Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Environment

মিড ডে মিলের হাত ধরে প্লাস্টিক জমছে সুন্দরবনে 

আমপানের পরে প্রচুর ত্রাণ ঢুকেছে এলাকায়। সেখানেও ব্যবহার হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যাগ।

এ ভাবেই পৌঁছনো হয় খাবার

এ ভাবেই পৌঁছনো হয় খাবার

নবেন্দু ঘোষ
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৪:০৮
Share: Save:

মিড ডে মিলের হাত ধরে বিপুল সংখ্যক প্লাস্টিকের ব্যাগ জমছে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায়। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমীরা।

এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই মাসে লকডাউনের জেরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে শুরু করে এসএসকে, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের চাল, ডাল ও আলু দেওয়া হচ্ছে। যা বেশির ভাগ স্কুল থেকে প্লাস্টিকের তিনটে ব্যাগে ভরে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে বিপুল সংখ্যক প্লাস্টিকের ব্যাগ জমা হচ্ছে সুন্দরবনের বুকে। এ ছাড়া, আমপানের পরে প্রচুর ত্রাণ ঢুকেছে এলাকায়। সেখানেও ব্যবহার হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যাগ।

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে সব মিলিয়ে ১৯,৭৭২ জন পড়ুয়া মিড-ডে মিল নেয়। অর্থাৎ, শুধু জুলাই মাসেই এই ব্লকের বিভিন্ন স্কুল থেকে পরিবেশে আনুমানিক মোট ৫৯,৩১৬টি প্লাস্টিকের ব্যাগ জমা হয়েছে। গত তিন মাসে যেহেতু শুধু চাল আর আলু দেওয়া হচ্ছিল, তাই দু’টো করে প্লাস্টিকের ব্যাগ দেওয়া হত। অর্থাৎ, চার মাসে শুধু এই ব্লকে জমেছে ১,৭৭,৯৪৮টি প্লাস্টিকের ব্যাগ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, হাসনাবাদ ব্লকে ৩০,৬৫০ জন পড়ুয়া মিড-ডে মিল নেয়। অর্থাৎ, এই ব্লকে আনুমানিক চার মাসে মোট ২,৭৫,৮৫০টি প্লাস্টিক ব্যাগ পরিবেশে জমা হয়েছে। একই রকম তথ্য উঠে এল, সন্দেশখালির দু’টি ব্লক থেকেই। এই দু’টি ব্লকে প্রায় ৬০ হাজার পড়ুয়া মিড-ডে মিল নেয়। অর্থাৎ, এই দুই ব্লকেও গত চার মাসে আনুমানিক ৫,৫১,৭০০টি প্লাস্টিকের ব্যাগ জমা হয়েছে। এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জের রানিবালা গার্লস স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা গার্গী চন্দ ও সন্দেশখালির একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশচন্দ্র পাল বলেন, “আমরা জানি, খুবই খারাপ হচ্ছে সুন্দরবনের জন্য। তবুও বাধ্য হয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করছি। কারণ, এই প্রান্তিক জায়গায় পরিবেশ-বান্ধব ব্যাগ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশিকা নেই। তাই এ ভাবেই দেওয়া হয়।”

অন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরাও জানান, পরিবেশ-বান্ধব ব্যাগের জন্য যে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন, তা তাঁরা পান না। অভিভাবকদের বাড়ি থেকে ব্যাগ আনতে বললে চাল, ডাল ও আলুর জন্য তিনটে করে ব্যাগ আনতে বলতে হয়। সেটাও গ্রামের দিকে সম্ভব নয়। এ ছাড়া, মেপে মেপে দিতে গেলে দীর্ঘ সময় লাগবে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ভিড় থাকবে। যা করোনা আবহের মধ্যে ঠিক নয়। তাই আগের থেকে প্যাকেট করা থাকলে দ্রুত দেওয়ার কাজ শেষ হয়।

তবে জানা গেল, হাতে গোনা কয়েকটি স্কুলে পরিবেশ-বান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে কয়েকবার। হিঙ্গলগঞ্জে কনকনগর এসডি ইন্সটিটিউশনের তরফ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী দিনে পড়ুয়াদের দয়েই যাতে পরিবেশ-বান্ধব ব্যাগ তৈরি ককরা যায়।

এ বিষয়ে ইছামতী বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এমনিতেই প্রতিদিন মানুষ দেদার প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করছেন। তার উপরে সরকারি ভাবেও যদি এত প্লাস্টিক পরিবেশে জমে, তবে সুন্দরবন এলাকায় প্লাস্টিকের পাহাড় হবে। যার ফল আমাদের ভুগতে হবে। সরকারের উচিত, অবিলম্বে পরিবেশ-বান্ধব ব্যাগের ব‍্যবস্থা করা।” তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রয়োজনে পুরনো পোশাক ফেলে না দিয়ে তা দিয়ে ব্যাগ তৈরি করতে পারেন মানুষ। শিক্ষকদেরও এই নিয়ে পড়ুয়াদের উৎসাহ বাড়াতে হবে।’’ সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, আগামী মাস থেকে চাল, ডাল ও আলু বিশেষ কাগজের প্যাকেটে

করে দিতে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Plastic Sunderbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy