Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Corona

মাস্ক ঝুলছে থুতনিতে, শিকেয় করোনা-বিধি

বেপরোয়া: মাস্ক ছাড়াই চলছে বেচাকেনা। হাবড়া স্টেশনের সামনে।

বেপরোয়া: মাস্ক ছাড়াই চলছে বেচাকেনা। হাবড়া স্টেশনের সামনে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বারাসত শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৬:৪৯
Share: Save:

দৈনিক করোনা সংক্রমণ ছ’শোর নীচে নেমেছে উত্তর ২৪ পরগনায়। কমছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও। সংক্রমণের সাম্প্রতিক তথ্য-পরিসংখ্যান আশা জাগালেও করোনা নিয়ে উদ্বেগের কারণ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। রাস্তায় বেরোলে করোনা-বিধি লঙ্ঘনের ছবি দেখা যাচ্ছে প্রায় সর্বত্রই।

সোমবার সকাল ১০টা। ভিড়ে ঠাসা বনগঁার যশোর রোডের নিউ মার্কেট এলাকা। থুতনির নীচে মাস্ক নামিয়ে সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছিলেন এক ব্যক্তি। বার দু’য়েক কেশেও নিলেন। তারপরে একগাল হেসে বললেন, ‘‘নেশাটা তো আর মাস্ক পরে করা যায় না!’’

করোনা-বিধি ওড়ানোর এমন টুকরো ছবি ধরা পড়েছে বনগাঁ থেকে বারাসত— সর্বত্রই। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এত মৃত্যু দেখেও যদি মানুষ সচেতন না হন, তবে আর বিধিনিষেধ জারি করে কী লাভ!’’

সোমবার সড়ক পথে যশোর রোড ধরে বনগাঁ থেকে বারাসত পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথ ঘুরে দেখা গেল, কিছু মানুষের মধ্যে সচেতনতার বালাই নেই। মাস্ক পরা বা দূরত্ব-বিধি মানা— শিকেয় উঠেছে সব কিছুই। বহু ভ্যান-টোটোর চালক-সওয়ারির মাস্ক নেই। পথের ধারে থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে আড্ডায় মশগুল বহু যুবক। কোথাও দেখা গেল, ট্রাকের ভিতরে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে গল্পে মেতেছেন কয়েকজন।

বনগাঁ শহরে টোটোয় বসেছিলেন এক মহিলা। সঙ্গে এক শিশু। কারও মুখে মাস্ক নেই। কথা প্রসঙ্গে মহিলা বললেন, ‘‘ছোটদের মাস্ক পাওয়া যায় না। তা ছাড়া শিশুদের তো করোনা তেমন হচ্ছে না। আমি কিন্তু মাস্ক পরেই বেরোই। আজ ভুলে গিয়েছি সঙ্গে নিতে।’’ কথা বলার সময়ে পাশ দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গেল এক মোটরবাইক। তাতে সওয়ার তিনজনের কারও মুখেই মাস্ক ছিল না।

রাজ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে চিকিৎসক মহলে। সতর্ক থাকার কথা বলছে প্রশাসন। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না অনেক জায়গায়। জেলায় করোনা-সংক্রমণ কমলেও তাতে আত্মসন্তুষ্টির জায়গা নেই বলে মনে করছেন বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘আরও কিছু দিন মানুষকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। না হলে সংক্রমণ বাড়তে সময় লাগবে না।’’ জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘সংক্রমণ কমছে। হাসপাতালের শয্যাও ফাঁকা হচ্ছে। এটা ভাল। তবে মানুষকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু জেলায় কমলেও সংখ্যার বিচারে তা এখনও রাজ্যে সর্বাধিক। রবিবার জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭৬১। পয়লা জুন জেলায় অ্যাক্টিভ রোগী ছিলেন ১৬,৩৬৯ জন। ২১ মে পর্যন্ত জেলায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চার হাজারের বেশি। ২২ মে তা চার হাজারের নীচে নামে। তারপর থেকে দৈনিক সংক্রমণ নিম্নমুখী।

বনগাঁ, বসিরহাট, হাবড়া, অশোকনগর ও বারাসত পুর-এলাকায় মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা জেলার অন্য অংশের তুলনায় বেশি বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ। তবে গ্রামীণ এলাকায় মাস্ক পরার প্রবণতা কম বলে মনে করছেন তাঁরা। হাটেবাজারে শারীরিক দূরত্ব বিধি নিয়ে সচেতনতা এখনও কম গ্রামাঞ্চলে।

সরকার অনুমতি না দিলেও বনগাঁ ও হাবড়ায় টোটো-অটো চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে। জিজ্ঞাসা করলে চালকেরা বলছেন, ‘‘পেটের দায়ে বেরোতে বাধ্য হচ্ছি। ঘরে বসে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। তবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী তোলা হচ্ছে।’’ এই সব দেখে আতঙ্কিত সচেতন মানুষ দাবি তুলছেন, মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোনো লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করুক। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, টিকা নেওয়া লোকজনের একাংশের মধ্যেও বেপরোয়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাঁদের অনেকে বাইরে বেরোচ্ছেন মাস্ক না পরে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন বহু প্রবীণও।

বিএমওএইচ (বনগাঁ) মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘কিছু মানুষ ভ্যাকসিন নিয়ে ভাবছেন, তাঁরা করোনা থেকে মুক্ত। তাঁদের মনে রাখা উচিত, টিকা নিলেও তাতে করোনা-সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে শেষ হয় না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy