Advertisement
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Honey Collectors

সুমধুর সাফল্য, মধু সংগ্রহ বাড়ল দ্বিগুণ

সুন্দরবনের অরণ্য থেকে মধু সংগ্রহ যাতে বাড়ে, সে জন্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছিল বন দফতর।

সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করেছেন মৌলেরা।

সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করেছেন মৌলেরা। — ফাইল চিত্র।

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫৪
Share: Save:

মধু সংগ্রহ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ করেছিল বন দফতর। তা কাজে দেওয়ায় কার্যত ‘সুমধুর’ সাফল্য পেল বন দফতর। গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি পরিমাণ মধু সংগৃহীত হল সুন্দরবনে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর অজয়কুমার দাস বলেন, “গত বছর ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকা ও বিভাগীয় অরণ্য এলাকা মিলিয়ে মোট ১৬ মেট্রিক টন মধু সংগৃহীত হয়েছিল। কিন্তু এ বারে দ্বিগুণের বেশি মধু মিলেছে।”

সুন্দরবনের অরণ্য থেকে মধু সংগ্রহ যাতে বাড়ে, সে জন্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছিল বন দফতর। দফতরের তরফে আগেই ঘোষণা করেছিল, এ বার সুন্দরবন থেকে সংগৃহীত মধুর জন্য মৌলেদের (মধু সংগ্রাহক) বাড়তি দাম দেওয়া হবে। সে কারণে অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি মৌলে এ বছর সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন। এ বার মোট ৭৫ দল মধু সংগ্রহ অভিযানে নেমেছিলেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায়। মোট ৫৭৬ জন মৌলে এক মাস ধরে দু’দফায় সুন্দরবনের গভীর অরণ্য থেকে মধু সংগ্রহ করেছেন। বন দফতর জানিয়েছে, এ বার ২৫ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ হয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকা থেকে। ২৪ পরগনা বন বিভাগের এলাকার ১০ মেট্রিক টন মধু মিলিয়ে মোট ৩৫ মেট্রিক টন মধু সংগৃহীত হয়েছে।

এক ধাক্কায় মধু সংগ্রহের পরিমাণ এতটা বাড়ল কী ভাবে?

বন দফতরের দাবি, মধুর দাম বাড়ানো এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে। এ বার কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৭০ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে মধুর। গত বছর কেজি প্রতি ১৮০ টাকা করে দাম পেতেন মৌলেরা। এ বার মধুর গুণমান বিচার করে যথাক্রমে ২২৫ ও ২৫০ টাকা কেজি প্রতি দাম দেওয়া হয়েছে মৌলেদের। এ ছাড়া আগের মতোই মধু সংগ্রহের পারিশ্রমিক হিসেবে কেজি প্রতি বাড়তি ২০ টাকা দেওয়া হয়েছে। মুলত এই বাড়তি দামের কারণে অনেক বেশি মৌলে এ বার মধু সংগ্রহে গিয়েছেন বলে জানাচ্ছে বন দফতর।আর্থিক কারণের সঙ্গে সহায়ক হয়েছে পরিবেশগত কারণও। গত দু’বছর বড় কোনও ঘূর্ণিঝড় হয়নি সুন্দরবনে। সে কারণে অনেক বেশি ও বড় আকারের মৌচাক জঙ্গলে তৈরি হয়েছে। বন দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ বার মার্চ মাসের শুরু থেকেই প্রচুর মৌমাছির আনাগোনাও লক্ষ্য করা গিয়েছিল জঙ্গলে। তাই এ বার অনেক বেশি মধু মিলবে বলেই আশাবাদী ছিলেন মৌলেরা। দয়াপুরের নিধিরাম মণ্ডল, এমলিবাড়ির সুদর্শন রাউতের মতো মৌলেরা বলছেন, ‘‘গত দু-তিন বছর আমপান, ইয়াসের জন্য মৌমাছি অনেক কম ছিল জঙ্গলে। এ বার প্রচুর মৌমাছি ছিল বলেই অনেক মধু পেয়েছি।”

মৌলেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাও মধু সংগ্রহ বাড়ার একটা বড় কারণ বলে মনে করছে বন দফতর। এ বার মৌলেদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল বলে জানাচ্ছে বন দফতর। তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন গোল্ডেন হানি’। বাংলাদেশি জলদস্যুদের হামলা মৌলেদের একটা বড় চিন্তা। তা ঠেকাতে এ বার লাগাতার নদীবক্ষে টহলদারি করেছে বন দফতর। ফলে জলদস্যুরা মৌলেদের সংগৃহীত মধু লুট করতে পারেনি। মরসুমের শুরুতেই পাঁচ জন বাংলাদেশি জলদস্যু ধরাও পড়ে। আটক করা হয় ১১টি বাংলাদেশি ভুটভুটি। নিরাপত্তার এই কড়াকড়ির কারণেও বাড়তি অনেকটা মধু মিলেছে বলে দাবি বন দফতরের।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, “অপারেশন গোল্ডেন হানি চালুই করা হয়েছিল মৌলেদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য, যাতে তাঁদের মধু, নৌকা ও অন্য সামগ্রী লুট না হয়। সেই কাজে আমরা সফল। এ জন্য মধুও অনেক বেশি পাওয়া গিয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Honey Collectors Sundarbans Canning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy