— ফাইল চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কাজিপাড়ার বাসিন্দা ১১ বছরের বালক ফারদিন নবিকে শ্বাসরোধ করে খুনের ঘটনায় তারই জেঠুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁকে জেরা করে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই ভাইপোকে খুন করেছেন জেঠু আঞ্জিব নবি। তবে, খুনের নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে বারাসত পুলিশ।
গত ৯ জুন কাজিপাড়ার বাসিন্দা ফারদিন নিখোঁজ হয়ে যায়। ১৩ জুন তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে যে, ঘটনার দিন রাত ৮টা নাগাদ ফারদিনকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। ফারদিনের বাবারা সাত ভাইবোন। নবি পরিবারের সকলে মিলেই ফারদিনকে খুঁজে থাকেন। কিন্তু তার খোঁজ মেলেনি। পুলিশ তদন্তে নেমে সকলের ‘মোবাইল টাওয়ার লোকেশন’ খতিয়ে দেখে। তাতে দেখা যায়, সকলেই বালকের সন্ধানে খোঁজাখুজি করলেও একজনের মোবাইলের লোকেশন ছিল ভিন্ন। তাতেই প্রাথমিক সন্দেহ দানা বাঁধে পুলিশের। সেই ব্যক্তিই ফারদিনের জেঠু আঞ্জিব। পুলিশ খোঁজখবর করে জানতে পারে, স্থানীয় মসজিদে কর্মরত আঞ্জিবের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে ভাইদের গোলমাল আছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে আসে যে, ৯ জুন সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে খুন করা হয়েছিল ফারদিনকে। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী আঞ্জিব সেই সময় ওই এলাকাতেই ছিলেন। তার পরেই আঞ্জিবকে তুলে নিয়ে গিয়ে জেরা করে পুলিশ। সূত্রের খবর, জেরায় ভেঙে পড়েন তিনি। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আঞ্জিব স্বীকার করেছেন যে, ভুল করে ওই কাজ করে ফেলেছেন তিনি। পুলিশ আঞ্জিবকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আরও জেরা করতে চায়। তাতেই আসল রহস্য উদ্ঘাটন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ধৃত আঞ্জিবকে জেরা করে পুলিশ সম্পত্তি নিয়ে পরিবারে বিবাদের কথা বিস্তারিত ভাবে জেনেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, স্থানীয় মসজিদের কাজ করার পাশাপাশি একটি ব্যাগের দোকান চালান আঞ্জিব। দু’য়ে মিলে আয় সামান্যই। পারিবারিক সূত্রে একটি তালগাছ পেয়েছিলেন আঞ্জিব। তাল বেচেও বছরে কিছু আয় হত তাঁর। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই তালগাছ নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন আঞ্জিব। ভাইয়ের সঙ্গে সেই বিবাদেরই ফলশ্রুতিতে কি আঞ্জিব ভাইপোকে খুন করলেন? প্রাথমিক ভাবে তেমনটাই মনে করছে পুলিশ। কিন্তু একা আঞ্জিবই যে খুনে জড়িত, তেমন না-ও হতে পারে। খুনের ঘটনায় আঞ্জিবের পাশাপাশি আরও কেউ যুক্ত কি না, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। যদিও ছোট্ট ফারদিনকে খুনের নেপথ্যে অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশের তরফ থেকে ‘অন্য কারণে’র বিষয়ে কিছুই খোলসা করা হয়নি। তবে, জানানো হয়েছে, নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তাঁরা আঞ্জিবকে আরও দীর্ঘ জেরা করতে চায়। তার পরেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন পুলিশের তদন্তকারীরা।
প্রসঙ্গত, কাজিপাড়ার বালকের খুনের পরেই বারাসত এলাকায় ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার এলাকায় ঘটে যায় একাধিক ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা। বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়িতে। গুজব ছড়ানো এবং গণপিটুনির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে বারাসত পুলিশ। গুজব ছড়িয়ে পড়া মোকাবিলায় পথে নেমেছেন বারাসতের পুলিশ সুপার। তিনি নিজে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেন। পাড়ায় পাড়ায় মাইকে প্রচার এবং হ্যান্ডবিলও বিলি করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy