অপরিচ্ছন্ন: এমন অবস্থা এলাকার অনেক জায়গায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত দুই মহিলার মৃত্যুর ঘটনা ঘটল হাবড়ার পৃথিবা পঞ্চায়েতের আনোয়ারবেড়িয়া এলাকায়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, ডেঙ্গি প্রতিরোধে পঞ্চায়েত উদাসীন। তারই জেরে এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, আর কত মৃত্যুর পরে প্রশাসনের টনক নড়বে!
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বারাসত জেলা হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে রাজিয়া বিবির (৩৭)। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার তিনি জ্বরে পড়েন। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধপত্র খান। সোমবার সকালে তাঁকে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেন। পরিবারের সদস্যেরা বেসরকারি ল্যাবরেটরি থেকে রক্ত পরীক্ষা করান। বৃহস্পতিবার সকালে রাজিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
রাজিয়ার স্বামী মতিয়ার মল্লিক বলেন, ‘‘রক্ত পরীক্ষায় স্ত্রীর ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল।’’ রাজিয়ার মৃত্যু শংসাপত্রে অবশ্য মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গির উল্লেখ নেই। লেখা হয়েছে, ‘সেপটিসেমিয়া উইথ শক।’ কারণ হিসাবে বারাসত জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে করা রক্ত পরীক্ষায় রাজিয়ার ডেঙ্গি আক্রান্তের প্রমাণ মেলেনি।
বুধবার রাতে আনোয়ারবেড়িয়ার বাসিন্দা আজমিরা খাতুনেরও মৃত্যু হয়েছিল। গ্রামবাসীর দাবি, এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়ালেও পঞ্চায়েত থেকে এখন আর মশা মারার কাজ করা হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা মইবুল মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় রাস্তার পাশে নিকাশি নালা না থাকায় বৃষ্টির জল রাস্তায় জমে থাকে। বাড়ির জল বের করার উপায় নেই। ওই জমা জলে ডেঙ্গি মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে। মাসখানেক আগে শেষবার পঞ্চায়েতের তরফে মশা মারার তেল, ব্লিচিং, চুন ছড়ানো হয়েছিল।’’ মাঝখানে অবশ্য পঞ্চায়েতের তরফে নিয়মিত মশা মারার কাজ হচ্ছিল বলেও গ্রামবাসী জানিয়েছেন। তবে তারপরে ভাটা পড়েছে কাজে। পঞ্চায়েত সদস্য মাফুরা বিবির দাবি, ‘‘সপ্তাহে একদিন করে এখনও এলাকায় মশা মারার কাজ চলছে।" হাবড়া ১ বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘মশা মারার কাজ চলছে। তবে মানুষ সচেতন না হলে ডেঙ্গি প্রতিরোধ পুরোপুরি সম্ভব নয়।’’
হাবড়া পুরসভা ও ব্লক এলাকায় এ বার জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। পাশাপাশি অশোকনগর ও গোবরডাঙা থানা এলাকাতেও ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই সব এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। হাবড়া এলাকায় এখন জ্বর-ডেঙ্গি অনেকটাই কমে এসেছে। বিশেষ করে হাবড়া পুরসভা এলাকায়। তবে গ্রামীণ এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত ৩২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তারমধ্যে হাবড়ার বাসিন্দা রয়েছেন ৬-৭ জন। দুর্গাপুজোর আগে হাসপাতালে প্রায় ১০০ জন ডেঙ্গি-আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকছিলেন।
হাসপাতাল সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘ডেঙ্গি-আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসা মানুষের সংখ্যা এখন অনেক কমে গিয়েছে। তবে শীত জাঁকিয়ে না পরা পর্যন্ত ডেঙ্গি সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। এখন বৃষ্টিতে জল জমছে। মানুষকে লক্ষ্য রাখতে হবে, জমা জলে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে কিনা। বেশির ভাগ মানুষ অবশ্য তা করছেন না।’’ হাবড়া পুরসভার তরফে জ্বর-ডেঙ্গি মোকাবিলায় এলাকায় নিয়মিত মশা মারা অভিযান চলছে। নিকাশি নালা, জমা জল সাফাই করা হচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গল সাফাই হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে চলছে সরকারি-বেসরকারি ভাবে প্রচার কর্মসূচি। ডেঙ্গির লার্ভা খুঁজে বের করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা নিয়মিত এলাকায় এসে জ্বর-ডেঙ্গির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। ফলে পুর এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে গ্রামীণ এলাকায় ওই তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
গ্রামীণ এলাকায় এখনও কেন এখনও জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না? প্রশাসনের কর্তারা এবং চিকিৎসকেরা মনে করছেন, এর পিছনে মূল কারণ, বহু মানুষের সচেতনতার অভাব। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, চলতি বছরে জ্বর-ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে। মানুষ সচেতন হলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও কমানো যেত। যদিও গ্রামবাসীদের দাবি, ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুজোর আগের তৎপরতা এখন নেই বলেই জ্বর-ডেঙ্গি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
চিকিৎসকেরা মনে করছেন, মৃত্যুর অন্যতম কারণ, দেরি করে রোগীদের হাসপাতালে আসা। শঙ্করলাল বলেন, ‘‘জ্বর হওয়ার পরে যদি রোগীর মাথা ঘোরা, বমি, পেট ব্যথা, ভুলে যাওয়া, খেতে না পারা, শ্বাসকষ্ট— এ ধরনের উপসর্গ দেখা যায়, তা হলে দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy