প্রতীকী ছবি।
ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে এবং পাকা বাড়ির মালিকেরা কী ভাবে টাকা পেলে, সেই প্রশ্ন তুলে তদন্তের দাবিতে সোমবার সকালে ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লক দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে সদস্যেরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতে আমপানে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৮ হাজার পরিবার। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০-১২ হাজার পরিবার। এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার পরিবার ২০ হাজার টাকা করে পেয়ে গিয়েছে। সমস্যা তৈরি হয়েছে সেখানেই। আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা অধিকাংশই টাকা পাননি। বরং শাসক দলের পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁদের পরিবারের লোকজন টাকা পেয়ে গিয়েছেন। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনপত্র তদন্ত না করে কী ভাবে নামের তালিকা তৈরি করল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরুময় গায়েন বলেন, “দলের পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যেরা টাকা তুলেছেন এবং পরিবারের লোকজনকেও টাকা পাইয়ে দিয়েছেন— তা ভাবতে লজ্জা লাগে। বিস্তারিত তদন্ত করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা যাতে টাকা পান, সে জন্য ব্লক প্রশাসন ও মহকুমা প্রশাসনকে বলা হয়েছে।” ডায়মন্ড হারবার ২ বিডিও নাজিরউদ্দিন সরকার বলেন, “আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি মিটিয়ে দিয়েছি। ওঁদের জানিয়েছি, আংশিক ক্ষতিগ্রস্তেরা ত্রিপলের পাশাপাশি ৫ হাজার করে টাকা পাবেন। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের সকলকেই ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে অনেকেই ক্ষতিপূরণ পেয়ে গিয়েছেন। বাকিরাও পেয়ে যাবেন।” পঞ্চায়েত প্রধানদের টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, কোনও প্রধান টাকা তোলেননি। তবে তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের চিনি না। তাঁরা তুলতে পারেন।” এ দিকে, একই অভিযোগে এ দিন ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা পঞ্চায়েতের হিঞ্চেখালি গ্রামে পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল নেতৃত্বের বাড়িতে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধি নিজেদের নামে বা আত্মীয়দের নামে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও। তিনি স্ত্রী ও শ্যালকের নামে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শুভ্রচাঁদ নস্কর নিজের স্ত্রী ডলি ও ছেলে অর্পণের নামে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। নিকারিঘাটা পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল নেতা নিজের পরিবারের সদস্যের নামে সরকারি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এক তৃণমূল নেতা নিজের ভাইকে টাকা পাইয়ে দিয়েছেন।
এ সবের জেরেই বহু মানুষ একজোট হয়ে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য জয়ন্ত হালদার সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্বের বাড়ির সামনে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভকারী উৎপল হালদার, তাপস মিস্ত্রিরা বলেন, "ঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পেলেন না। আর যাঁদের মার্বেল বসানো দোতলা বাড়ি, তাঁরা টাকা পেয়ে গেলেন। বহু তৃণমূল নেতা আর তাঁদের পরিবারের লোকজন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। এখানে রক্ষকই ভক্ষক।"
পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা ক্যানিং ১ ব্লকের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ শুভ্রচাঁদ নস্কর বলেন, "একশো দিনের প্রকল্পে নদী বাঁধের মাটি দেওয়ার কাজ করেছিলাম জরুরি ভিত্তিতে। সেই টাকা এখনও আসেনি। তাই এই ভাবে কিছু টাকা নিয়ে যে সমস্ত গ্রামের মানুষ কাজ করেছেন, তাঁদের পাওনা মেটানোর চেষ্টা করেছি। যদিও সেটা ভুল হয়েছে। টাকা পেলে আমি ফিরিয়ে দেব।"
শুভ্রচাঁদ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও গ্রামের অন্যান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে এ দিন কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি। তৃণমূল নেতা গৌরাঙ্গ মণ্ডল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। নিকারিঘাটা পঞ্চায়েত প্রধান তাপসী সাফুই বলেন, "পঞ্চায়েত সদস্যেরা যাঁদের নাম দিয়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা ব্লকে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা আদৌ ক্ষতিগ্রস্ত কিনা, সেটা তদন্ত করে দেখা আমার কাজ নয়। আমার পঞ্চায়েতের ২১টি সংসদ এলাকার প্রতিটি থেকে ৩৩ জনের নাম পাঠানো হয়েছে ক্ষতিপূরণের জন্য। তবে বহু মানুষ এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy