Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Bangaon Cafe

মেধাবী রাজুর ক্যাফেতে মিলছে ভবিষ্যৎ গড়ার পরামর্শও

রাজুর স্বপ্ন কলেজে শিক্ষকতা করার। এডুকেশন নিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করারও ইচ্ছে আছে। ইতিমধ্যেই পিএইচডির প্রবেশিকার জন্য দু’বার ইন্টারভিউ দিয়েছেন।

ক্যাফেতে আসা যুবকদের সঙ্গে রাজু মণ্ডল।

ক্যাফেতে আসা যুবকদের সঙ্গে রাজু মণ্ডল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১৮
Share: Save:

চাকরি না পাওয়ার হতাশা নেই তাঁর। আছে চেষ্টা। আর মাঝের সময়টুকু বসে না থেকে আছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। জীবন কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করলেও সে পরিস্থিতিকে মসৃণ করে তোলার মন্ত্রে বিশ্বাসী গাইঘাটার ঠাকুরনগরের বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের রাজু মণ্ডল। এই শক্তি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে প্রস্তুত তিনি। স্নাতক স্তরে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট যুবকের উদ্যম দেখে তারিফ করছেন আশপাশের সকলেই।

‘শিক্ষিত বেকারের ক্যাফে’— নাম দেখেই থমকে দাঁড়াতে হয়। পয়লা সেপ্টেম্বর বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার চাঁদপাড়া স্টেশন-সংলগ্ন এলাকায় উদ্বোধন হয়েছে ক্যাফের। যার মালিক রাজু। ইতিমধ্যে সেখানে যুবক-যুবতীরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। মায়ের নামে নেওয়া ঋণের টাকায় ক্যাফে খুলেছেন রাজু। সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ক্যাফে। সুস্বাদু খাবারের থেকেও এই ক্যাফের মূল আকর্ষণ, ক্যাফের মালিকের অনুপ্রেরণামূলক কথা।

রাজু জানান, তাঁর বাবা মণিমোহন মণ্ডল পুনেয় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মা মায়া সংসার সামলান। রাজুর ছোট বোন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। উচ্চশিক্ষার পরেও সরকারি চাকরি অধরা থেকে গিয়েছে রাজুর। ফলে সংসার চালাতে রাজু ক্যাফে খুলেছেন। তবে তাঁর লক্ষ্য শুধু রোজগার নয়, শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েদের ‘মোটিভেট’ করতে চান রাজু। চাকরির অপেক্ষা বসে না থেকে বিকল্প কাজের মাধ্যমে কী ভাবে তাঁরা স্বনির্ভর হতে পারেন, তার দিশা দিতে চান রাজু। তাঁর কথায়, “উচ্চশিক্ষার পরেও চাকরি না পেয়ে অনেকে মানসিক অবসাদে ভোগেন। এমনকী, আত্মহননের পথও বেছে নেন। আমার ক্যাফেতে আসা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা আলোচনা করি। বিকল্প রোজগারের পথ বাতলে দিয়ে তাঁদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করি।”

রাজুর স্বপ্ন কলেজে শিক্ষকতা করার। এডুকেশন নিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করারও ইচ্ছে আছে। ইতিমধ্যেই পিএইচডির প্রবেশিকার জন্য দু’বার ইন্টারভিউ দিয়েছেন। তবে সুযোগ মেলেনি। রাজু বলেন, “আমার এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার কারণ জানতে পারলে আরও পরিশ্রম করে নিজের ভুল-ত্রুটিগুলি শুধরে নিতাম। তবে শুনেছি, আমার থেকে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা সুযোগ পেয়েছেন।”

২০২০ সালে কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাও দিয়েছেন এই যুবক। ২০২১ সালে ইন্টারভিউ হয়েছিল। এখনও প্যানেল প্রকাশিত হয়নি। মাধ্যমিকে রাজু পেয়েছিলেন ৭৬ শতাংশ নম্বর, উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৭ শতাংশ। এডুকেশনে অনার্স নিয়ে হরিণঘাটা কলেজ থেকে ৭৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলেন। স্নাতকোত্তরে ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

ক্যাফেতে গিয়ে দেখা গেল, অনেকের সঙ্গে চা-কফিতে চুমুক দিতে দিতে রাজু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। এক যুবকের কথায়, “রাজুদা আমাদের উৎসাহিত করেন। মনোবল মজবুত রাখার পরামর্শ দেন। এখানে চা পানের পাশাপাশি রাজুদার মূল্যবান পরামর্শ শুনতেও আসি।”

রাজু জানান, এখানে এলে মানসিক অবসাদ কাটবেই কাটবে। চাকরি পেয়ে গেলেও ক্যাফে বন্ধ করবেন না তিনি। তখন আরও বেশি করে শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়াতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

অন্য বিষয়গুলি:

Motivation Bangaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy