Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Barasat Incident

ভাইপোকে খুনের পর বার বার মিথ্যা কথা! পুলিশকে কী বলে বিভ্রান্ত করেছিলেন জেঠু আঞ্জিব?

জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, ভাইপো ফারদিনকে খুন করে কবর দিতে চেয়েছিলেন আঞ্জিব। কবর দেওয়ার বিষয়ে তিনি বিশেষ ভাবে দক্ষ। কারণ, গত ৩০ বছর ধরে এই কাজ করেন তিনি।

ভাইপোকে খুনে অভিযুক্ত আঞ্জিব।

ভাইপোকে খুনে অভিযুক্ত আঞ্জিব। —নিজস্ব চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বারাসত শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ১১:২৫
Share: Save:

ভাইপোকে খুনের পর পুলিশ এবং স্থানীয়দের নজর এড়াতে সব রকম চেষ্টা করে গিয়েছেন আঞ্জিব। তবু শেষরক্ষা হয়নি। বারাসতের কাজিপাড়ায় বালক খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হতে হয়েছে তাঁকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তকারীদের মনে হয়েছে যে, আঞ্জিব একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। তাই বার বার বয়ান বদলে, ছেলেধরার গুজব রটিয়ে পুলিশ এবং স্থানীয়দের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, ভাইপো ফারদিনকে খুন করে কবর দিতে চেয়েছিলেন আঞ্জিব। কবর দেওয়ার বিষয়ে তিনি বিশেষ ভাবে দক্ষ। কারণ, গত ৩০ বছর ধরে এই কাজ করেন তিনি। ভাইপোকে খুনের পরিকল্পনা করার পরই স্থানীয় মসজিদের পাশে থাকা কবরস্থানের চাবি নিজের কাছে নিয়ে রেখেছিলেন আঞ্জিব। এই বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশের মনে সন্দেহ জাগে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সুযোগ পেলে ভাইপোর দেহ কবরস্থ করে ফেলতেন আঞ্জিব। কিন্তু পুলিশি তৎপরতায় সেই সুযোগ তিনি পাননি। সেই সুযোগ পেলে রহস্যের কিনারা করতে পুলিশকে বেগ পেতে হত।

পুলিশ সূত্রে খবর, খুন করে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও তিনি আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলেন। সেই জন্য ভাইয়ের বাড়ি থেকেই একটি শাড়ি চুরি করে নিজের কাছে রাখেন। ঘটনার দিন ৬টা ৫০ থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে খুন হয়। ভাইপোর গালে চড় মেরে গলা টিপে খুন করে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেন পরিত্যক্ত বাড়িতে। কিন্তু তার পর একটু দিশেহারা হয়ে গেছিলেন তিনি। মসজিদে যান। নমাজ পড়েন। কিন্তু সে দিনের নমাজ পড়ার ঘটনা তাঁর মনে নেই। খুনের দিন বাড়িতে তিনি কী করছিলেন, এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশের কাছে আঞ্জিব বার বার বলেন যে, ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছেন। কিন্তু ওই খেলায় কী কী হয়েছে, পুলিশি জেরায় সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারেননি। পুলিশ সূত্রে খবর, বার বার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুনের তদন্তে ঢুকে তদন্তকারীদের আগাগোড়া বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছেন আঞ্জিব। নমাজ পড়ানোর সময় স্থানীয়দের ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছেন। তবে জেরার মুখে ভেঙে পড়েন আঞ্জিব। ভাইপোকে খুনের কথা স্বীকার করে নেন।

পৈতৃক সম্পত্তির বাঁটোয়ারা নিয়ে নিহত ফারদিনের বাবা গোলামের সঙ্গে দাদা আঞ্জিবের দীর্ঘ দিনের সমস্যা। গত ৭ জুন একটি তালগাছের ফল ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ভাইয়ে-ভাইয়ে বাদানুবাদ হয়েছিল। সেই সময় বালক ফারদিন নাকি আঞ্জিবের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। সেই থেকে ভাইপোর উপর রাগ আঞ্জিবের। এর পর থেকেই ভাইকে শিক্ষা দিতে ভাইপোকে খুনের পরিকল্পনা করেন আঞ্জিব। ৯ জুন, রবিবার ফারদিনকে বাড়ির পিছনে নিয়ে যান তিনি। গলা টিপে খুন করেন ভাইপোকে। ফারদিনের নিথর দেহ পাশের বাড়ির পরিত্যক্ত শৌচাগারে ঝুলিয়ে দেন। ঘটনার কয়েক দিন পরে ফারদিনের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ফারদিনের দেহ একটি কাপড় দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই কাপড়টি সংগ্রহ করে গত ৮ জুন থেকেই নিজের ব্যাগে রেখে দিয়েছিলেন আঞ্জিব। গোলামকে খুন করা কঠিন, কিন্তু বালক ফারদিন সেই তুলনায় অনেক সহজ নিশানা। এটাই ছিল পরিকল্পনা। ৮ জুন থেকেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন আঞ্জিব। ৯ জুন সেই সুযোগ তিনি পান। ১০ জুন থেকেই খুন ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন ভুয়ো তথ্য ছড়াতে শুরু করেন আঞ্জিব।’’

পুলিশ সুপারের দাবি, খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আঞ্জিব ব্যবহার করেছিলেন তাঁর পোশাক। মসজিদে আজান দেওয়ার কাজ করতেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত ১০ জুন, সোমবার আঞ্জিব নমাজ শেষে এলাকাবাসীকে সাবধান করে দেন যে, এলাকায় ছেলেধরা ঘুরছে। তাই বাইরের লোক দেখলেই মেরে তাড়িয়ে দিতে হবে। কিন্তু পুলিশি তদন্তে আঞ্জিবের সমস্ত জারিজুরি ফাঁস হয়ে যায়। পুলিশ প্রথম থেকেই আঞ্জিবকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিল। পুলিশের সন্দেহ বৃদ্ধি পায় আঞ্জিবের বার বার বয়ান বদলে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করে চলে ম্যারাথন জেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Mob Violence Barasat police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy