এমন কংক্রিটের বাঁধ চান গ্রামবাসী। নিজস্ব চিত্র
আমপান তাঁদের সমস্ত কিছু তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে। মাথা গোঁজার ঘর নেই। নেই চাষের জমি। সবই জলের তলায়। নদী ভাঙনের ফলে কার্যত বিধ্বস্ত গোসাবার রাঙাবেলিয়া পঞ্চায়েতের উত্তর রাঙাবেলিয়া, দক্ষিণ রাঙাবেলিয়া, জটিরামপুর-সহ আশপাশের মানুষজনের।
একই চিত্র কালিদাসপুর, পুঁইজালি, লাহিড়িপুর, ছোটমোল্লাখালি ও কুমিরমারি গ্রামের বহু মানুষের। বার বার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এই সমস্ত এলাকার নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রাম। ভাসিয়ে নিয়ে যায় জমি, বাড়ি। তাই এ বার এই এলাকার মানুষ ত্রাণ চান না। তাঁদের দাবি, আগে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি হোক এলাকায়।
২০০৯ সালের ২৫ মে আয়লা আছড়ে পড়েছিল সুন্দরবনের বুকে। সে বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার নদীবাঁধ। হাজার হাজার ঘর, বাড়ি, বিঘের পর বিঘে কৃষিজমি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল। অনেক গ্রাম তার অস্তিত্ব হারিয়েছিল। সুন্দরবনে তার ধ্বংসলীলা দেখিয়েছিল আয়লা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছিল। বছরের পর বছর এই এলাকার জমিতে চাষ হয়নি। নদীর নোনা জল ঢুকে জমির উর্বরতা ধ্বংস করে দিয়েছিল। এই বিপুল ক্ষতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সে বারই দাবি উঠেছিল, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরি করতে হবে। সুনিশ্চিত করতে হবে এলাকার মানুষের জীবন।
কিন্তু ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় এক দশক। এখনও পর্যন্ত সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধ বেহাল। পূর্ণিমা, অমাবস্যার কোটালেই বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রাম। সেখানে বুলবুল, আমপানের মত ঝড় কী ভাবে সামলাবে এই নড়বড়ে নদীবাঁধ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুর্গত এলাকার মানুষ দাবি তুলেছেন, “ত্রাণ নয়, আগে কংক্রিটের বাঁধ চাই।’’
রাঙাবেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুবর্ণ মণ্ডল, মন্দিরা সর্দাররা বলেন, “ত্রাণ দিয়ে কী হবে? আমাদের আয়লা বাঁধ চাই। বার বার এই দুর্ভোগ আমরা কত দিন পোহাবো? কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের জীবন ও বাড়িঘর নিশ্চিত করুক সরকার।’’ একই দাবি তুলেছেন কালিদাসপুর, পুঁইজালি, ছোটমোল্লাখালির মানুষও।
আয়লার পরে তৎকালীন বাম সরকার এ নিয়ে দিল্লিতে দরবার করে সুন্দরবনে কক্রিটের নদীবাঁধ তৈরির জন্য প্রথম দফায় কয়েক কোটি টাকার কেন্দ্রীয় সাহায্য পায়।
কিন্তু মাত্র ১৮৪ কোটি টাকার কাজ হতে না হতেই পতন হয় বাম সরকারের। তৃণমূল ক্ষমতায় আসে। বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে জমিজটের সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন এলাকায়। তা মিটিয়ে কিছু কিছু এলাকায় তৈরি হয় আয়লা বাঁধ। কিন্তু বেশির ভাগ এলাকাতেই এই কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করা যায়নি। গোসাবা ব্লকের অন্তর্গত ৩৮৪ কিলোমিটার নদীবাঁধের মধ্যে মাত্র ১৮ কিলোমিটার নদীবাঁধ কংক্রিটের হয়েছে। একই রকম হিসাব সুন্দরবনের অন্য ব্লকের নদীবাঁধেরও।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক প্রায় ২০০ কিলোমিটার আয়লা বাঁধ নির্মাণ হয়েছে গোটা সুন্দরবন জুড়ে। তারপরেই এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৮০ শতাংশই কাজ না হওয়ায় কেন্দ্রে টাকা ফেরত চলে যায়। রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “আয়লার পরে কেন্দ্রের কাছে বহু দরবার করে এই পরিমাণ টাকা সুন্দরবনের কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরির জন্য নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এই সরকারের গা ছাড়া মনোভাবের জন্য সেই কাজ হল না। কাজ না হওয়ায় টাকাও ফেরত চলে গিয়েছে। আর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সুন্দরবনের মানুষ।’’
গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, “কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরি করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। বিশেষ করে জমির সমস্যা। বহু জায়গাতেই মানুষ জমি দিতে রাজি হননি। এ ছাড়াও যাঁরা এই বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন সেই সেচ দফতরের কিছু কিছু আধিকারিকের গাফিলতির কারণেও কাজে অগ্রগতি হয়নি।’’ কুমিরমারি, রাঙাবেলিয়া, কালিদাসপুর-সহ গোসাবার মোট চারটি জায়গায় কংক্রিটের বাঁধ তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন জয়ন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy