Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Mustard Oil

Mustard Oil: ঝাঁঝ বাড়ছে সর্ষের তেলের দামেও

অনেক বাড়িতেই ভাজাভুজি পদ কমিয়ে ফেলা হয়েছে। আনাজ বা মাছের ঝোলেও যতটা কম পারা যায়, তেল ঢালা হচ্ছে।

সর্ষের তেলের পরিবর্তে পাম তেলে ভাজাভুজির তোড়জোড়। হুগলি মোড়ের একটি চপের দোকানে।

সর্ষের তেলের পরিবর্তে পাম তেলে ভাজাভুজির তোড়জোড়। হুগলি মোড়ের একটি চপের দোকানে। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:২১
Share: Save:

রান্নার গ্যাস হাজার টাকা ছুঁতে চলেছে। ক্রমেই মহার্ঘ হচ্ছে সর্ষের তেলও। ছিপি খোলার আগেই ঝাঁঝ লাগছে দামে। ফলে, নাকের জলে-চোখের জলে অবস্থা গৃহস্থের। একই অবস্থা ছোটখাট ব্যবসায়ীরও। দামের রেখচিত্রের ঊর্ধ্বগতি কোথায় থামবে, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে আম-বাঙালির হেঁশেলে।

স্নান করতে যাওয়ার আগে কড়কড়ে মাছভাজা খাওয়া পুরশুড়ার জঙ্গলপাড়া গ্রামের লঙ্কাচাষি বিমল হাটির বরাবরের অভ্যাস। ইদানীং সে অভ্যাস শিকেয় তুলেছে সর্ষের তেলের দাম। বিমলের আক্ষেপ, ‘‘স্নানের আগে মাছভাজা খাচ্ছি না। বৌকে বলছি, মাছ কম ভেজে ঝাল করে ভাতের সঙ্গে দিতে। কী করি বলুন! গত বছরের ডিসেম্বর মাসে যে তেল কিনেছি ১২০ টাকা লিটার, বুধবার তা কিনলাম ২১০ টাকায়। দাম কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে!’’

অনেক বাড়িতেই ভাজাভুজি পদ কমিয়ে ফেলা হয়েছে। আনাজ বা মাছের ঝোলেও যতটা কম পারা যায়, তেল ঢালা হচ্ছে। মধ্যবিত্ত ভোজনরসিকরা পড়েছেন বিপাকে। কেউ আবার সর্ষের তেলের পরিমাণ কমিয়ে সেই জায়গায় অন্য ভোজ্য তেল ব্যবহার করছেন। গোঘাটের বেঙ্গাই গ্রামের অর্চনা খাঁ বলেন, ‘‘আলুভাতে সর্ষের তেলেই চটকাতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে রাইস তেল মিশিয়ে নিচ্ছি।’’

সর্ষের তেলের দাম গত দু’বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। শেওড়াফুলি বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে সর্ষের তেল ১১০-১১৫ টাকা লিটার বিক্রি হয়েছে, এখন তার দাম ২১০-২২০ টাকা। গত চার মাসে লিটার প্রতি ২০-২৫ টাকা দাম বেড়েছে। সর্ষের দাম বেড়ে যাওয়া তেলের দামবৃদ্ধির কারণ বলে কারবারিদের অনেকে মনে করছেন। জেলার এক তেলকল মালিকের কথায়, ‘‘দু’বছর আগে সর্ষে কিনেছি ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে। সেই সর্ষে এখন ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কাঁচামালের দাম বাড়লে স্বাভাবিক ভাবে তেলের দাম বাড়বেই।’’ আরামবাগের একটি মুদিখানার মালিক ভরত গুপ্ত জানান, দাম আরও বাড়তে পারে ভেবে অনেকে বেশি পরিমাণ তেল কিনে মজুত রাখছেন।

হুগলি কৃষিপ্রধান জেলা। তবে, সর্ষের তেলের কদর থাকলেও সর্ষে চাষ নিয়ে চাষিরা বিশেষ উৎসাহী নন বলে জেলার কৃষি দফতরের আধিকারিকদের আক্ষেপ। ভিন্‌ রাজ্য থেকে সর্ষে আসে এখানকার অনেক তেলকলে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এই তৈলবিজের জায়গা দখল করে নিচ্ছে আলু চাষ। এক কৃষিকর্তা বলেন, ‘‘জেলায় পাঁচ বছর আগে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষ হয়েছিল। সেই চাষের পরিমাণ বাড়ার বদলে পাঁচ বছরে কমতে কমতে ১২ হাজার হেক্টরে ঠেকেছে।’’ গোঘাটে একাধিক তেলকল স্থানীয় চাষিদের উপরে নির্ভরশীল। ওই সব তেলকল-মালিকেরা জানান, চাষ কমে যাওয়ায় সর্ষে ভাঙাতে আসা চাষিদের আনাগোনা কমেছে। সেই কারণে সর্ষে ভাঙানো মেশিন প্রায়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

আরামবাগ শহরের হোটেল-মালিক সৌমেন সরকার বলেন, ‘‘অধিকাংশ রান্নায় সর্ষের তেল ছাড়া বিকল্প নেই। প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ লিটার তেল লাগে। দাম এত বেড়েছে, লাভ কমেছে।’’ একই বক্তব্য হোটেল-মালিক আশিস দেবনাথেরও। শহরের পুরাতন বাজার লাগোয়া জায়গায় নবকুমার দে’র তেলেভাজার দোকান আছে। ১৮ রকমের তেলেভাজা হয় এখানে। নবকুমারের কথায়, ‘‘বিক্রি বেশি বলে চালিয়ে নিতে পারছি। কিন্তু এই হারে বাড়তে থাকলে তেলেভাজার স্বাদ বজায় রাখায় সমস্যা হবে। না হলে দাম বাড়াতে হবে। সে আর এক সমস্যার।’’ দামের ছ্যাঁকা থেকে বাঁচতে অনেক তেলেভাজা-দোকানিই পাম তেল ব্যবহার শুরু করেছেন। বেঁচে যাওয়া তেল (পোড়া তেল) না ফেলে ফের ব্যবহার করছেন অনেকে।

চিকিৎসকরা অবশ্য শরীরের কথা ভেবে যথাসম্ভব কম তেল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিয়োথোরাসিক বিশেষজ্ঞ শিল্পা বসুরায় সতর্ক করে দিচ্ছেন, পোড়া তেল শরীরের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। তিনি বলেন, ‘‘তেল হচ্ছে ফ্যাট। বেশি পরিমাণ তেল খেলে ফ্যাট রক্তনালির উপরে প্রভাব ফেলে। রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়। হৃদ্‌যন্ত্রের শিরায় এটা হলে হৃদ্‌রোগ হয়। পোড়া তেলে জৈব-রাসায়নিক পরিবর্তন হয়ে কিছু টক্সিন তৈরি হয়। শরীরের পক্ষে এটা আরও অনেক বেশি ক্ষতিকর।’’

চুঁচুড়ার তেলেভাজা বিক্রেতা সমীর দাস বলেন, ‘‘সর্ষেরতেলের দাম যেখানে পৌঁছেছে, তাতে লোকসান হচ্ছে। এক বছর আগেও ৯৩০ টাকায় এক টিন তেল কিনেছি। সেই তেলই এখন কিনতে হচ্ছে ২১০০ টাকায়। বাধ্য হয়েই চপের সাইজ কমাতে হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mustard Oil cooking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy