কান্না: শঙ্করের(ইনসেটে) পরিবার। হাবড়ায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি
বাবা-ছেলে দু’জনেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রবিবার সন্ধ্যায় বারাসত জেলা হাসপাতালে মৃত্যু হল বাবার।
শঙ্কর সরকার (৫৫) নামে ওই ব্যক্তি শনিবার সকালে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে চিকিৎসকেরা বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। সেখানেই রবিবার তাঁর মৃত্যু হয়। অ্যালাইজা পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গির উল্লেখ থাকলেও মৃত্যুর শংসাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ‘সেরিব্রো ভাস্কুলার অ্যাক্সিডেন্ট’-র ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। শংসাপত্রেও তাই লেখা হয়েছে।
শঙ্করের বাড়ি হাবড়া-১ ব্লকের কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খারো নিমতলা এলাকায়। পেশায় রাজমিস্ত্রি শঙ্কর কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। বাবাকে নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া বিজয় গিয়েছিল বারাসত হাসপাতালে। হাসপাতালে গিয়ে বিজয় নিজেও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। দু’জনকেই তখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির ঘণ্টা খানেক পর মৃত্যু হয় শঙ্করের।
মৃতের পরিবারের দাবি, শঙ্কর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ছিলেন। অ্যালাইজা পরীক্ষায় তা ধরাও পড়েছিল। যদিও বারাসত জেলা হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃত্যু শংসাপত্রে শঙ্করের মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে, ‘সেরিব্রো ভাস্কুলার অ্যাক্সিডেন্ট।’
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় রাজমিস্ত্রি শঙ্করের চার ছেলে মেয়ে। বাবার মৃত্যুর পর ছোট ছেলে বিজয়কে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে ‘বন্ড’ দিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছেন সোমবার। বাবার শেষকৃত্যের জন্য তাঁকে হাসপাতাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিজয়ের আক্ষেপ, ‘‘চেষ্টা করেও বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। বাবার কাজ শেষ করে ফের হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হব।’’
এ দিকে শঙ্করের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের মধ্যে। আতঙ্কও ছড়িয়েছে। গ্রামবাসীর বক্তব্য, ‘‘ইতিমধ্যেই ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। অথচ প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের তরফে ডেঙ্গি প্রতিরোধে জোরদার পদক্ষেপ করা হয়নি।’’
গ্রামবাসীরা জানান, ২০১৭ সালে হাবড়া ১ ব্লক এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গির মারাত্মক প্রকোপ ছড়িয়েছিল। অনেকেই মারা গিয়েছিলেন। এলাকাবাসীর দাবি, কেন আগে ভাগে জ্বর-ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রশাসন পদক্ষেপ করবেন না।
শঙ্করের মেয়ে এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় এখনও মশা মারতে চুন, ব্লিচিং ছড়ানো হয়নি। মশা মারার তেলও স্প্রে করা হয়নি। মশা মারতে পদক্ষেপ করা হলে বাবাকে হয়তো হারাতে হত না। ভাইকে নিয়েও চিন্তায় রয়েছি।’’
এলাকায় চারিদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। জল জমে আছে। আগাছা ঝোপ জঙ্গলে ভরে আছে চারিদিক। বাসিন্দারা জানালেন, মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। মশারি ছাড়া ঘরে ঘুমানো যাচ্ছে না। নিয়মিত মশা মারা হচ্ছে না। সম্প্রতি কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একটি মানবাধিকার সংগঠনের তরফে জঙ্গল সাফাই, তেল চুন ছড়ানোর কাজ করা হয়েছিল। অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে সে ভাবে ডেঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা হয়নি। যদিও পঞ্চায়েত প্রধান রত্না বিশ্বাসের দাবি, এলাকায় সাফাই অভিযান জোর কদমে চলছে। মশা মারতে তেল স্প্রে করা, ধোঁয়া দেওয়া, চুন-ব্লিচিং ছড়ানোর কাজ চলছে। মানুষকে ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে ব্লকে ১২ জন জ্বর ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছিলেন। বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাস থেকে ব্লকে ডেঙ্গি প্রতিরোধে কর্মসূচি চলছে। নিয়মিত বন জঙ্গল সাফাই ও মশা মারার কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত ব্লকে ২২ জন মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।’’
সাধারণ মানুষের বক্তব্য, ‘‘লোকসভার ভোটের জন্য কয়েক মাস ডেঙ্গি প্রতিরোধের কোনও কাজই হয়নি। তারপরও কাজে গতি আসেনি। হাবড়া পুরসভা এলাকায় ইতিমধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’’
শহরের বাসিন্দা আইনজীবী অভিজিৎ চক্রবর্তী কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, ‘‘এখন প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। আগে থেকে পদক্ষেপ নিলে হয়ত আমরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হতাম না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy