সন্দেশখআলিতে নিহত ভিলেজ পুলিশ কর্মী। —ফাইল চিত্র
পরণে খাকি রঙের হাফপ্যান্ট ও শার্ট। কখনও সাইকেলে, কখনও পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন ওঁরা। কখনও দেওয়ালে নোটিশ সাঁটতেন, কখনও ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে সরকারি নির্দেশ পড়তেন। এলাকায় তেমন কিছু ঘটলে কয়েক মাইল সাইকেল চালিয়ে সে খবর পৌঁছে দিতেন থানায়। গ্রামবাংলা তাঁদের চিনত চৌকিদার নামে।
আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাঁদের দেখা যেত এই চৌকিদারদের। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় ধীরে ধীরে তাঁরা বিলুপ্ত হন। ২০১২ সালে ফের নতুন করে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে তৈরি করা হয় একটি করে পদ। নিয়োগ কর হয় তরুণদের। তবে পদের নাম আর চৌকিদার রাখা হয়নি। নবনিযুক্তেরা পেলেন নতুন নাম— ‘ভিলেজ পুলিশ ভল্যান্টিয়ার’। কাজ অবশ্য আগের মতোই। এলাকার বিশেষ বিশেষ খবর থানাতে জানানোই তাঁদের কাজ। শুক্রবার রাতে সন্দেশখালিতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হল বিশ্বজিৎ মাইতি নামের যে তরুণের, তিনিও ছিলেন এমনই এক ভিলেজ পুলিশ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ১৮ জুন রাজ্য সরকার ভিলেজ পুলিশ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতে একজন করে ভিলেজ পুলিশ নিয়োগ করা হয়। তাঁদের নিয়োগ করা হয় চুক্তির ভিত্তিতে। আর সাম্মানিক পান দৈনিক হিসেবে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, তাঁরা দৈনিক ৩১০ টাকা সাম্মানিক পান। মাসে ২২ দিন কাজ পান তারা। নিয়োগের সময় ভিলেজ পুলিশের বয়স হতে হবে ২০-৩০ বছর। যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস।
সন্দেশখালিতে গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিতে মৃত্যু হয় ভিলেজ পুলিশ বিশ্বজিৎ মাইতির। তার পর থেকে সর্বত্র একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, এই ধরনের ‘অপারেশনে’ কি ভিলেজ পুলিশকে সঙ্গে রাখা যায়? আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কি ভিলেজ পুলিশের মতো অস্থায়ী কর্মীদের কাজ?
সরকারি নিয়ম বলছে, ভিলেজ পুলিশ শান্তি রক্ষায় কাজ করলেও বড় গোলমালে তাঁদের থাকার কথা নয়। তাঁর মূলত পুলিশের মুখ হিসেবে এলাকার পঞ্চায়েতে কাজ করবেন। এলাকার বিভিন্ন খবর সরাসরি থানার ওসি বা আইসিকে জানানোই তাঁর প্রধান কাজ। তাঁর এলাকায় কোনও গোলমাল, দুর্ঘটনা, রাস্তা অবরোধ ঘটলে অবিলম্বে তা থানায় জানাতে হবে। আবার এলাকায় অস্বাভাবিক, সন্দেহজনক বা আচমকা মৃত্যু অথবা বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও তা সঙ্গে সঙ্গে থানায় জানানো তাঁর কাজ। এ ছাড়াও এলাকায় কারওর নতুন আসা, কারওর গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে তা সঙ্গে সঙ্গে থানায় জানানোর নির্দেশ রয়েছে। অনেকে বলেন, গ্রামে গ্রামে চরবৃত্তি করাই আসলে তাঁদের কাজ। অভিযোগ, পুলিশ তাদের মূলত এই কাজেই তাঁদের ব্যস্ত রাখে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বড় অপারেশনে যাওয়া ভিলেজ পুলিশের কাজ নয়। কিন্তু সন্দেশখালির মতো ওই রকম প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তা চেনানোর জন্যই ভিলেজ পুলিশকে সঙ্গে রাখা হয়। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy