Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

প্রাণ গিয়েছে বাঘ-কুমীরের আক্রমণে, অসহায় পরিবার

মঞ্চের এক কোণের চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন মনোরমা মাইতি, কমলা বেরা। তাঁদের স্বামীরা দিন কয়েক আগে জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। আর ফেরেননি।

কবে মিলবে সাহায্য...। নিজস্ব চিত্র।

কবে মিলবে সাহায্য...। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মৈপিঠ কোস্টাল শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১২
Share: Save:

মঞ্চের এক কোণের চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন মনোরমা মাইতি, কমলা বেরা। তাঁদের স্বামীরা দিন কয়েক আগে জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। আর ফেরেননি। বাঘে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁরাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল সদস্য।

দিন কয়েক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের জাতীয় সেবা প্রকল্পের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলে সুন্দরবনে বাঘ ও কুমিরের আক্রমণে মৃত ও আহত মৎস্যজীবীদের পরিবারকে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। মৈপিঠ কোস্টাল এলাকার একটি স্কুলে অনুষ্ঠান হয়। সেখানেই এসেছিলেন মনোরমাদেবীর, কমলাদেবীর মতো প্রায় ৫০ জন।

সদ্য বাঘে টেনে নিয়ে গিয়েছে মধ্য গুড়গুড়িয়া গ্রামের মনোরমাদেবীর স্বামীকে। তিনি জানালেন, প্রায় আট বছর আগে ভিন রাজ্যের কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত দীনেশ মাইতির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। কিছু দিন পরে স্বামী অসুস্থ হয়ে যান। তারপর বছর কয়েক ধরে কাঁকড়া ধরার কাজ শুরু করছিলেন। দিন কয়েক আগে তিনি যখন কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন, তখন তাঁকে বাঘে টেনে নিয়ে যায়। মনোরমাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘আমি স্বামীকে কাঁকড়া ধরতে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ও বলত, এ ছাড়া সংসার চালানো যাবে না। দু’টো ছেলেমেয়ে। কী করব বলুন?’’ পূর্ব দেবীপুরের বাসিন্দা সদ্য বিধবা কমলা বেরা জানান, বাঘের হামলায় স্বামী মারা যাওয়ার পরে সংসার চলছে না। শিশুদের খাবার কেনার টাকা নেই।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী জঙ্গলের নদী ও খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গেলে বন দফতরের বৈধ পরিচয়পত্র থাকা প্রয়োজন। ওই পরিচয়পত্র থাকলে তবেই বাঘ, কুমিরের আক্রমণে মৃত মৎস্যজীবীদের ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকার। আহতদের চিকিৎসার খরচও রাজ্য সরকার দেয়। তবে সে ক্ষেত্রেও ওই পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক। মৎস্যজীবীদের পরিবারের অভিযোগ, পরিচয়পত্র থাকলেও সরকারি সাহায্য পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। প্রত্যন্ত এলাকায় নিরক্ষর মানুষ বুঝতেই পারেন না যে কোথায় গেলে কাজ হবে। ডায়মন্ড হারবারের কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, মৎস্যজীবীরা যাতে পেশা বদল করে অন্য কাজ করতে পারেন, সে জন্য জরির কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে বনরক্ষা কমিটি পক্ষ থেকে নানা শিবিরও করা হয়। তাতে কাজের কাজ তেমন কিছুই হয় না। তার তাতেই বাড়ে বিপদ। প্রাণও যায় অনেকের।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বন দফতরের এক কর্তা জানান, মৎস্যজীবীরা অসতর্ক হওয়ার জন্যই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। মৎস্যজীবীরা জঙ্গলের পাশের খাঁড়িতে না গিয়ে গভীর জঙ্গলে ঢুকছেন। নদীতে সুতোর উপকরণ দিয়ে কাঁকড়া ধরার নিয়ম থাকলেও জঙ্গলে গাইতি দিয়ে মাটি কেটে অথবা লোহার শিক ঢুকিয়ে কাঁকড়া ধরা হচ্ছে। জেলায় সুন্দরবনের জঙ্গল-সংলগ্ন লোকালয়ে সম্প্রতি বাঘের উপদ্রব বেড়েছে। বিষয়গুলি নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মৎস্যজীবীরা জঙ্গল এবং খাঁড়িতে কাঁকড়া এবং মীন ধরতে যাচ্ছেন কেন?

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, মাছ এবং কাঁকড়া ধরে যে লাভ হয়, জরির কাজ করে সেই লাভ হয় না। গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের প্রধান মহাদেব ঘোড়ই বলেন, ‘‘বর্তমানে বড় মাপের এক কেজি কাঁকড়ার দাম প্রায় ১০০০ টাকা। খাঁড়িতে কাঁকড়া ধরে বাজারে বিক্রি করতে পারলে কমবেশি ৪-৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। এ ছাড়া, এক হাজার মীনের বর্তমান দাম প্রায় ৬০০ টাকা।’’

বাড়তি রোজগারের আশাতেই ঝুঁকির পেশা বেছে নিয়েছেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার বহু মানুষ।

অন্য বিষয়গুলি:

Animal attack Compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy