ঝাঁ-ঝাঁ: গতি বেড়েছে, কিন্তু রোদের তাপে পুড়ছে পথ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
যশোর রোডে গাছ কাটার উপরে স্থগিতাদেশ খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য সরকারও আদালতে জানিয়েছে, গাছ কাটার অনুমতি মিললে একটি কাটা গাছের পরিবর্তে ৫টি নতুন গাছ লাগানো হবে। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “গাছ কাটা হলে আমরা বিকল্প গাছ লাগাব। রাজ্য বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী গাছ লাগানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছেন।”
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে কেমন?
অভিযোগ, রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটা হলেও পরে নতুন গাছ লাগানো হয় না। কিছু গাছ লাগানো হলেও পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার চিহ্ন পাওয়া যায় না।
একই অভিযোগ বনগাঁ-চাকদহ সড়ক নিয়ে। কয়েক বছর আগে সড়ক সম্প্রসারণের সময় গাছ কাটা হলেও পরিবর্তে কত গাছ লাগানো হয়েছিল তা নিয়ে স্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই প্রশাসনের কাছে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সড়ক সম্প্রসারণের সময়ে নতুন গাছ লাগানো হয়েছিল কি না, তা খোঁজ-খবর না করে এখনই বলা যাবে না।বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও বলেন, ‘‘বনগাঁ-চাকদহ সড়ক সম্প্রসারণের সময়ে কাটা গাছের পরিবর্তে নতুন গাছ লাগানো হয়েছিল কি না তা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি। না লাগানো হয়ে থাকলে আমরা গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করব।’’
প্রায় ১৩ বছর আগে বনগাঁ-চাকদহ সড়ক সম্প্রসারণ করে ঝাঁ চকচকে চওড়া করা হয়েছিল। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এশিয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের আর্থিক ঋণের টাকায় বনগাঁ থেকে চাকদহ পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার রাস্তাটি সম্প্রসারণ হয়েছিল। এই পথের ১৬ কিলোমিটার অংশ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে। বাকি নদিয়ায়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অংশে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ছোটবড় মিলিয়ে কয়েক হাজার গাছ কাটা পড়েছিল। তার মধ্যে প্রাচীন গাছও ছিল।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটি কাটা গাছের পরিবর্তে পাঁচটি চারা লাগানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পরিবেশ কর্মীদের মতে, পর্যাপ্ত গাছ না লাগানোর ফলে এলাকার পরিবেশের উপরে প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টিপাত কমে গিয়েছে। বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে।বৃক্ষপ্রেমী ও মানবাধিকার কর্মী দেবাশিস রায়চৌধুরী বলেন, “কয়েক বছর আগে বনগাঁ-চাকদহ সড়ক সম্প্রসারণের সময়ে গাছ কাটা হয়। তখন বলা হয়েছিল, নতুন গাছ লাগানো হবে। কিন্তু বাস্তবে নতুন করে গাছ লাগানো হয়েছিল কি না, তা আমাদের জানা নেই। কারণ, গাছ লাগানো হলেও নতুন কোনও গাছ চোখে পড়ে না। বনগাঁ-চাকদহ সড়কটি এখন কার্যত মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাস্তার দু’পাশে গাছের কোনও চিহ্ন নেই।”
কয়েক বছর আগে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর বনগাঁ শাখা ও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাস্তার ধারে আম, লম্বু, মেহগনি, রাধাচুড়া, কৃষ্ণচুড়ার মতো বিভিন্ন গাছের চারা লাগানো হয়েছে। এপিডিআর বনগাঁ শাখার সম্পাদক অজয় মজুমদার বলেন, “অতীতে এই সড়ক সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটা হলেও নতুন গাছ লাগাতে আমরা দেখিনি। আমরা এবং কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সড়কের দু’পাশে গাছ লাগিয়েছিলাম। কিছু গাছ বেঁচেছিল। কিন্তু সম্প্রতি নতুন করে আবারও সড়ক সম্প্রসারণের সময়ে সেই সব গাছও কাটা গিয়েছে।”
বাসিন্দারা জানান, কেটে ফেলা প্রাচীন গাছগুলি ছিল এলাকার ঐতিহ্য। শিরিষ গাছ ‘রেন ট্রি’ হিসাবে কাজ করত। গাছের শিকড় মাটির গভীরে থাকায় ভূমিক্ষয় রোধ হত। পাখিদের আনাগোনা ছিল। গোপালনগরের বাসিন্দা, কবি সমরেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক বছর আগে রাস্তা চওড়া করার সময়ে গাছ কাটা হয়। নতুন করে গাছ লাগাতে দেখিনি। এখন গরমের তীব্রতা বেড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। গাছপালা-পশুপাখি না থাকলে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না। মরুভূমির মধ্যে তো মানুষ বাঁচতে পারে না!”
কয়েক মাস আগে ফের বনগাঁ-চাকদহ সড়ক সম্প্রসারণে কাজ হয়েছে। অভিযোগ, তখনও প্রচুর গাছ কাটা পড়ে। কিন্তু প্রশাসন কোনও গাছ লাগায়নি। এই বিষয়ে চাকদহের বাসিন্দা দুই পরিবেশপ্রেমী পিয়ালি মণ্ডল ও মিঠুন রায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গত বছর মার্চ মাসে। তাঁদের হয়ে মামলা লড়ছেন আইনজীবী মুকুল বিশ্বাস। আদালত ওই গাছ কাটার মামলায় রাজ্যের সড়ক উন্নয়ন পর্ষদকে গাছ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন।মুকুল বলেন, “আদালতের নির্দেশের পরে সড়কের পাশে নদিয়া জেলার মধ্যে কিছু গাছ লাগানো হয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy