Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Aadhar Cards

আধার কার্ড তৈরির বেআইনি কারবার বন্ধ করল পুলিশ

যেখানে তৈরি হচ্ছে আধার কার্ড, সেটি একটি দোকান। বাইরে সাইন বোর্ডে বড় বড় করে সে কথা লেখাও আছে। রাখঢাক নেই। পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগাতেই এ ভাবে চলছে বেআইনি কারবার।

ছড়ানো নথিপত্র। নিজস্ব চিত্র

ছড়ানো নথিপত্র। নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:৪২
Share: Save:

খরচ বেশি নয়, ৩৫০ টাকা মাত্র। টাকা ফেললেই কয়েক দিনের মধ্যে হাতে চলে আসবে আধার কার্ড। কোথাও রাত জেগে লাইন দেওয়ার দরকার নেই। হাতে করে আবেদনপত্র পূরণের ঝুটঝামেলা নেই। টাকা দিলেই মুশকিল আসান।

যেখানে তৈরি হচ্ছে আধার কার্ড, সেটি একটি দোকান। বাইরে সাইন বোর্ডে বড় বড় করে সে কথা লেখাও আছে। রাখঢাক নেই। পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগাতেই এ ভাবে চলছে বেআইনি কারবার।

ক্যানিংয়ের ট্যাংরাখালি কলেজহাট এলাকায় ফিরোজ লস্কর নামে এক যুবক ‘মোবাইল ও স্টুডিও’ নামে দোকান খুলেছে এই কাজের জন্য। দোতলার ঘরে বেআইনি ভাবে দীর্ঘ দিন ধরে আধার কার্ড তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ।

বিষয়টি শুনে তাজ্জব প্রশাসনের কর্তারা। বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে বলেন, “আগে ব্লক অফিস-সহ বিভিন্ন জায়গায় আধার কার্ড তৈরি হলেও বর্তমানে তা ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমেই হচ্ছে। ওই ব্যক্তি কী ভাবে সেই কার্ড তৈরি করছেন, তা জানতে প্রশাসনিক স্তর থেকে ক্যানিং থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ বিডিওর নির্দেশে বুধবার ক্যানিং থানার পুলিশ তদন্তে যায়। কিন্তু পুলিশ আসার খবর পেয়েই দোকান বন্ধ করে পালিয়েছে অভিযুক্ত। থানার তরফে দোকানটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

বছরখানেক আগেও ব্লক স্তরে প্রশাসনের উদ্যোগে আধার কার্ড তৈরির কাজ চলছিল। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু ফ্রাঞ্চাইজিও দিয়েছিল আধার কার্ড তৈরির জন্য। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা নেওয়া-সহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রের নির্দেশেই সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত বেশ কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রের নির্দেশে কোথাও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে, কোথাও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আধার কার্ড তৈরি বা সংশোধন করার কাজ চলছে।

এতে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়লেও বাইরে কোথাও আধার কার্ড তৈরির অনুমতি দেয়নি কেন্দ্র।

এ দিকে, কেন্দ্রের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গত কয়েক মাস ধরে কার্ড-পিছু ৩৫০ টাকা নিয়ে আধার কার্ড তৈরি করা হচ্ছে কলেজহাট এলাকায়। পোস্ট অফিসে এ জন্য খরচ নেওয়া হয় ৫০ টাকা। ব্যাঙ্কে কিছুটা বেশি। কিন্তু এই দোকানে টাকা বেশি খরচ হলেও হয়রানি এড়াতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আধার কার্ড করাতে আসছেন। বিশেষ করে এনআরসি-সিএএ নিয়ে দেশ জুড়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানোয় ভিড় আরও বেড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেল।

বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ তখনও পুলিশ পৌঁছয়নি এলাকায়। ছোট ঘরটিতে গিয়ে দেখা গেল, ভিড় থিক থিক করছে। ল্যাপটপে কাজ করে চলেছে দুই যুবক। একজন দোকানের মালিক ফিরোজ। অন্যজন কর্মচারী। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিকে দেখে হকচকিয়ে যায় তারা। বন্ধ করে দেওয়া হয় ল্যাপটপ, প্রিন্টার। আধার কার্ড তৈরির কথা প্রথমে অস্বীকার করে ফিরোজরা। পরে ফিরোজ বলে, “দিনের পর দিন ক্যানিংয়ের ব্যাঙ্কে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের সুবিধার জন্য এখানে আধার কার্ড তৈরির কাজ করছি।’’ কিন্তু কাজটা তো বেআইনি। আর কথা বাড়াতে চায়নি ফিরোজ। তবে জানিয়েছে, অন্য এক ব্যক্তির কথায় এই কাজে নেমেছে। সেই ব্যক্তিটি কে, তা নিয়ে ফিরোজের মুখে কুলুপ। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকারই এক ব্যক্তি এই চক্রের মাথায়। তার আসল বাড়ি বর্ধমানে। ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে ভাড়া বাড়িতে থাকে। কলেজহাট ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় আধার কার্ড তৈরির কেন্দ্র চলে ওই ব্যক্তির তদারকিতেই। কিন্তু কী ভাবে সরকারি কিট, সফটওয়্যার জোগাড় করল চক্রটি? কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়া ওই সব কার্ডের বৈধতাই বা কী?

বিডিও জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে যাঁরা কার্ড পেয়েছেন, সে সম্পর্কে খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Aadhar Cards Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy