হয়রান: এমন দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই। নিজস্ব চিত্র।
ঢাকার বাসিন্দা শিমূল এ দেশে এসেছিলেন বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন পরিবারের কয়েকজন। বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসক দেখিয়ে দেশে ফিরবেন বলে বুধবার সকালে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে আসেন। নথিপত্র পরীক্ষা এবং সিকিউরিটি চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। যশোর রোডে দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরে অভিবাসন দফতরে ঢোকার সুযোগ মেলে। লাইনে যখন দাঁড়িয়ে, তখন তোড়ে বৃষ্টি নামে। শিমূল বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে সকলে আধভেজা হয়ে কাছের একটি দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলাম।’’
শিমূলের মতো দুর্ভোগে পড়েন দু’দেশের মধ্যে পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে যাতায়াত করা অনেকেই। অভিযোগ, তাঁদের নানা ভাবে হয়রান হতে হচ্ছে। নথিপত্র পরীক্ষা ও সিকিউরিটি চেকিংয়ের জন্য ঝড়-জল-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বসার জায়গা, পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি নামলে ভিজতে হয়। রোদে-গরমে ঘামতে হয়। অনেকে অসুস্থ বোধ করেন।
দিন কয়েক আগে ঢাকার বাসিন্দা সইফুল ইসলাম সোহাগ পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে এ দেশে এসেছিলেন। সকাল ৬টার সময়ে বন্দরে ঢুকেছিলেন। নথিপত্র পরীক্ষা এবং সিকিউরিটি চেকিং করিয়ে যখন পেট্রাপোল ছাড়েন, তখন সকাল সাড়ে ১১টা।
বুধবার সকালে পেট্রাপোল বন্দরে গিয়ে দেখা গেল, এ দেশ থেকে যাঁরা বাংলাদেশে যাবেন, তাঁরা নথিপত্র পরীক্ষা ও সিকিউরিটি চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন যশোর রোডের উপরে। কারণ, দফতরের ভিতরে বসার জায়গা নেই। অনেকে দেখা গেল, রাস্তায় বসে পড়েছেন। হাতের ভারী ব্যাগ পাশে নামানো। হঠাৎ শুরু হল বৃষ্টি। ছোটাছুটি করে সকলে আশপাশের দোকান, মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিলেন।
বন্দরে মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের কর্মী বাপ্পা ঘোষ বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর আগে যাত্রীরা কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন। এখন সময় কিছুটা কম লাগছে। বৃষ্টি হলে যাত্রীরা আমাদের কেন্দ্রে এসেও আশ্রয় নিয়ে থাকেন।’’ যাঁরা বাংলাদেশের দিক থেকে আসেন, তাঁরা নো-ম্যানস ল্যান্ডে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন। যাঁরা এ দেশ থেকে বাংলাদেশের দিক যান, তাঁরা যশোর রোডে লাইন দেন।
যাত্রীদের এই সব সমস্যা মেটাতে দিন কয়েক আগে বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ চিঠি দিয়েছেন ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পেট্রাপোলের ম্যানেজার কমলেশ সাইনিকে। চিঠিতে পুরপ্রধান জানিয়েছেন, পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করা যাত্রীরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে পেট্রাপোল বন্দরে। কখনও কখনও দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যশোর রোডে যাত্রীদের লাইন পড়ে যাচ্ছে। সকলেই দাঁড়াচ্ছেন নথিপত্র পরীক্ষা করাতে এবং সিকিউরিটি চেকিং করাতে। যশোর রোডে দীর্ঘ লাইন লাইন পড়ে যাওয়ায় যানজট হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা লাইনে রোগী ও বয়স্ক লোকজনও থাকছেন। তাঁদের পক্ষে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়।
পুরপ্রধান আরও জানিয়েছেন, এই ভাবে যাত্রীরা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে বেআইনি কাজকর্ম হচ্ছে। এমনকী, সোনা পাচারও হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। গোপাল বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে যে সব যাত্রী আসছেন, পেট্রাপোলে তাঁদের জন্য সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যাত্রীদের জন্য ছাউনি, শৌচালয়, পরিস্রুত পানীয় জল এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
পেট্রাপোল এলাকাটি স্থানীয় ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘অভিবাসন দফতরের পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও যাত্রীরা সঠিক পরিষেবা পাচ্ছেন না। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ মিটতে ৪-৫ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এখানে প্রায় ৪০০ জন কুলি আছেন। যাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কারণ, তাঁদের যাত্রীদের ব্যাগ বহন করতে দিচ্ছেন না বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ব্যাগ বহন করতে পারলে যাত্রীদেরও সুবিধা হত।’’
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘যাত্রীদের অসুবিধার কথা আমরা দু’দেশের হাই কমিশনকে জানিয়েছি। শুনেছি, অভিবাসন দফতরে কর্মী কম থাকায় অসুবিধা হচ্ছে।’’
বন্দরে যাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি এবং ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইট কাউন্সিলের সদস্য উৎপল রায়ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন। বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকেও জানিয়েছেন। ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পেট্রাপোলের ম্যানেজার কমলেশ বলেন, ‘‘আমরাও চাই যাত্রীরা ভাল পরিষেবা পান। পুরপ্রধানের চিঠিতে উল্লেখ করা বিষয়গুলি নিয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy