেণিগুলিকে আলদা সেকশনে ভাগ করতে পারি না।’’
বাগদার হেলেঞ্চা গালর্স স্কুলের শিক্ষিকাদের মোট পদ ৩৫টি। এর মধ্যে ১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে কয়েক বছর ধরে। ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৯৫০। স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১২-১৩ সালে শিক্ষিকা বদলির কারণে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।
কুরুলিয়া হাইস্কুলে ২৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকার কথা থাকলেও আছেন ১৬ জন। প্রধান শিক্ষক অনুতোষ দত্ত বলেন, ‘‘শূন্যপদে নিয়োগ না হওয়ায় স্কুল চালাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।’’
একই সমস্যা সিন্দ্রাণী সাবিত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যালয়ে ৫৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকার কথা। সেখানে প্রধান শিক্ষক-সহ শূন্যপদ রয়েছে ১৬টি।
বেশিরভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, নিয়োগ বন্ধ রেখে বদলির ব্যবস্থা চালু হওয়ায় সমস্যা তীব্র হয়েছে।
বনগাঁ মহকুমার গোপালনগরের বেলতা হাইস্কুলে কিছুদিন আগেও শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা ছিল ১৪ জন। সম্প্রতি স্পেশাল গ্রাউন্ডে তিনজন শিক্ষক অন্যত্র বদলি হন। স্কুল সূত্রে খবর, বর্তমানে ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে আরও ২ জন বদলির আবেদন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে স্কুল খুললে কী ভাবে পঠনপাঠন চালানো হবে ভেবে উঠতে পারছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক সুখেন্দুশেখর ঘোষ বলেন, ‘‘একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে জীববিদ্যা ও রসায়নের শিক্ষক নেই। রসায়নের একজন শিক্ষক ছিলেন। স্কুলে তাঁর ২ বছরও পূর্ণ হয়নি। তিনি বদলি হয়ে গিয়েছেন। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ভূগোলেরও কোনও শিক্ষক নেই। স্কুল খোলার পর নতুন শিক্ষক না এলে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখা বন্ধ করে দিতে হবে।’’
গাইঘাটার ঝাউডাঙা সম্মিলনী হাইস্কুলে জীবন বিজ্ঞানের দু’জন শিক্ষক ছিলেন। দিন কয়েক আগে একজন শিক্ষক বদলি হয়েছেন। প্রধান শিক্ষক কালীরঞ্জন রায় বলেন, ‘‘পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত জীবন বিজ্ঞান আছে। এখন একজন শিক্ষককে দিয়ে কাজ চালাতে হবে। তাঁর উপরেও চাপ পড়ে যাবে।’’
শিক্ষা দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া, হৃদরোগ-সহ ৬টি রোগের ক্ষেত্রে বদলির আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া বিশেষ ক্ষেত্রে বয়স্ক ও বাড়ি থেকে যাঁদের স্কুলের দূরত্ব বেশি, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন।
তবে, আবেদনের ক্ষেত্রে বেনিয়মের অভিযোগ উঠছে। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, যাঁদের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে তাঁরা বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।
কী ভাবে তা সম্ভব হচ্ছে? স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধরুন কোনও শিক্ষকের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ২০-২২ কিলোমিটার। কিন্তু তিনি গুগল ম্যাপে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দূরত্ব ৩০-৩৫ কিলোমিটার করে দেখাচ্ছেন। একাংশের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আবার দূরত্ব বেশি দেখাতে ট্রেনের টিকিটকে হাতিয়ার করছেন। ট্রেন পথে দূরত্ব বাড়ানো হচ্ছে।’’
শুধু তাই নয়, নিয়ম অনুযায়ী কোনও স্কুলে নির্দিষ্ট বিষয়ে একজন শিক্ষক থাকলে তাঁকে বদলি করা যায় না। অভিযোগ, এই নিয়ম মানা হচ্ছে না অনেকক্ষেত্রেই। অনেক স্কুলে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভিত্তিতে স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক হয়েছিল। সেই শিক্ষকেরা বদলি হওয়ায় বহু স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন মুখ থুবড়ে পড়ছে।
শিক্ষা দফতরের কর্তাদের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, মূলত গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলি থেকে বদলি হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলির পঠনপাঠনে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এই বিষয়ে বনগাঁ মহকুমা অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলেন, ‘‘শিক্ষক শিক্ষিকাদের বদলির ফলে অনেক স্কুলে পঠনপাঠনে সমস্যা হচ্ছে। আমরা দেখছি কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy