Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Bhangar

বিনা বাধায় মাটি কেটে চলছে পাচার, দেখেও দেখে না পুলিশ

গ্রামবাসীরা জানান, খাল সংস্কারের সময়ে সেচ দফতর খালের পাড়ে পলি তুলে রাখে। মাটি মাফিয়ারা জেসিবি মেশিন দিয়ে পাড় সমেত সেই মাটি কেটে নিয়ে যায়।

বেআইনি: হাড়োয়া খাল সংলগ্ন এলাকায় এ ভাবেই চলছে মাটি কাটা।

বেআইনি: হাড়োয়া খাল সংলগ্ন এলাকায় এ ভাবেই চলছে মাটি কাটা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২১ ০৭:০৭
Share: Save:

নাকা তল্লাশির জন্য রাস্তার মাঝে দেওয়া আছে পুলিশের গার্ডরেল। তার সামনে দিয়েই বেরিয়ে যায় মাটি বোঝাই একের পর এক ডাম্পার। কখনও সেই মাটি পৌঁছে যায় নিউ টাউন, ভাঙড়, রাজারহাট বা অন্য কোনও এলাকার নির্মাণস্থলে, কখনও আবার কোনও ইটভাটায়। এই জায়গাগুলি হাড়োয়া বিধানসভা এবং বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। অভিযোগ, সব দেখেও পুলিশ-প্রশাসন নিশ্চুপ থাকে।

এ সব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমছে বারাসত দু’নম্বর ব্লকের বাসিন্দাদের মনে। যদিও প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলতে চাননি। অভিযোগ, হাড়োয়া খাল, মহিষগোদি, ফলতি, দক্ষিণআঁটি, কামদুনি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে রাতের অন্ধকারে পাচার হয়ে যাচ্ছে টন টন মাটি। এলাকাবাসীর দাবি, মাটি মাফিয়াদের সিন্ডিকেট খালের পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় বর্ষায় গ্রামের ভিতরে জল ঢুকে যায়, ভেড়ি উপচে বেরিয়ে যায় মাছ। স্থানীয় সালবেড়িয়া, বেলিয়াঘাটা, শাসনের মতো এলাকায় দিনের পর দিন ধরে চলছে ভেড়ি ও চাষের জমির মাটি কাটা।

গ্রামবাসীরা জানান, খাল সংস্কারের সময়ে সেচ দফতর খালের পাড়ে পলি তুলে রাখে। মাটি মাফিয়ারা জেসিবি মেশিন দিয়ে পাড় সমেত সেই মাটি কেটে নিয়ে যায়। কখনও আবার ভেড়ি গভীর করার নামে কয়েক গুণ বেশি মাটি কাটা হয়। সেই মাটি বিক্রি হয় ইটভাটা কিংবা কোনও নির্মাণস্থলে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মাটি কাটা এবং বিক্রির এই কারবারে লেনদেন হয় কয়েক লক্ষ টাকা। স্থানীয়েরাই জানাচ্ছেন, পাড় সমেত মাটি কেটে নেওয়ায় অনেক জায়গায় খাল চওড়া হয়ে গিয়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে মাটি কাটায় দুর্বল হয়ে গিয়েছে খালের বাঁধের দেওয়াল। এর ফলে বর্ষায় সেই দেওয়াল ভেঙে ভেড়িতে ঢুকে পড়ে জল। মাছ ভেসে যায়।

স্থানীয়েরা জানান, বেলিয়াঘাটা পঞ্চায়েত এলাকার দক্ষিণ ও উত্তর ফলতিতে রেললাইনের কাজের জন্য মাটির প্রয়োজন ছিল। সেই কাজ বর্তমানে শেষ হয়ে গেলেও থেমে নেই মাটি কাটা। ভেড়ি তো বটেই, মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষিজমি থেকেও। কখনও সেই মাটি ফেলে ভেড়ি ভরাট করা হচ্ছে। তার উপরে হচ্ছে প্রোমোটিং।

এলাকার খবর, মাটি কাটা হয় বিভিন্ন ভাবে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভেড়ি লিজ় নেওয়ার জন্য নিলাম হয়। তার আগে-পরে ভেড়ির গভীরতা বাড়ানোর জন্য মাটি কাটার প্রয়োজন পড়ে। অধিকাংশ ভেড়িই খাস জমির। অভিযোগ, মাটি মাফিয়ারা অনেক বেশি মাটি কেটে নিয়ে যায়। তা বিক্রি করা হয় ইটভাটার মালিকদের কাছে।

ভোটের আগে এই সব অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য ভাস্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘তৃণমূলের মদতপুষ্ট মাফিয়ারা চাষের জমির মাটি কেটে ভেড়ি ভরাট করছে। কখনও ভেড়ির মাটি কেটে ইটভাটায় বেচে দিচ্ছে। পুলিশ এ সবে মদত দিচ্ছে।’’

অন্য দিকে ওই সব এলাকায় সংগঠন বাড়াতে চাওয়া ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের বারাসত ২ নম্বর ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহম্মদ আবু বক্কর বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘সরকারি মাটি পাচারের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা। ওঁদের বিরুদ্ধে কথা বললে মানুষ খুন হয়ে যাবেন। আমরা মাটি পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাদের দলের লোকজনকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে।’’

যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে বেলিয়াঘাটা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সভাপতি মেহেদি হাসানের দাবি, ‘‘বিরোধীরা মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছেন। মাটির গাড়ি ১৫ দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই চত্বরে ছ’টি সেতুর কাজ চলছে। তার জন্য পূর্ত দফতর-সহ অন্য সরকারি দফতরের অনুমতি রয়েছে। গত দু’বছরে মাটির কোনও কাজ এখানে হয়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bhangar Soil Mafias
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy