Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শিশুদের বিষ খাওয়ানোর অভিযোগ, ভাঙচুর-আগুন  

গোলমাল থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশ কর্মীরা। ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত আলপনা ঘোষ এবং তান্ত্রিক পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অভিযুক্ত আলপনা ঘোষের বাড়ি তখনও জ্বলছে।—নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্ত আলপনা ঘোষের বাড়ি তখনও জ্বলছে।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
স্বরূপনগর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

গ্রামে রটে গিয়েছিল, তান্ত্রিকের পরামর্শে এলাকার কয়েক জনকে বিষ খাইয়েছেন এক মহিলা। দিন পনেরো আগে মারাও যায় বছর দু’য়েকের এক শিশু। আর এক কিশোরী চিকিৎসাধীন ছিল হাসপাতালে। রটে যায়, সেও মারা গিয়েছে। এরপরেই বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত মহিলার বাড়িতে চড়াও হয় গ্রামের লোকজন। গোলমাল থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশ কর্মীরা। ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত আলপনা ঘোষ এবং তান্ত্রিক পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্বরূপনগরের কাবিলপুর গ্রামের ঘটনা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আলপনার স্বামী নিত্য সুদের কারবার করেন। বছর কয়েক আগে নিত্যর মেয়ে রিঙ্কুর যমজ নাতি হয়। পারিবারিক সূত্রের খবর, জন্মের কিছু দিন পরেই তারা মারা যায়।

আলপনা যান এক তান্ত্রিকের কাছে। গ্রামের লোকের দাবি, ওই তান্ত্রিক বলেছিল, আলপনার মেয়ের বৌমার উপরে ‘জিন’ ভর করেছে। তাড়াতে হলে তিন জন পড়শিকে বিষ খাইয়ে মারতে হবে।
গ্রামবাসীদের দাবি, কিছু দিন ধরে আলপনার সঙ্গে একটি শিশি দেখা যাচ্ছিল। তাতে নীল রঙের তরল ছিল। অভিযোগ, সপ্তাহ দু’য়েক আগে গ্রামের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ ঘোষের মেয়ে রনি (২) মারা যায়। তাকে আলপনা ওই শিশি থেকে কিছু খাইয়েছিলেন।

দিন সাতেক আগে আলপনার পড়শি বিমল ঘোষের তিন বছরের মেয়ে সুমিতাও অসুস্থ হয়। তাকেও আলপনা শিশি থেকে তরল পানীয় খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিল বলে দাবি সুমিতার মা সবিতার। পুলিশ জানতে পেরেছে, শনিবার বিকেলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী রিঙ্কা ঘোষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার মুখ এবং জিভ পুড়ে যায়। তাকে বসিরহাট জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতার আরজিকরে স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে রটে যায়, রিঙ্কা মারা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, খবরটি ঠিক ছিল না। কিন্তু তারই ভিত্তিতে গ্রামের লোকজন ধরে নেন, এ সবের পিছনে রয়েছেন আলপনা।

নিত্যর বাড়িতে হামলা চালায় কিছু লোক। শুরু হয় ভাঙচুর। নিত্য ছেলে-বৌমা নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। পিঠটান দেন আলপনা। উত্তেজিত জনতা নিত্যর ম্যাটাডরে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিচলির গাদাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ভাঙচুর করে সেখানেও আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বসিরহাট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও, আইসি, কয়েকটি থানার ওসি-সহ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়।
আলপনা ও তাঁর পরিবারকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে বলে শোরগোল শুরু করে গ্রামের লোকজন। পুলিশ সকলকে উদ্ধার করে গাড়িতে তুলতে গেলে ধৃতদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে জনতা। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। ইট-পাটকেল ছোড়া হয় পুলিশ কর্মীদের লক্ষ্য করে। জখম হন কয়েক জন। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পরে নিত্য, তাঁর ছেলে রাজকুমার ও বৌমা নিতাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে ধরা পড়ে আরও ৪ জন। আলপনা ও তান্ত্রিককে খুঁজছে পুলিশ। তবে নিত্য পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁর পরিবারের উপরে হামলা হল। সুদের কারবার নিয়ে পুরনো রাগ থেকেই কিছু লোক এই কাজ করেছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Poisoning Tantrik Poisoning Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy