Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Panchayat Election 2023

দলীয় কোন্দল ভোগাচ্ছে তৃণমূলকে, নেতৃত্বের সঙ্কট বিজেপির অন্দরে

গত পাঁচ বছরে কতটা শক্তি ধরে রাখতে পারল শাসক দল, আসন্ন ভোটে কী ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিরোধীরা, পায়ের তলায় কতটা রাজনৈতিক মাটি পেল তারা— আনন্দবাজারের ব্লকভিত্তিক পর্যবেক্ষণ। আজ, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার পরিস্থিতি। 

Panchayat Election

গত পাঁচ বছরে কতটা শক্তি ধরে রাখতে পারল শাসক দল, আসন্ন ভোটে কী ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিরোধীরা। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৩ ০৭:৩৬
Share: Save:

দীর্ঘ দিন ধরে বাগদায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নেতৃত্বের কাছে মাথাব্যথার কারণ বলে মনে করেন দলেই অনেকে। গত কয়েক বছর ধরে যে কোনও ভোটের আগে জেলা নেতৃত্বকে বাগদায় এসে কড়া বার্তা দিতে হয়, সকলকে এক সঙ্গে চলার কথা মনে করিয়ে দিতে হয়। এক সময়ে তৃণমূলের শক্তঘাঁটি হওয়া সত্বেও ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল এখানে জিততে পারেনি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও তৃণমূল পিছিয়ে ছিল বাগদায়।

রাজনৈতিক মহলের মতে, গোষ্ঠীকোন্দলই তার মূল কারণ। তা ছাড়া, বাগদার তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের অপরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি এবং স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে বার বার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষোভ দেখা গিয়েছে জনমানসে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা বেআইনি কাজের অভিযোগ উঠেছে। আমপানের ঘরের টাকা বিলি, আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি— এমন নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। এক নেতার বিরুদ্ধে নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে।

২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে বিধানসভায় জয়ী হয়ে বিশ্বজিৎ দাস পরে তৃণমূল যোগদান করেন। তারপরেও তাঁকে দলের মিটিং-মিছিলে দীর্ঘ দিন ব্রাত্য রেখেছিল স্থানীয় নেতৃত্ব। ইফতার পার্টির আয়োজন করা নিয়েও কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। কিছু দিন আগে পর্যন্ত সব পক্ষকে এক সঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। মূলত তরুণ ঘোষ, গোপা রায়, অঘোরচন্দ্র হালদার, পরিতোষ সাহা, নিখিল ঘোষেরা বাগদা তৃণমূলের নেতৃত্ব দেন। দলের অন্দরের খবর, নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব আছে। গত বছর অগস্ট মাসে বিশ্বজিৎকে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়। তিনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। বিশ্বজিৎ বলেন, "বাগদায় সকলকে এক সঙ্গে আনা গিয়েছে। গোষ্ঠীকোন্দল ৯০ শতাংশ মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। বাকি ১০ শতাংশও ঠিক হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত ভোটে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।"

২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে বিজেপির এখানে বাড়বাড়ন্ত শুরু। গত পঞ্চায়েত ভোটে ১৯০টি পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৫৯টি আসন। বামেদের সরিয়ে বিরোধী দল হিসাবে বিজেপি উঠে আসে। সিন্দ্রাণী এবং কোনিয়াড়া ২ পঞ্চায়েত দখল করে বিজেপি। পরে অবশ্য তৃণমূল দখল করে নেয় ওই দুই পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত সমিতির ২৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৬টি আসন। লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর এখান থেকে লিড পান। বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে বিশ্বজিৎ দাস জয়লাভ করেন। পরে অবশ্য তিনি তৃণমূলে যোগদান করেন।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পালে হাওয়া লাগলেও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিজেপি এখানে ছন্নছাড়া। বিরোধী দল হিসাবে আন্দোলনের যে ধারভার থাকা উচিত ছিল, তা সে ভাবে দেখা যায়নি গত কয়েক বছরে। দুলাল বরের সঙ্গে স্থানীয় নেতৃত্বের দূরত্ব রয়েছে। দলের সব কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যায় না।

দুলাল বলেন, "দলের কর্মসূচিতে যেখানে আমন্ত্রণ পাই, সেখানে যাই। বাগদায় বিজেপির প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন আছে। তবে এখানে দলের দক্ষ নেতৃত্বের অভাব আছে।" বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব আছে বলে মনে করেন দলের অনেকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বিজেপি পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিটি তৈরি করেছে। অভিযোগ, এই কমিটির সঙ্গে মণ্ডল নেতৃত্বে সমন্বয়ের অভাব আছে। বিজেপি নেতা অমৃতলাল বিশ্বাস অবশ্য বলেন, "গত পঞ্চায়েতের থেকে এ বার আমাদের অনুকূলে মানুষের সাড়া অনেক বেশি।"

একটা সময়ে সিপিএম তথা বামেদের দাপট ছিল বাগদা ব্লকে। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী কমলাক্ষী বিশ্বাস বাগদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পাঁচ বার ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০০৬ সালের ভোটে অবশ্য তিনি তৃণমূল প্রার্থী দুলাল বরের কাছে পরাজিত হন। তারপর থেকে তৃণমূল বাগদায় জমি তৈরি করতে থাকে। ২০১১ সালের পর থেকে বামের বড় অংশের কর্মী-সমর্থকেরা তৃণমূলে চলে যান। সিপিএম তথা বামেদের সংগঠন দুর্বল হতে থাকে। সিপিএম নেতাদের একাংশের অহংকার, মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বার বারই।

গত পঞ্চায়েত মোটে বামেদের ভরাডুবি হয়। বাগদা ব্লকের ১৯০টি পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে বামেরা পেয়েছিল মাত্র ১৪টি আসন। সিপিএম পায় ১৩টি, ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছিল একটি মাত্র আসন। পরবর্তী সময়ে দুই বাম সদস্য তৃণমূলে যোগদান করেন। কোনও পঞ্চায়েত দখল করতে পারেনি বামেরা। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের কোনও আসনেও জয়ী হয়নি তারা। গত বিধানসভা ভোটে বামেরা পেয়েছিল মাত্র ৫ শতাংশ ভোট।

এক সময়ে সঞ্জয় দত্তচৌধুরী, সুনীল করের মতো সিপিএম নেতাদের দক্ষ হাতে সংগঠন করতে দেখেছেন স্থানীয় মানুষ। বয়সের কারণে তাঁদের এখন নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় না। তবে সিপিএম ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছে বলে দাবি দলের নেতাদের। সিপিএম নেতা সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, "২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে আমরা আরও বেশি আসন পেতে পারতাম। কিন্তু বুথে বুথে ভোট লুট হয়েছিল। এ বার আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী। পুরনো বসে যাওয়া কর্মীরা ফিরে আসছেন। নতুন যুব কর্মীরা দলে যোগদান করছেন।"

তৃণমূল আত্মপ্রকাশ করার আগে পর্যন্ত বাগদায় কংগ্রেস ছিল রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী। সংগঠন ছিল মজবুত। কিন্তু ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর থেকেই কংগ্রেস এখানে ভাঙতে শুরু করে। প্রথম সারির কংগ্রেস নেতারা অনেকেই তৃণমূলে নাম লেখান। তবুও কংগ্রেস এখানে জোড়াতালি দিয়ে চলছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের দল ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। কংগ্রেস ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। একটা সময়ে কার্যত সংগঠন বলে কিছু ছিল না।

এরই মধ্যে অবশ্য ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেস আচমকা অক্সিজেন পেয়ে যায়। দুলাল বর অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেসে যোগদান করেন। ওই বছর বিধানসভা ভোটে দুলাল কংগ্রেসের প্রতীকে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেন। বামেরা সমর্থন করেছিল।

২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস প্রার্থীরা তিনটি পঞ্চায়েত আসনে জয়ী হয়। পরবর্তী সময়ে অবশ্য ২ জন সদস্য তৃণমূলে চলে যান। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে দুলাল বিজেপিতে যোগদান করেন। সব মিলিয়ে জোর ধাক্কা খায় কংগ্রেস নেতৃত্ব। তবে ধীরে ধীরে কংগ্রেস গোছাতে শুরু করেছে।

বাগদা ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি প্রবীর কীর্তনিয়া বলেন, "সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস জয়ী হওয়ার পরে মানুষ কংগ্রেসে ফিরতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইতিমধ্যে সংখ্যালঘু পরিবার-সহ প্রায় ১০০টি পরিবারের লোকজন কংগ্রেসে যোগদান করেছেন।"

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Election 2023 TMC CPM BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy