Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
kakdwip

দোষীরা ধরা পড়বে, আশায় কাকদ্বীপের গ্রামের মানুষ

রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে ওই ঘটনায়। বাবা-মা তৃণমূলে যোগ দিতে না চাওয়ায় তাঁদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন ছেলে দীপঙ্কর।

এই বাড়িতেই থাকতেন দাস দম্পতি। নিজস্ব চিত্র

এই বাড়িতেই থাকতেন দাস দম্পতি। নিজস্ব চিত্র

সমরেশ মণ্ডল
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪১
Share: Save:

গত পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য রাজনীতিতে শিরোনামে এসেছিল কাকদ্বীপ বিধানসভার বুধাখালি পঞ্চায়েতের কাছাড়িবাড়ি গ্রাম। ওই গ্রামে ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে সিপিএম কর্মী দেবু দাস ও তাঁর স্ত্রী উষারানির অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়।

রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে ওই ঘটনায়। বাবা-মা তৃণমূলে যোগ দিতে না চাওয়ায় তাঁদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন ছেলে দীপঙ্কর। অভিযোগ মানতে চাননি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

পাঁচ বছর আগের ওই ঘটনায় ‘সুবিচার’ না পেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন দীপঙ্কর। দম্পত্তির অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট আইপিএস দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে সিট গঠন করেছে। ফের তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেবে সিট।

বুধবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পাঁচ বছর আগের পোড়া বাড়ির সামনে বসে আছেন কিছু মানুষ। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের দাবি, দুর্ঘটনা নয়, খুন করা হয়েছিল দাস দম্পতিকে। দোষীরা বহাল তবিয়তে এলাকায় ঘুরলেও কিছু নির্দোষ মানুষকে সে সময়ে ধরেছিল পুলিশ।

ঘটনার সময়ে দীপঙ্কর ক্যাটারিংয়ের কাজ করতেন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে কলকাতায় এক জনের বাড়িতে থাকতেন। সেখান থেকে আইনে স্নাতক হয়েছেন। হাই কোর্টে ওকালতি করেন। থাকেন কলকাতায়। বাবা-মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ‘সুবিচার’ চেয়ে মামলা করেছেন।

বুধখালি গ্রাম ছাড়িয়ে একেবারে শেষ প্রান্তে, নির্জন জায়গায় বাড়ি ছিল দীপঙ্করদের। পাশেই মুড়িগঙ্গা নদী। ওই নদীতে মিন ধরতেন দেবু। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর কিছু দিন আগে মিন ধরা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বচসায় জড়ান দেবু। মিন ধরতে হলে তৃণমূল করতে হবে বলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে গ্রামের কিছু মানুষের দাবি। তার কিছু দিন পরেই দাস দম্পতির দগ্ধ দেহ মেলে।

ঘটনার রাতে দীপঙ্কর ক্যাটারিংয়ের কাজ শেষ করে রাতের দিকে বাড়ি ফিরছিলেন। দূর থেকে দেখেন, আগুন জ্বলছে। খানিক দূর এগোলে বুঝতে পারেন, তাঁর বাড়িতেই আগুন লেগেছে। উদভ্রান্তের মতো বাড়ির ভিতর ঢুকতে গিয়ে বাবার পোড়া দেহে হোঁচট খান। দেহ তখনও পুড়ছিল। কিছুটা দূরে পড়ে ছিল মায়ের পোড়া দেহ। দীপঙ্কর সে সময়ে থানায় অভিযোগ করেছিলেন, বাবা-মাকে হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। একই অভিযোগ ছিল প্রতিবেশীদেরও। খুনের অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে দায়ী করেন দীপঙ্কর। যদিও পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে পরে বলেছিল, শর্টসার্কিট থেকে দুর্ঘটনা। গ্রামের লোকজন অবশ্য সে সময়ে জানিয়েছিলেন, অগ্নিকাণ্ড যখন ঘটে, সে সময়ে এলাকায় লোডশেডিং চলছিল।

খুনের অভিযোগে এখনও অনড় দীপঙ্কর। আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বুধবার বিকেলে কাকদ্বীপ বাজার এলাকায় সিপিএম নেতৃত্ব ‘প্রকৃত দোষী’দের শাস্তির দাবিতে মিছিল করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, কাকদ্বীপ থানার পুলিশ এফআইআর-এ নাম থাকা ব্যক্তিদের না ধরে এলাকার কয়েক জন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল। তাঁদের কয়েক মাস জেল খাটতে হয়।

এলাকার বাসিন্দা, বছর সত্তরের হরেন হালদার বলেন, ‘‘আমার মৃত্যুর আগে যেন প্রকৃত দোষীদের কঠোর সাজা হয়। একুটুই প্রার্থনা করি।’’ দেবু দাসের ভাই শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘এ বার দাদার খুনিদের শাস্তি হবে। দাদা মারা যাওয়ার পরেও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের হুমকি দিত। দীপঙ্কর আইনজীবী হওয়ায় পরে সে সব বন্ধ হয়েছে।’’ খুনের অভিযোগে তিন মাস জেল খেটেছেন চন্দন পতি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল আমাদের। এ বার সিট সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেবে বলে আশা করছি।’’

কাকদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘রাজ্যের উচ্চ আদালত নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আইন আইনের পথে চলবে। সিট তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবে। পরিবারটির সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক যোগ ছিল না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

kakdwip CPIM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy