Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Gun

আর বন্দুক দেখে ভয় পান না দুর্গারা

হাড়োয়া থানার গোপালপুরের মুন্সিঘেরি এলাকায় বেশির ভাগ আদিবাসী মানুষের বাস।

কেড়ে নেওয়া বন্দুক। ফাইল চিত্র

কেড়ে নেওয়া বন্দুক। ফাইল চিত্র

নির্মল বসু
হাড়োয়া শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০৩:০৮
Share: Save:

গুলি-বোমার শব্দ শুনে বড় হয়েছেন দুর্গা। হাড়োয়ার গোপালপুরের মুন্সিঘেরির অপর্ণা, মানসী, ভবানী— সকলেই দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব দেখে অভ্যস্ত। উত্তর ২৪ পরগনার এই সব ভেড়ি এলাকায় খুন-জখম, মারপিট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা আকছার ঘটে। কী ভাবে দুষ্কৃতীরা গুলি-বোমা ছুড়ে একটার পর একটা মেছোভেড়ির দখল নিয়ে আলাঘরে আগুন দিয়ে মাছ লুট করে, তা নিজেদের চোখে ঢের দেখেছেন গ্রামের মেয়ে-বৌরা। তাই এখন আর বন্দুক দেখেও বুক কাঁপে না। মঙ্গলবার রাত থেকে জমিজমা নিয়ে এলাকা ফের উত্তপ্ত হয়। তাতে রাজনীতির রংও লাগে। বুধবার অপর্ণা, দুর্গারাই গ্রামে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বন্দুক কেড়ে নেন।

হাড়োয়া থানার গোপালপুরের মুন্সিঘেরি এলাকায় বেশির ভাগ আদিবাসী মানুষের বাস। একটা সময়ে এলাকার দখল ছিল বামেদের হাতে। পরে শক্তিশালী হয় তৃণমূল। বর্তমানে আবার গ্রামের বড় অংশই বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি সমর্থক ভবসিন্ধু দাস এবং তৃণমূল সমর্থক জগবন্ধু দাসের মধ্যে গন্ডগোল চলছিল জমিজমা নিয়ে। বিজেপি সমর্থকেরা ভবসিন্ধুর দোকানে বসে বৈঠক করেন। তা ভাল চোখে দেখতেন না জগবন্ধু। গন্ডগোলের রাতে দু’পক্ষের মারামারির পরে দুষ্কৃতীরা ভবসিন্ধুর মুদিখানা এবং পোলট্রি পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। আক্রান্ত হতে পারেন বলে মনে করে মহিলারা সঙ্ঘবদ্ধ হন।

বুধবার সকালে একপক্ষের হয়ে দুষ্কৃতীরা বন্দুক হাতে হামলার জন্য গ্রামে ঢুকলে দা, বঁটি, ঝাঁটা নিয়ে রুখে দাঁড়ান দুর্গা, অপর্ণা, মানসী, ভবানী-সহ শতাধিক মহিলা। একনলা বন্দুক দিয়ে মহিলাদের রোখা যাবে না বুঝতে পারায় থতমত খেয়ে যায় জনা দশেক দুষ্কৃতী। তাদের থেকে দু’টো বন্দুক কেড়ে নেন মহিলারা।

এগিয়ে আসেন আরও বহু মানুষ। দুষ্কৃতীরা পালায়। বন্দুক দু’টি পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ দুষ্কৃতীদের খোঁজ করছে।

দুর্গা সর্দার, অপর্ণা সর্দার, মানসী সর্দাররা বলেন, ‘‘দিনের পর দিন গোলমাল দেখে দেখে আমরা বিরক্ত। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। গ্রামে শান্তি নেই। আমরা ধরে নিয়েছি, এ বার রুখে না দাঁড়ালে ওরা আরও পেয়ে বসবে। তাই দল বেঁধে দুষ্কৃতীদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ি। ওরা পালিয়ে যা।’’ দুর্গা বলেন, ‘‘ভেড়ি এলাকায় এমন বোমা, বন্দুক ঘরে ঘরে মেলে। তাই বন্দুকে আমাদের বিশেষ ভয় নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Gun Bomb Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE