রাস্তায় বাস কম। সমস্যায় যাত্রীরা। ঘটকপুকুরে।
ক’দিন আগেই বানতলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চর্মনগরীতে নতুন কর্মসংস্থানের জোয়ারের কথা ঘোষণা করেছিলেন। বলেছিলেন বহুটাকা লগ্নির কথাও। সাধ করে তিনি ওই অঞ্চলের নাম দিয়েছিলেন ‘কর্মদিগন্ত’। কিন্তু একুশে জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সেই সাধের চর্মনগরীতেই ভোগান্তির মুখে পড়লেন সাধারণ মানুষ। অবশ্য বসিরহাট-বনগাঁয় ছবিটা এরকম নয়।
তৃণমূলের তরফে এ বারে চেষ্টা করা হয়েছিল একুশের সমাবেশের জন্য যাতে মানুষ বিপাকে না পড়েন সে বিষয়ে সচেতন থাকতে। কিন্তু সর্বত্র শেষ রক্ষা হল না। বেশকিছু এলাকাতেই যান-বাহনের অভাবে মানুষ দুর্ভোগে পড়লেন। রবিবার ধর্মতলায় আয়োজিত সমাবেশে লোক কম হলেও দুই ২৪ পরগনা জুড়ে ভোগান্তির ছবিটা থাকল দু’রকম।
ভাঙড় এলাকায় অধিকাংশ রুট থেকেই বাস, ট্রেকার-সহ যাত্রিবাহী গাড়ি তুলে নেওয়া হয়েছিল। তুলে নেওয়া হয়েছিল সরকারি বাসও বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। যাঁরা কাজে বেরিয়েছিলেন তাঁরা হয়রানির শিকার হলেন। ভাঙড় বিধানসভা এলাকা-সহ শহর ও শহরতলি থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ চর্মনগরীতে কাজে আসেন। এ দিন চর্মনগরীতে পৌঁছতে অনেককেই বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, ঘটকপুকুর-বাবুঘাট রুটের ২১৩ নম্বর, ঘটকপুকুর-সোনারপুর রুটের এসডি-৩ নম্বর, ধামাখালি-আলিপুর রুটের এসডি-২৪ নম্বর এবং বাবুরহাট-ব্যারাকপুর রুট-সহ বিভিন্ন রুটের বাস এ দিন তুলে নেওয়া হয়। ঘটকপুকুর-টালিগঞ্জ, রাজাবাজার-ঘটকপুকুর-সহ বিভিন্ন সরকারি রুটের অধিকাংশ বাসও তুলে নেওয়া হয়।
আনোয়ারা বিবি নামে ভাঙড়ের ফুলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জানান, বাচ্চাকে নিয়ে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। হাসপাতালে এক্স রে করানোর তারিখ ছিল। কোনও বাস মেলেনি। আদৌ যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে হতাশ ও উদ্বিগ্ন তিনি।
২১৩ রুটে প্রায় ৫৫টি বাস চলে। সমাবেশ উপলক্ষে অধিকাংশ বাস তুলে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে ওই বাস ইউনিয়নের সম্পাদক ইয়াদ আলি মোল্লা বলেন, ‘‘নেতাদের অনুরোধে বাস দিতে হয়েছে। ৪-৫টা বাস দিয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ ২৭টি এসডি-৩ বাস ইউনিয়নের সভাপতি ময়না মোল্লা বলেন, ‘‘নেতাদের জোরাজুরিতে অধিকাংশ বাসই দিতে হয়েছে।’’
ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার বিধায়ক তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি সওকাত মোল্লা বলেন, ‘‘যাত্রীদের অসুবিধার কথা ভেবে সমাবেশ উপলক্ষে কোনও বাস নেওয়া হয়নি।’’ ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাস ও ছোট গাড়ি মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো গাড়িতে এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে আমার ব্লক এলাকা থেকে প্রায় দশ হাজার কর্মী-সমর্থক সমাবেশে গিয়েছেন।’’
বসিরহাটের ছবিটা অবশ্য আলাদা। গতবারের চেয়ে এ বারে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া লোকের সংখ্যা সেখানে অনেকটাই কম। স্থানীয় পরিবহণ ব্যবস্থাও থাকল স্বাভাবিকই।
কেন লোক কমল?
সামসেরনগর থেকে আসা ভূদেব মণ্ডল, শুকদেব মোল্লারা বলেন, ‘‘এখানে তৃণমূল বড় ব্যবধানে জিতলেও বিজেপির ভোট বেড়েছে।’’ তাঁদের কথায় সায় দিয়ে পরিমল মণ্ডল, খালেক গাজিরা বলেন, ‘‘ভিড় কমার আর একটা কারণ কাটমানি। অন্য বার যেখানে চাঁদা তুলে গাড়ি ভাড়া এবং খাওয়ার খরচ করা হয় এ বারে চাঁদা তুলতে গেলে পাছে কাটমানি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে, সেজন্য অনেকেই গাড়ি ভাড়া বা অন্য কাজের দায়িত্ব নেননি।’’ কলকাতায় লোক নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচারও তেমন হয়নি বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। অন্য বারে যেখানে বসিরহাট মহকুমা থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে হাজারের উপর গাড়ি যায় এ বারে সংখ্যাটা সেখানে টেনেটুনে কয়েকশো। তৃণমূল নেতাদের কথায়, ‘‘মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে জন্য কলকাতা থেকে সরকারি বাস এসেছিল। স্থানীয় পরিবহণে কোনও চাপ পড়েনি।’’
বনগাঁ মহকুমার ছবিটাও প্রায় এক রকম। একুশে জুলাইয়ের সভায় এ বার কর্মী-সমর্থকেরা গিয়েছেন তুলনায় কম। ট্রেনে ভিড় ছিল তুলনায় কম। অন্য বছরগুলিতে যানবাহন না পেয়ে মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। এ বার তেমনটা হয়নি বলে দাবি এলাকাবাসীর। বাস-অটো-টোটো সবই দেখা গিয়েছে রাস্তায়। স্থানীয় রুটের এক বাস মালিক জানান, অন্য বার জোর করে রুটের বাস তুলে নেওয়া হত। এ বার তেমন হয়নি। এত দিন বনগাঁর ২১ জুলাইয়ের পরিচিত ছবি ছিল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গোপালনগর থেকে বনগাঁ স্টেশনে আসছেন। সেখান থেকে ট্রেন ধরে শিয়ালদহ। সম্প্রতি তিনি বিজেপিতে যোগদান করেছেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, লোকসভা ভোটে বনগাঁ কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছে বলেই ভিড় কম হয়েছে। যদিও এ বার বনগাঁ মহকুমা থেকে আগের বারের মতোই কর্মী-সমর্থকেরা গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলের বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান গোবিন্দ দাস। তিনি বলেন, ‘‘এ বার টাকার অভাবে যানবাহন ভাড়া কম করা হয়েছিল। কর্মী-সমর্থকেরা ট্রেনে বা নিজস্ব গাড়িতেই গিয়েছেন।’’
কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার এলাকায় প্রায় সমস্ত বেসরকারি বাস তুলে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে তাঁরা জানান সরকারি বাস চলেছে। দিনটি রবিবার হওয়ায় লোকজন রাস্তায় বেশি বের হননি। ফলে বাস-ট্রেন প্রায় ফাঁকাই থেকেছে। এ দিন সকালে ডায়মন্ড হারবার বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী অজয় দাসের কথায়, ‘‘মানুষ বুঝে গিয়েছেন যানবাহনের সমস্যা হবে। অনেকে তাই ঘর থেকেই বেরননি।
ক্যানিংয়ে ছবিটা একটু আলাদা। সকালের দিকে ক্যানিং থেকে শিয়ালদহগামী ট্রেনে তৃণমূল কর্মীদের ভিড় থাকায় বেশ সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা। বিকেলের দিকে ডাউন ট্রেনগুলিতেও বাড়তি ভিড়ের ফলে একই ভাবে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। এ দিন বারুইপুর-গদখালি, বারুইপুর ঝড়খালি, ক্যানিং-বারুইপুর সহ বেশ কয়েকটি রুটে বাসের সংখ্যাও যথেষ্ট কম থাকায় সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy